খেলা
গলে শিকল ছিঁড়তে চান শান্ত
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
দক্ষিণে ডাচ দুর্গটি বৃত্তাকারভাবে গল স্টেডিয়ামকে পাহারা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাশে ভারত মহাসাগর আছড়ে পড়ছে। মাথার উপরে উড়ছে বিশাল বিশাল রঙিন ঘুড়ি। মাঝে চোখ রাঙাচ্ছে কালো মেঘ। তবে গেল দুই দিন বৃষ্টি হয়ে ঝরেনি। গলে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ। টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এই ম্যাচের আগে তাদের অন্যতম লক্ষ্যর কথা জানালেন, স্পষ্ট করে বললেন ভালো খেলতে হবে। কেন বলবেন না? বাংলাদেশ ক্রিকেট বারবারই বাঁধা পড়ে ব্যর্থতার শিকলে। এক পা এগিয়ে গেলে পিছিয়ে পড়ে তিন পা। বিশেষ করে দুই যুগেও টেস্ট ক্রিকেটে নিজিদের ডানা মেলতে পারেনি। হঠাৎ হঠাৎ কিছু বড় দলকে হারানোর সফলতা ছাড়া ধারাবাহিকতা নেই। এই ম্যাচ দিয়ে আইসিসি’র টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের চতুর্থ সাইকেল শুরু করতে যাচ্ছে টাইগাররা। প্রথম দুটিতে তলানি এবং সর্বশেষ চক্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯ দলের মধ্যে সপ্তম। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘নতুন একটা প্রতিপক্ষ, নতুন একটা কন্ডিশনে খেলা। আমার মনে হয় এই কন্ডিশনে বেশ কিছু ক্রিকেটারের খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। এই অভিজ্ঞতা যদি কাজে লাগাতে পারে, তাহলে এই সিরিজটা আমার মনে হয় যে ভালো কিছু হবে। কিন্তু আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমরা যারা ব্যাটিংয়ের দায়িত্বে আছি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। এই সংস্করণে ২৬ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র একটি। তবে সেটি এসেছে বাংলাদেশের শততম টেস্টে ২০১৭ তে। তার আগে লঙ্কায় প্রথম সাফল্য বলতে ২০১৩ সালে গলে টেস্ট ড্র। এবার ফের এই মাঠে সুযোগ এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বেশ কিছু দিন থেকে সময়টা খুব ভালো যাচ্ছে না। তিন ফরম্যাটেই যেন পথ হারিয়েছে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরেছে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। পরেরটিতে জিতলেও আত্মবিশ্বাস এখনো তলানিতে। তবে এমন কিছু মাথায় নিয়ে মাঠে নামতে চান না টাইগার অধিনায়ক। তার বিশ্বাস গল টেস্ট হবে ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ। শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় যে অতীতে আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কী সিরিজ খেলেছি, ওটা নিয়ে খুব বেশি আগানো ঠিক হবে না। কারণ, আমরা যদি লাস্ট ম্যাচের কথা বলেন, খুব ভালো স্মৃতি। আগের ম্যাচটা আমরা হেরেছিলাম, কিন্তু পরের ম্যাচে যেভাবে কামব্যাক করেছিল দলটা, আমার মনে হয় ওটাই দলকে মোটিভেট করবে।’
গল টেস্টের আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘মিরাজের অবস্থা আগের থেকে ভালো। তবে সে এখনও পর্যবেক্ষণে আছে। ওকে পাওয়া না পাওয়ার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সেটা নিশ্চিত হয়ে গেলেই আমরা দলটা সাজিয়ে নিতে পারবো।’ গলের স্পিন সহায়ক উইকেট, টেস্ট অভিজ্ঞতা ও ব্যাটিংয়ে সামপ্রতিক ধারাবাহিকতা-সব মিলিয়ে মিরাজ দলের অন্যতম ভরসার নাম। বিশেষ করে মিরাজ খেলতে না পারলে স্পিন বিভাগে বড় প্রভাব পড়তে পারে। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি গড়ে স্পিন আক্রমণের মূল দায়িত্বে থাকেন মিরাজ। সব মিলিয়ে তাকে না পেলে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ভারসাম্যে প্রভাব পড়বে। শান্ত বলেন, ‘কালকে (আজ) আমরা ঠিক করবো কোন কম্বিনেশনে খেলবো। মিরাজকে না পেলে পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হবে।’ কী সেই পরিবর্তন! গুঞ্জন ছিল অধিনায়ক শান্ত ওপেন করবেন এই ম্যাচে। সঙ্গে সাদমান ইসলাম। এরপর মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, লিটন দাস, জাকের আলী অনিক। আর সাতে খেলবেন অল রাউন্ডার মিরাজ। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে এখন মিরাজ না খেললে যেমন কমবে ব্যাটার তেমনি স্পিনারও। যদি তিন স্পিনার খেলাতে হয় তাহলে তাইজুল ও নাঈমের সঙ্গে তরুণ হাসান মুরাদই ভরসা। কিন্তু মিরাজের ব্যাটিংয়ের অভাব কে পূরণ করবে! এখানেই বদলে গেছে হিসাবটা। তাহলে দুজন করে স্পিনার ও পেসার নিয়ে বোলিং সাজিয়ে একজন ব্যাটারকে যুক্ত করতে হবে। এমনটা হলে ৭ নম্বরে মাহেদুল ইসলাম অংকনের সুযোগ আসবে। আর সেটি না হলে শান্ত ওপেন না করে বিজয়কে খেলাতে পারেন সেখানে। অন্যদিকে লঙ্কান অধিনায়কও দুই পেসার ও দুই স্পিনার খেলানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
তবে দলের কম্বিনেশন কী হবে! তিনি নিজে কোথায় ব্যাট করবেন তা জানাতে নারাজ শান্ত। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাটিংটা আসলে কোন জায়গায় হবে, এটা কালকেই বলতে চাই। কারণ, আমি চাই না আমার যে প্রতিপক্ষ আছে, তারা আগে থেকে ওই ধারণাটা পেয়ে যাক। কাল আমরা কী কম্বিনেশনে যাব, তার ওপর নির্ভর করে ১১ জনের দল সাজানো হবে।’ এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে ভালো করতে চান শান্ত। বলেন, ‘আমি যে দল পেয়েছি তা নিয়ে বেশ খুশি। নির্বাচকরা আমার চাওয়া মতোই দল দিয়েছেন। তারাও এমন দলই চেয়েছিলেন। বলতে পারেন সবার মতামতেই দল করা হয়েছে। এই দল নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এখানে দারুণ ভারসাম্য আছে। দলে চার স্পিনার ও চার পেসার। আর বিকল্প ব্যাটারও আছে।’