বাংলারজমিন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত প্রতিবেদনের উপর বেরোবি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবারআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত প্রতিবেদনের উপর অনাস্থা এনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরে গণশুনানির আল্টিমেটাম দিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ, আশিকুর রহমান আশিক ও রহমত আলী জানান- আবু সাঈদ হত্যা মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পাওয়ার পর তারা কমপক্ষে দশবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। এর একটিতেও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডটি পুলিশি হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেনি। তারা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাঁচাতে খুব সুক্ষভাবে পুলিশের সম্পৃক্ততা এড়িয়ে গেছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অল্প বিস্তর দায়ী তাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। যারা আবু সাঈদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে, গুলি চালিয়েছে তাদের দায় মুক্তির প্রবণতা দেখা গেছে তাদের মাঝে।
তারা বলেন, আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ জনের সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেছে। তারা সুক্ষভাবে বেরোবি’র প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একজনের নাম বললেও পুলিশের কথা উল্লেখ করে নাই। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত পুলিশি হত্যাকাণ্ড। অথচ তারা পুলিশি হত্যাকাণ্ডকে প্রশাসনিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
তারা আরও বলেন, গত ২৩শে জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি বিশেষ টিম রংপুরে এসে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গণশুনানি করার কথা ছিল। তারা আগের দিন বিশেষ কারণ উল্লেখ করে রংপুরে আসেনি এবং তাড়াহুড়ো করে আজ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তাই তাদের তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর আমরা অনাস্থা প্রকাশ করছি। আবু সাঈদের সহযোদ্ধা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর অনাস্থা এনেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আমাদের দেয়া তথ্যের সঙ্গে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের অনেক অমিল রয়েছে। বরাবর তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। মামলাসংশ্লিষ্টদের ভুল পরিচয় উল্লেখ করেছেন। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানাতে চাই, আপনারা যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছেন তা দ্রুত কাটিয়ে তুলে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। সেই সঙ্গে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডকে পুলিশি হত্যাকাণ্ড হিসেবে জাতির সামনে স্বীকার করবেন। এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে দিনব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন। উপাচার্যসহ ভবনের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এতে বক্তব্য রাখেন, বেরোবি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা কনক, খাদিজা আক্তার, নুরন্নবী আফরিন মীম, শাহরিয়ার সোহাগ, আশিকুর রহমান, রহমত আলীসহ অন্যরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে। আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হচ্ছে। এ মামলায় রাঘব বোয়াল, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের বাঁচিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাবেক ভিসি, ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেপ্তার না করে সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও ইন্ধনদাতা হিসেবে চালান দেয়া হয়। অথচ গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন।