বাংলারজমিন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবারটার্গেট প্রবাসী, ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য কেউ। খোঁজখবর নিয়ে মোবাইল, ইমু, মেসেঞ্জারে বিছানো হয় প্রেম-ভালোবাসার জাল। এরপরই কাছে টেনে এনে করা হয় সর্বনাশ। অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো এই অপরাধীরা। সর্ব ঘটনার শিকার দুই সৌদি প্রবাসী। এই ঘটনাসূত্রে ৬ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এই অপরাধ তৎপরতা এবং চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযানের বিস্তারিত সাংবাদিকদের অবহিত করেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মো. শাহিন। ১৫ই আগস্ট সরাইলের অরূয়াইল গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. শাকিল মিয়া (২৫) এবং পরদিন একই গ্রামের আরেক সৌদি প্রবাসী সোরহান মিয়াকে অপহরণ করা হয়। তাদেরকে ফোনে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অরূয়াইল এবং কালীকচ্ছ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় জেলা শহরে।
এর আধাঘণ্টা পর সোরহানকেও ছেড়ে দেয়। এদিকে ঘটনা দু’টির অভিযোগ পেয়ে সরাইল থানা পুলিশ অভিযানে নামে। অপরাধীদের ধরতে জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। ওইদিন দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর উপজেলার ঘাটুরার গৌতমপাড়া এলাকার মুন্সিবাড়ি থেকে ঘাটুরার রেনু মিয়ার ছেলে আবদুল আহাদ (৩৪), জেলা শহরের মধ্যপাড়া নয়াপুকুর পাড়ের রবি বাবুর্চির ছেলে মো. সাজন (৩১), ঘাটুরার আহাদ মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম (৩০), মজলিশপুরের কবির মিয়ার মেয়ে লিপি আক্তার (১৮), শহরের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেরপুর আবাসিক এলাকা থেকে সাংবাদিক নামধারী ভাদুঘরের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো. মশিউর রহমান (৪৩) এবং নাসিরনগর চাতলপাড় আটপাড়ের খায়রুল ইসলামের স্ত্রী মক্ষীরাণী জহুরা বেগম (২২) কে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, শহরের শেরপুরের একটি বাসায় প্রবাসীদের আটকে মারধর করে উলঙ্গ করা হয়। এরপর নারী নিয়ে অবস্থান করার ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করা হয়।
সেসময় সাংবাদিক পরিচয়ে একজন তা অনলাইনে ছেড়ে দেবে বলে ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করার প্রক্রিয়া করে। গ্রেপ্তারকৃত নামধারী সাংবাদিক মশিউরের মোবাইলে এমন অসংখ্য ভিডিও ও স্থির ছবি রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেপ্তারকৃত আবদুল আহাদের কাছ থেকে শাকিলের ৫০ হাজার টাকা দামের স্যামসাং গ্ল্যাক্সি এ-৭২ প্রো এবং মুক্তিপণের ৪ হাজার ৩৫০ টাকা, জহুরার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মুক্তিপণের টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত বিকাশ নম্বরের ৯টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সাজন মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, মাদক, হত্যার উদ্দেশ্যে মারামারি এবং চাঁদাবাজির ৭টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনাটি ছাড়াও শহরের কান্দিপাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী জমির হোসেন (৫০) কে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। গত ১০ই আগস্ট তাকে অপহরণ করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এরপর বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠায় পরিবার। জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কীর্তিমান চাকমা, সরাইল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অফিসার ইনচার্জ সাহেদ উদ্দিন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর শাহ ও সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম হোসেন।