ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার

আইএমএফ’র কাছে যাওয়া কোনো সুখবর নয়, ফরমালিন দিয়েও আর লাভ হবে না

তারিক চয়ন
১৭ আগস্ট ২০২২, বুধবার
mzamin

ছয় বছর আগে অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করেছিলাম। আমার ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে আরও আড়াই বছরের মতো লাগবে। কিন্তু, আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল)কে এ সময়ে ডাকা অশনি সংকেত বলে মনে হচ্ছে। দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে  শ্রীলঙ্কার দিকে, নয়তো আইএমএফ’কে ডাকতো না। আমি মনে করি, এই সরকারকে সরানোর জন্য সময় খুবই কম। তাদের না সরালে দেশের মানুষ, ব্যবসায়ী সবাই খুব কষ্টে থাকবে, বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে। তাদের অতিরিক্ত এক সপ্তাহ রাখলেও দেশের অনেক ক্ষতি। প্রতিনিয়ত তারা দেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই বললেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। অনেকেই জানেন, রেজা কিবরিয়া আইএমএফ-এ উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কি ধরনের কাজ করেছিলেন জানতে চাইলে বলেন, প্রথম ১০ বছর আমি ইকোনমিস্ট ছিলাম। এক বছর আইএমএফ এক্সিকিউটিভ বোর্ডে সৌদি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (সৌদি আরবের প্রতিনিধি) এর টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ছিলাম। উনার বক্তৃতা লিখতাম, উনি না থাকলে বোর্ডে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে পাঠানো হতো। আমি আইএমএফ বোর্ডেও অংশ নিয়েছি। আইএমএফ-এ থাকতে আমি বিভিন্ন মিশনে গেছি। কোনো দেশকে পর্যবেক্ষণ করা বা কোনো দেশ টাকা চাইলে সেটার বিশ্লেষণ করতে যেতাম। বোর্ড পেপার লিখতে যেতাম যে পেপারের ভিত্তিতে এক্সিকিউটিভ বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় ঋণ দেবে কিনা। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, আইএমএফ’র কোনো কর্মচারী কখনো কাউকে আশ্বস্ত করতে পারে না যে, আমরা টাকা দেবো কারণ এটা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়।’  প্রথমে সরকার আইএমএফ’র কাছে ঋণ চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার না করলেও পরে স্বীকার করে নেয়। অর্থমন্ত্রী পরে বলেন, স্বীকার না করাটা ছিল কৌশল। এটা ঠিক কি ধরনের কৌশল ছিল? ‘আমার এটা বোঝার ইচ্ছাও নেই। এটা বোঝার মতো কিছুও নয়। পুরাতন ভৃত্য (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত) এ কেষ্টা সম্পর্কে বলতো- নির্বোধ অতি ঘোর। তাদের কথাবার্তায় আমার শুধু ওই কথাই মনে হয়। তারা না বুঝে কথা বলে।’ আইএমএফ’র ‘শর্তের’ কারণে জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি তুলে নেয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে একেকজন মন্ত্রী একেকরকম বক্তব্য দিয়েছেন। রেজার বক্তব্য: সত্যকথা বললে মনে রাখতে হয় না কখন কাকে কি বলেছি। মিথ্যা বললে মনে রাখতে হয় কোন মিথ্যা কখন কাকে বলেছি। ঝামেলাটা সেখানে। আইএমএফ আগে থেকে কিছু শর্ত দেয়। আমি অসম্ভব বলছি না। কিন্তু, এখনওতো প্রোগ্রাম আলোচনা শুরুই হয়নি। আইএমএফ প্রথমে পরিসংখ্যানগুলো যাচাই করে দেখে যে, এগুলোর ভিত্তিতে আলোচনা করা যায় কিনা। সবই যদি মিথ্যা হয় তাহলে আইএমএফ আলোচনায় নামবে না। ধরুন- জিডিপি’র পরিসংখ্যান, মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যান এগুলো সব মিথ্যা। এগুলো সবাই মোটামুটি জানে। রিজার্ভের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা আছে। সরকার ৭ বিলিয়ন ডলার একরাতে কমিয়ে দিলো, এই বলে যে তারা ভুল হিসাব করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে নাকি অদক্ষতার জন্য সেটা আমি জানি না। কিন্তু, এটা ঠিক আমাদের পরিসংখ্যান নিয়ে আইএমএফ’র অনেক সন্দেহ আছে। পরিসংখ্যান ঠিক না হলে আলোচনাই শুরু হবে না, এটা বলতে পারি।’  

