খেলা
গলে ‘ট্রিপল’ আক্ষেপ
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ডাবল সেঞ্চুরি হবে দু’জনের! গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা শুরু হয়েছিল এই স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হলেন ১৪৮ রান করে। তবে তখনো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহীম। দারুণ খেলছিলেন তিনি সঙ্গে লিটন দাসও নিজের সেঞ্চুরির কাছাকাছি। কিন্তু ১৬৩ রান করে বিদায় নিলেন মুশফিক। দুই ডাবলের স্বপ্ন ভেঙে গেল। আর ৯০ রানে লিটনের বিদায়ে গল টেস্টের প্রথম ইনিংস হয়ে গেল ‘ট্রিপল আক্ষেপ’। এখানেই শেষ নয়, এরপরও সুযোগ ছিল এই গলেই রেকর্ড ৬৩৮ রান ছোঁয়ার কিন্তু সেটিও হচ্ছে না। ৫’শ ছুতেও বাকি এখনো ১৬ রান। আজ তৃতীয় দিন হাতে মাত্র এক উইকেট নিয়ে তা স্পর্শ করতে পারবে কিনা টাইগাররা তা থেকে গেলো প্রশ্ন হয়েই। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৪৮৪ রান ৯ উইকেট হারিয়ে। যা কিনা টাইগারদের টেস্ট ক্রিকেটে ১৪তম সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। প্রশ্ন উঠছে আরেকটাও এই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে কারা ড্রাইভিং সিটে! দলের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও তার উত্তর দিতে চাইলেন না। কারণ ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাও মরিয়া থাকবে দারুণ কিছু করার। আর উইকেটটাও এখনো ব্যাটারদের জন্য বন্ধুপ্রতীম রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘কে ড্রাইভিং সিটে তা বলা যাবে না। ওরা পরিকল্পনা নিয়ে বল করেছে। আমরা কিছু ভুল শটে উইকেট দিয়ে এসেছি। এখনো উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। তাই কিছু বলা যাচ্ছে না এই বিষয়ে!’
দ্বিতীয় দিন শান্ত, মুশফিক ও লিটন দাসের দেখানো স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। তবে স্কোর বোর্ডে রানকে খুব কমও বলা যাবে না। টাইগার অধিনায়ক ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তো দূরে থাক দেড়শটাও মিস করেছেন। চতুর্থ ডাবলের স্বপ্ন ভেঙেছে মুশফিকের। সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে পুড়েছেন লিটন দাস। দিনের শুরু থেকে নির্ভার ব্যাটিং করতে থাকা বাংলাদেশ দল বৃষ্টির পরে ৬১ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়েছে। আলোকস্বল্পতায় গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে হারিয়েছে দল। আগের দিন টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে শান্ত ও মুশফিক টেনে নেন। ৩৯২ রানে নিয়ে দিন শেষ করেন তারা। দু’জনের ব্যাট থেকেই আসে জোড়া সেঞ্চুরি। ২৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি । নাজমুল শান্ত ১৩৬ রান তুলে এবং মুশফিক ১০৫ রান নিয়ে দিন শুরু করেন। কিন্তু শান্ত ২৭৯ বল খেলে ১৪৮ রান করে আউট হন। এ দিন নিজের নামের পাশে যোগ করতে পারেন মাত্র ১২ রান। ২ রান করতে পারলে টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ রানের মাইল ফলকটাও ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তা হয়নি, ১৫টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি। শান্তর বিদায়ে ভাঙে ২৬৪ রানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটির রেকর্ড স্পর্শ হয়নি মাত্র ২ রানের জন্য। এরপর ১৪৯ রানের দারুণ একটা জুটি গড়েন মুশফিক ও লিটন। গলে বৃষ্টি নামার আগে মুশফিক দেড়শ’ রান করে ফেলেন। সেঞ্চুরির আশা দিচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু বৃষ্টির পরে একে একে দু’জনই বিদায় নেন। পরে দ্রুত আউট হন জাকের আলী, নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। বৃষ্টি বিঘ্নিত দ্বিতীয় দিনে খেলা হয়েছে ৬১ ওভার। বাংলাদেশ যোগ করেছে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯২ রান।
দিনের মাঝামাঝি বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল আড়াই ঘণ্টার বেশি। পরে আলোকস্বল্পতায় ১১ ওভার আগেই শেষ হয় খেলা। তবে ব্যাক্তি অর্জনটাও কম নয়। মুশফিক টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম দেড়শ’র ইনিংস ১৬৩ রানে থামেন। তিনি ৩৫০ বল খেলে মাত্র ৯টি চারের শটে ওই ইনিংস সাজান। লিটন ফিরে যান ১২৩ বলে ৯০ রান করে। তার ব্যাটে বড় কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ১১টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এরপর মিলান রত্নায়েকের শিকার হন জাকের আলী ৮ রান করে। নাঈম হাসান ১১ রান করে বিদায় নেন। লঙ্কান পেসার তাইজুলকে ফেরান ৬ রানে। শূন্য রান নিয়ে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা দিন শেষ করেন। তারা তৃতীয় দিনের সকালে ব্যাট করবেন নাকি ইনিংস ঘোষণা করে লঙ্কানদের ব্যাটে পাঠানো হবে তা সকালেই দেখা যাবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ৯ উইকেট তিন লঙ্কান বোলার সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। পেসার আসিথা ফার্নান্দো ৩ উইকেট নিয়েছেন। দুই হাতে বল করতে পারা স্পিনার থারিন্ডু রত্নায়েকে নেন ৩ উইকেট। শেষ বেলায় তিন উইকেট নেন মিলান রত্নায়েকে।