খেলা
মাঠে মিরাজ, তবুও তার ‘শূন্যতা’
ইশতিয়াক পারভেজ
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
মাঠে আসা বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ভক্ত নীরবে বসে আছেন। গল টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে তাদের চোখে বিষণ্নতা। বাংলাদেশের সাংবাদিক পরিচয় পেতেই জোর করে হাসার চেষ্টা করলেন। বললেন, ইস্! আজ মিরাজ থাকলে হয়তো এই দিনটাও বাংলাদেশের হতো। জ্বরের জন্য স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ খেলতে পারছেন না গল টেস্টে। ৬ দিন পর তিনি সুস্থ হয়ে গতকাল দলের সঙ্গে মাঠে এসেছেন। তাতে কী! তার শূন্যতা গল টেস্টে বেশ ভালোই টের পেলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং ও বোলিং- দুই বিভাগেই এই অলরাউন্ডারকে মিস করেছে বাংলাদেশ দল। সারাদিনে একাদশে দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম ইসলাম নিয়েছেন মাত্র একটি করে উইকেট। তৃতীয় স্পিনারের অভাবে মুমিনুল হক সৌরভের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই অনিয়মিত স্পিনারেরও শিকার এক উইকেট। সারাদিনে দুই পেসার বল করে শুধু হাসান মাহমুদ সফল। তার শিকার একটি। তৃতীয় দিন শেষে হাতে ছয় উইকেট রেখে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩৬৮ রান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৪৯৫ রানের জবাবে তারা পিছিয়ে মাত্র ১২৭ রানে! আপরাজিত থাকা কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭ ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দিন শুরু করবেন ১৭ রানে। বলার অপেক্ষা রাখে না যেভাবে ব্যাট করছে লঙ্কানরা তাতে আজ চতুর্থ দিন টাইগারদের প্রথম ইনিংস টপকে লিড নেয়ার দারুণ সুযোগ! গল টেস্টে শুরুতেই ব্যাটিংয়ে মিরাজের অভাবটা স্পষ্ট হয়। শান্ত, মুশফিকদের সেঞ্চুরির পরও লেজের দিকে দলের হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। আর বোলিংয়ে গলের স্পিন উইকেটে তিনি থাকলে বাড়তি স্পিনার নিয়েও ভাবতে হতো না দলকে। দলের বোলিং দুর্বলতায় লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা খেলেছেন ১৮৭ রানের দারুণ ইনিংস।
তবে জানা গেছে কলম্বো টেস্টের জন্য ফিট আছেন মিরাজ। দেশ থেকেই তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। তবে আশার বিষয় তার জ্বরে করোনা, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রভাব নেই। সাধারণ জ্বর ছিল। কিন্তু তাতে বেশ ভালো ভাবেই কাবু হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। বাধ্য হয়েই গল টেস্টের একাদশে রাখা হয়নি তাকে। এমনকি করানো হয়নি অনুশীলনও। তবে এখন শঙ্কা কেটেছে। গতকাল দলের সঙ্গে মিরাজ মাঠেও এসেছেন। তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিসিবি’র প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘মিরাজের যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে তাতে কোনো বড় ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়েনি। সব নেগেটিভ এসেছে। বলা যায় বেশ স্বস্তির বিষয়। তবে জ্বর তাকে বেশ দুর্বল করে দিয়েছিল। এখন যতটা জানি তার আর কোনো সমস্যা নেই।’ মিরাজ মাঠে বসে বসেই দেখেছেন আর হয়তো করেছেন আক্ষেপও। গল টেস্টে বাংলাদেশ দল ব্যাট হাতে যেভাবে শুরু করেছিল তার শেষ হয়েছে ঠিক বিপরীত। ৫ উইকেটে ৪৫৮ রান তোলার পর পথ হারায় বাংলাদেশ তৃতীয় দিন বিকালে স্কোর বোর্ডে যখন ৪৮৪ রান তখন আরও চার উইকেট হারায় শান্তর দল। অধিনায়ক শান্ত ও মুশফিক পুড়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে আউট হয়ে। লিটন দাসের একই দশা, নিজের ভুলে ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি করেছেন হাতছাড়া। জাকির আলী অনিক সঙ্গ পাননি কোনো স্পেশালিষ্ট ব্যাটারের। এখানেও মিরাজের অভাব স্পষ্ট। আগের দিন দলের সহকারি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বোলারদের শতর্ক করেছিলেন। জানিয়েছিলেন গলের উইকেট এখনো ব্যাটারদের জন্য স্বর্গ। তাই বল করতে হবে পরিশ্রম করে। টাইগারদের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে লঙ্কান ব্যাটাররা লড়াই জমিয়ে তোলে। পাত্তাই দেয়নি টাইগার দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদকে। পাথুম নিশাঙ্কার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে লঙ্কানদের রান ৪ উইকেটে ৩৬৮। ২৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৫৬ বলে ১৮৭ রানের ইনিংস খেলেন নিসাঙ্কা। সপ্তদশ টেস্টে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১২৭ রান। শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে নেমে এগিয়ে যায় সাবলীল গতিতে। উদ্বোধনী জুটি ৪৭ রানে থামে লাহিরু উদারার বিদায়ে। অভিষেকে দারুণ শুরু করা ব্যাটসম্যান ৬ চারে ২৯ রান করে ফিরতি ক্যাচ দেন তাইজুল ইসলামের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে। সেই
ধাক্কাকে পাত্তা না দিয়ে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় দারুণভাবে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন নিশাঙ্কা ও দিনেশ চান্ডিমাল। তবে দু’জনের ৫৪ রানের জুটি ভেঙে দলে স্বস্তি ফেরান নাঈম হাসান। তার বলে আউট হন ফিফটি হাঁকানো চান্ডিমাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ও ফিফটি এখন সমান ৫টি করে। এরপর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে বাংলাদেশের কাছ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ পেয়ে মাঠে নামা ম্যাথিউস এরপর সঙ্গ দেন নিশাঙ্কাকে। গড়ে ওঠে আরেকটি জুটি। তবে এই জুটি ৮৯ রানে ভাঙেন মুমিনুল। অনিয়মিত এই স্পিনার ম্যাথিউসকে থামান ৩৯ রানে।
৮০ ওভার শেষে ৫ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই দারুণ এক ডেলিভারিতে নিশাঙ্কাকে বোল্ড করে দেন হাসান মাহমুদ।