নিষ্পাপ মেয়েটির খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টা জনগণ সহ্য করবে না

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন,  আমার নিজ উপজেলায় মেধাবী শিক্ষার্থী নাসিফা জান্নাত আঞ্জুম হত্যার মর্মান্তিক সংবাদ  ঢাকা থেকে  শুনেছি । এ খবর শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আজ আমি দুটি কারণে মেয়েটির বাড়িতে উপস্থিত হয়েছি। প্রথমতো, মেয়েটির কবর জিয়ারত করা  এবং তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। আমি মেয়েটির বাবার সঙ্গে আলাপ করেছি। তার কথা শুনে আমার বিবেকে আঘাত লেগেছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে  আমরা কোন সমাজে বাস করছি।

এই নিষ্পাপ মেয়েটিকে হত্যা করে তার পরিবারের ওপর যে জুলুম করা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

এসময় বাড়ির আঙ্গিনায় এলাকার শত শত মানুষ স্লোগান দেয়-  ‘আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে’। প্রতিবাদী জনতাকে সান্ত্বনা দিয়ে এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা এ নির্মম হত্যার বিচার চাই। আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্য করছি এ মামলাটিকে প্রভাবিত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল জালিমের পক্ষ নিয়েছে।  যদি তাই হয়, আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের নিয়ে আমরা জালেমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।  তিনি  আরো বলেন, ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাবে তাদের বলেছি, এই খুনিকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এদিক ওদিক করলে তা সহ্য করা হবে না। তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, পুলিশের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে থাকে। মামলার আইও  যাকে নিয়োগ করবে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন কোনো নয়ছয় না করেন। এ মজলুম পরিবারকে সহযোগীতা করলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল  অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহেদ আলী, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামীর আলী,ছাত্রশিবির জেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন , কুলাউড়া উপজেলা সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী,সহকারী সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম খান ও আলাউদ্দিন,ছাত্রশিবির উপজেলা সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক,গাংগুল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউসুফ আলী, সাবেক উপজেলা আমির আব্দুল হামিদ খান, উপজেলা শূরা  সদস্য  রাজানুর রহিম ইফতেখার, মৌলভীবাজার জেলা কর্মপরিষদ সদস্য আজিজ আহমদ কিবরিয়া,ব্রাহ্মণ বাজার ইউনিয়ন সভাপতি হাসান আলী প্রমুখ।

শুক্রবার দুপুরে  ডা: শফিকুর রহমান আঞ্জুমের কবর জিয়ারত ও  মোনাজাত করেন। আঞ্জুমের বাবা খালিক মিয়া, মা, ভাই ও শিশু  বোনটিকে  শান্তনা দেন। এসময় পরিবারের সদস্যদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন প্রাইভেট পড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়রে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুমকে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে  শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠে দুই সন্তানের জনক জুনেলের বিরুদ্ধে। এর একদিন পর বাড়ির পাশের কবরস্থানের পাশ থেকে এলাকাবাসী লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনিকে গ্রেপ্তার করে।  জুনেল পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করলেও কোর্টে সে খুনের কথা স্বীকার করেনি। এসময় পুলিশ ৭দিনের রিমান্ড চাইলেও আদালত রিমান্ড না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।  তবে ওইদিন কোর্টে কোনও আইনজীবী জুনেলের পক্ষে দাঁড়াননি।

চাঞ্চল্যকর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে  জুনেলের ফাঁসির দাবিতে জেলা ও উপজেলায়  বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে বিক্ষুব্দ ছাত্র-জনতা।

এদিকে ডা: শফিকুর রহমান আঞ্জুমের বাড়িতে যাওয়ার পূর্বে সকালে সদ্য প্রয়াত মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের মৌলভীবাজার শহরস্থ শাহ মোস্তফা সড়কের দেওয়ান মঞ্জিলের বাসাতে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন।