ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করতে পারছে না ইরান

টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর ইসরাইল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলকে বিশ্বাস করছে না তেহরান। যে কোনও মুহূর্তে এই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে বলে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। 

ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম এ খবর জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আবদোলরহিম মুসাভির বলেছেন, আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, তবে আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রমণকারীকে জবাব দিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, ‘শত্রুপক্ষ যুদ্ধবিরতিসহ তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে কিনা তা নিয়ে আমাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতির ছয় দিন পরও যদি আবার আক্রমণ করা হয় তবে আমরা  শক্তির সাথে জবাব দিতে প্রস্তুত।’

১৩ জুন ইরানে ইসরাইলের বোমা হামলায় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীদের হত্যার মধ্যে দিয়ে ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন যে, তিনি আইডিএফকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ইসরাইলের আকাশে নজরদারি, ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন রোধ করা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা। অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে ইসরাইলি বাহিনী ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইট এবং দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। 

ইরানের নেতারা বারবার ইসরাইলকে নির্মূল করার  এবং ইসরাইলে আক্রমণকারীদের তহবিল প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইরান ৫০০ টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১,০০০ ড্রোন ইসরাইলে নিক্ষেপ করে। যার ফলে ২৮ জন নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো  অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি হাসপাতাল, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত স্থানগুলোতে আঘাত হানে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। 

যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের অভিযানে যোগ দিয়েছিল, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ব্যবহৃত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তাহলে ট্রাম্প আবারো  হামলার হুমকি দিয়েছেন। ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল, যা বেসামরিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয় এবং অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের চেয়ে সামান্যই কম । 

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪,৯০০ জন আহত হন। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ঘোষণা করার পর  উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। ইসরাইল যুক্তি দিয়েছে যে তারা  তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে  উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে দিয়েছে, যদিও ক্ষতির সঠিক পরিমাণ  মূল্যায়ন করা যায়নি।

সূত্র : টাইমস অফ ইসরাইল