অনলাইন
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহে সতর্কতা জারি
মানবজমিন ডিজিটাল
(২১ ঘন্টা আগে) ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ। মানুষজনকে বাইরে বেরোতে বারণ করেছে ইতালি সরকার। পর্তুগাল এবং স্পেনে জুন মাসে তাপমাত্রা ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ফরাসি স্কুলগুলো তাপপ্রবাহের কারণে বন্ধ রয়েছে। কাতালোনিয়ার তারাগোনা প্রদেশে গাড়িতে থাকা অবস্থায় হিটস্ট্রোকের কারণে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে কমপক্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সিসিলির পালেরমোতে, সোমবার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অজ্ঞান হয়ে ৫৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে জানা গেছে। ইতালির কিছু অংশে হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে ভর্তির সংখ্যা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ১৫-২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশিরভাগ রোগী হলেন বয়স্ক ব্যক্তি, যারা ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন।
দাবানলের কারণে তুরস্কে হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। ফ্রান্সের কিছু অংশে স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ শিক্ষা ইউনিয়নগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে শ্রেণীকক্ষগুলো শিশু এবং শিক্ষকদের জন্য তাপপ্রবাহের কারণে বিপজ্জনক হতে পারে।
এদিকে, ইউরোপের কিছু জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। প্যারিসের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০.৪ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে আইফেল টাওয়ারের শীর্ষটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ব্রাসেলসে, বিশাল স্টেইনলেস স্টিলের বলের জন্য বিখ্যাত অ্যাটোমিয়াম স্মৃতিস্তম্ভটি তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিকে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়
ইতালিতে, লম্বার্ডি এবং এমিলিয়া-রোমাগনা, দুটি শিল্প কেন্দ্র, ঘোষণা করেছে যে তারা দুপুর ১২.৩০ থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। সোমবার এমিলিয়া-রোমাগনার রাজধানী বোলোগনার কাছে একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করার সময় ৪৭ বছর বয়সী নির্মাণ শ্রমিক ব্রাহিম আইত এল হাজ্জামের মৃত্যুর পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পরামর্শ মেনে চলছে। ভেনেটোর ভিসেনজার কাছে একটি নির্মাণস্থলে দুই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। একজন কোমায় আছেন বলে জানা গেছে।
ফরাসি জাতীয় রেল অপারেটর এসএনসিএফ জানিয়েছে, সোমবারের ভয়াবহ ঝড়ের পর ফ্রান্স ও ইতালির মধ্যে ট্রেন ভ্রমণ কমপক্ষে কয়েক দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ইতালির আওস্তা উপত্যকার কোগনে শহরটি গত বছরের জুনে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল, ভূমিধসের কারণে সেখানকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্প্যানিশ রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থা, Aemet, একটি সোশ্যাল মিডিয়া আপডেটে বলেছে যে, ২০২৫ এর জুনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। গড় তাপমাত্রা ২৩.৬ সেলসিয়াস ছিল, যা ২০১৭ সালের আগের উষ্ণতম জুনের চেয়ে ০.৮ সেলসিয়াস বেশি।
১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাসিক গড় তাপমাত্রা গড়ের তুলনায় ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। স্পেনের হুয়েলভা প্রদেশের আন্দালুসিয়ায় জুন মাসে সর্বোচ্চ ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। পর্তুগালে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইভোরা জেলার মোরা শহরে তাপমাত্রা ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা দেশের মধ্যে জুন মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট ফর দ্য সি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার জানিয়েছে।
প্যারিসে, যেখানে তাপপ্রবাহের সর্বোচ্চ সতর্কতা ছিল, সেখানে অভিভাবকদের মঙ্গলবার এবং বুধবার তাদের সন্তানদের বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে । ট্রয়েস এবং মেলুনসহ আরও কিছু শহর তাদের সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে।
জার্মানিতে বেটিনা নামে পরিচিত এই উষ্ণ আবহাওয়ার প্রভাবে বুধবারের মধ্যে প্রায় পুরো দেশটি তার কবলে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে এবং শুধুমাত্র উপকূল এবং আলপাইন শৃঙ্গগুলোই তীব্র তাপমাত্রার প্রভাব থেকে রেহাই পাবে।
শিল্প গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে, স্কুল, বয়স্কদের যত্ন কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলো তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তারা বলেছে, আবহাওয়ার হুমকি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাথে সাথে এই জরুরি সমস্যার সমাধান করা উচিত। ইউরোপের অন্যান্য শহরগুলোতেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জারাগোজা (৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস), রোম (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস), মাদ্রিদ (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস), অ্যাথেন্স (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস), ব্রাসেলস (৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস), ফ্রাঙ্কফুর্ট (৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস), তিরানা (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং লন্ডন (৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
তুরস্কের বনমন্ত্রী ইব্রাহিম ইয়ুমাকলি বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশজুড়ে ২৬৩টি দাবানল দেখা গেছে। ফ্রান্স এবং ইতালির কিছু অংশে বিশেষ করে সার্ডিনিয়া এবং সিসিলি দ্বীপপুঞ্জে, দমকলকর্মীরা দাবানল মোকাবেলায় কাজ করছে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান