ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

টাকার জন্য সন্তানকে নির্যাতন, পালিয়ে আশ্রয় নিলো খালার বাড়িতে

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার

নিজের নাবালক সন্তানের ওপর টাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে এক পাষণ্ড বাবা। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ওই কিশোর পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপায় খালার বাড়িতে। ঘটনাটি গত ২১শে জুন ঘটেছে। তবে বিষয়টি বৃহস্পতিবার জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গলাচিপা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কিশোরের খালা নাজমা বেগম।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী কিশোরের নাম সামিউল ইসলাম (১২)। শিশুটির মা সালমা বেগম ২০২৪ সাল থেকে সৌদি আরবে থাকেন। ২০১৮ সালে সামিউলের বাবা মো. এরশাদ ও মা সালমা বেগমের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর সামিউল মায়ের কাছেই বড় হচ্ছিলো। তবে কিছুদিন পর সুকৌশলে বাবা এরশাদ তাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। অভিযোগ উঠেছে, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার বাসিন্দা মো. এরশাদ তার ছেলে সামিউলের ওপর নিয়মিতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। নির্যাতনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসী মা’র কাছ থেকে মাসিক ভরণপোষণের টাকা আদায় করা। নির্যাতনে সহযোগিতা করতেন এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার দুই ভাই রেজাউল ও রিপন।
এ সময় সালমা বেগম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই সামিউলের ওপর চলতো নির্যাতন। তাই ছেলের সুখের জন্য গর্ভধারিণী মা প্রতিমাসে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতো। কিন্তু হঠাৎ এরশাদ সালমার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সামিউলকে ধরে মারধর করে বাবা। লেখাপড়া বন্ধ ও খাবার থেকে বঞ্চিত করা হয়, এমনকি চিকিৎসাও করানো হয়নি। ভয়ভীতি দেখিয়ে সালমা বেগমের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে এরশাদ। সামিউল জানায়, ‘আম্মুর কাছে আসতে চাইলে আমাকে ঘরে আটকে রাখা হতো। মা টাকা না দিলে বাবা মারধর করতো, খুব কষ্ট হতো।’
সামিউলের মা ও খালা জানান, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ২১শে জুন সামিউল রংপুরের বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে খালার বাড়ি গলাচিপার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে মোবাইল ও টাকা হারিয়ে ফেলে। ছিনতাইকারীরা তাকে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। খোঁজাখুঁজি করে ঘটনার একদিন পরে খালা তাকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে পুরো বিষয়টিকে আড়াল করতে সামিউলের বাবা উল্টো নাজমার বিরুদ্ধে মিঠাপুকুর থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, খালা জোর করে সামিউলকে নিয়ে গেছেন, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন সামিউলের মা ও খালা। তারা আইনের আশ্রয় চেয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
শিশুটির খালা বলেন, সামিউল নিজের ইচ্ছায় আমার কাছে এসেছে। ছেলেটি খুব কষ্টে ছিল। ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করতো, বাবা ও সৎমার নির্যাতনের কথা বলতো। আমরা ওর নিরাপত্তা চাই।
শিশুর মা বলেন- আমি বিদেশে থাকি, কিন্তু ছেলের জন্য প্রতিমাসে টাকা পাঠাতাম। এখন পাঁচ লাখ টাকা চাইছে আমি দিতে পারিনি তাই আমার ছেলেকে মারধর করেছে। এরশাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সামিউল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমি আর বাবার কাছে যাবো না। তারা আমাকে টাকা না পেলে মারধর করে, আমাকে খেতে দেয় না। তবে তার বাবার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status