দেশের অর্থনীতি যদি খুব খারাপই না হতো তাহলেতো আইএমএফ আসতো না, ঋণও দিতো না। তাই না? জবাবে রেজা বলেন, ‘আইএমএফ হলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের মতো। তার কাজ হলো রোগীকে বাঁচানো। ওরা রোগীকে বাঁচাতে খুব কড়া চিকিৎসা, খুব কড়া ওষুধ দিয়ে থাকে। আর বিশ্বব্যাংক হলো জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার)। সে ইঞ্জেকশন দেয়, ওষুধ খাওয়ায়। সাধারণত বিপদে না পড়লে কেউ জরুরি বিভাগে যায় না। সরকার যেন বিরাট সুখবর জাতিকে দিচ্ছে যে, আমরা আইএমএফ’র কাছে যাচ্ছি! এটা কোনো সুখবর নয়। আমি আইএমএফ-এ চাকরি করেছি। সেই অভিজ্ঞতায় বলি, আইএমএফ’র লোকজনও বুঝে কোনো দেশ অনেক বড় বিপদে না পড়লে সেখানে যায় না। আইএমএফ এমন কিছু শর্ত দেবে যেগুলো দেশের জন্য কষ্টকর হবে, সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে, সরকারের লোকজনের ওপরও পড়বে। তবে, তারা এটা কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য করে না, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে টাকাটা ওই দেশ ফেরত দেবে। কারণ এই তহবিল হয়েছে সব দেশের অর্থ দিয়ে। তাদেরতো অন্য দেশের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। শ্রীলঙ্কায় আইএমএফ এখনো দরকষাকষিই শুরু করেনি। কোনো আলোচনা শুরু করেনি। তারা কিছু সংস্কার না করে আইএমএফ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যদি এই আত্মবিশ্বাস না দেখাতে পারে যে, তারা শর্ত রাখতে প্রস্তুত তাহলে ওরা ঋণ দেবে না। আলোচনাই করবে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আইএমএফ’র কিছু স্ট্যান্ডার্ড শর্ত আছে যেগুলো পূরণ করা কঠিন হবে। এক নম্বর হলো: বাজেট আরও টাইটেন করতে হবে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে, খরচ কমাতে হবে, ট্যাক্স বাড়াতে হবে এবং ইকোনমিক গ্রোথ রেইট কমাতে হবে। কারণ, গ্রোথ রেইট বেশি থাকলে আমদানি বেশি হয়। গ্রোথ রেইট কম থাকলে আমদানি কমে যায় এবং রিজার্ভ রিকভারি হয়। তাছাড়া, ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের বিষয় আছে। আইএমএফ খুব নম্র ভাষায় কথা বলে। যেমন: তারা বলে গভার্নেন্স ইমপ্রুভ করো। মানে এই সরকারকে বলছে, চুরিটা একটু কম করো। এই সরকার টিকে আছে চুরির জন্য। তাই, এই শর্ত তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। আগের চুরি তারা জায়েজ করেছে, নতুন চুরির ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং, আইএমএফ’র শর্ত মানতে তাদের খুব কষ্ট হবে। তাদের ইচ্ছা আছে কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ। সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হচ্ছে। এটা কিন্তু এক কিস্তিতে আসে না। বিভিন্ন ট্রাঞ্চ বলে। হয়তো চার কিস্তিতে আসবে। প্রত্যেক কিস্তির আগে তারা একটা রিভিউ করবে এ কারণে যে পরের কিস্তি পাওয়ার জন্য যা করা দরকার সেটি করা হয়েছে কিনা। যদি তাদের রিভিউ মিশন বলে যে, না, কিছুই করেনি; তাহলে বলবে, আমরা তাহলে বাকি লোনটা বাতিল করে দেবো। বাকি লোন বাতিল হওয়াটা দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইএমএফ লোনের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, ইইউ তাদের বাজেট সাপোর্ট লোনগুলো দিয়ে থাকে। তারা যদি দেখে, আইএমএফ সরকারের কাছে থেকে সরে গেছে তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারাও সরে যাবে এবং তাদের সাহায্য আসবে না। শুনতে পাচ্ছি, আইএমএফ’র কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ছাড়াও অন্যদের (বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ইত্যাদি) কাছে আরও সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন চাওয়া হচ্ছে। ওরাতো দেখবে আইএমএফ কি করছে।  

এর আগে রেজা কিবরিয়া বলেছেন, আইএমএফ নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে। ঢালাওভাবে নয়, সুনির্দিষ্টভাবে মিথ্যাচারের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে রেজার পাল্টা প্রশ্ন- একটা অদক্ষ, অবুঝ মানুষ যদি কথা বলে তাকে কি ধরনের মিথ্যাচার বলবেন? যে বুঝেই না যে আইএমএফ কীভাবে চলে; সে কি বলতে পারে যে আইএমএফ আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা টাকা দেবে? আইএমএফ’র কে আশ্বস্ত করেছে?  

তার মানে সরকারের যেসব লোক আইএমএফ নিয়ে কথা বলছেন, তারা বিষয়টা বুঝেন না? ‘বুঝেই না। আমাদের আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞেস করলে উনি যেকোনো বাক্য শেষ করবেন- সাবজেক্ট টু এপ্রোভাল বাই দ্য আইএমএফ এক্সিকিউটিভ বোর্ড কথাটা দিয়ে। এর মানে আমি যা বলছি, আইএমএফ এক্সিকিউটিভ বোর্ড যদি বলে এটা ঠিক আছে তাহলেই সেটা ঠিক আছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদি বলেন, বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবো, এটা একটা অস্পষ্ট কথা। এক্সিকিউটিভ বোর্ড ডকুমেন্টস দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। আইএমএফ স্টাফের অনেক ক্ষমতা থাকে। তারা এক্সিকিউটিভ বোর্ডের কাছে এমনভাবে (রিপোর্ট)  উপস্থাপন করতে পারে যার ফলে লোন নাকচ হয়ে যেতে পারে। আমি জানি না (এক্ষেত্রে) কি হবে। সুতরাং, যারা বলে আইএমএফ আমাদের টাকা দেবে, তাদের বলবো, দিল্লি অনেক দূর আছে। হয়তো দিতে পারে, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। আপনি যদি প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বা মিথ্যা কথা বলেন, সেটা আপনার দোষ। আপনি নিজেও গুগল করে আইএমএফ’র লোন দেয়ার প্রক্রিয়া দেখে নিতে পারেন। এটা জটিল কিছু না। আমার বা আইএমএফ’র কোনো স্টাফের কথায় বিশ্বাস করতে হবে না।’  

আপনারা বলছেন, দেশটা রসাতলে গেছে। আপনারাই আবার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চান! ‘রসাতলে চলে যাওয়া’ দেশকে কীভাবে ঠিক করবেন? ‘এখনো ঠিক করা যাবে। আমার মনে হয়, দেশটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে যাতে এরপর ক্ষমতায় যে আসবে সে যেন টাইম বোমার মুখোমুখি হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা এমন করে যাবে যে স্থিতিশীলতা আনতে (পরবর্তী সরকারকে) হাবুডুবু খেতে হবে। এই সরকারের মধ্যে যে পচন শুরু হয়েছে সেটা আমরা দেখছি। বাজারে ডলার পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না। ডলারের রেট ১২২ এ গিয়ে ঠেকছে। অনেক জায়গাতেই যে সরকারের সমস্যা হচ্ছে সেটা স্পষ্ট।  তেলের দাম একবারে ৫০ শতাংশ বাড়ানো, বাংলাদেশের ইতিহাসেতো নয়ই, খুব বেশি দেশের ইতিহাসে এমনটা দেখা যায়নি। এই বুদ্ধি তাদের কোত্থেকে আসলো আমি জানি না। এই সরকারের অনেককিছুই আমি বুঝি না। আমি বলি ফরমালিন ইকোনমি। কিন্তু, ফরমালিনেরওতো একটা সীমা আছে। ফরমালিন দিয়ে কিছুক্ষণ তাজা রাখা যায়, কিন্তু একটা পর্যায়ে সব ভেঙে পড়ে। কথায় আছে, মাছের পচন ধরে মাথা থেকে। ইকোনমি এখন এতোভাবে পচছে যে কোনোভাবেই কিছু সামাল দেয়া যাচ্ছে না। ফরমালিন দিয়েও আর লাভ নেই, সারা বিশ্বে এর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এই সরকার একেবারে পঁচে গেছে। তারা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে তারপর যাবে। আমার ভয়, তাদের পতন বেশি দেরি হলে দেশের খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। খুব দ্রুত তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা দরকার।’ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আপনারাতো মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামার কথা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেন। জ্বালানি তেলের দাম এতো বেড়ে গেল। মানুষ কি রাস্তায় নামছে? ‘নামবে। এ দেশের মানুষ এই সরকারের কাছ থেকে বেশিকিছু আশা করে না। কারণ, এটি তাদের সরকার নয়। তাদের কারো ভোটে এই সরকার আসেনি। তারা মানুষকে গুলি করবে, ভোলাতে যেমন দু’জনকে গুলি করে মেরেছে। আমি জানাতে চাই, যারা এই খুনগুলো করেছে তাদের এর কৈফিয়ত দিতে হবে। যার আদেশেই করে থাকুক এবং যেই করুক তাদের কৈফিয়ত দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানুষ ভয় পায় কারণ, একটা রক্তাক্ত অবস্থা তৈরি করার জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় প্রস্তুত। তারাতো বলে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো। মানে, তাদের হেলমেট বাহিনী, খুনিদের ছেড়ে দেবে জনগণের বিরুদ্ধে। নিরীহ মানুষের ওপর দমন-পীড়ন, গুলিবর্ষণ তাদের সংস্কৃতিতে আছে।’  

আপনাদের নবগঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন, এটা ক্ষমতা ভাগাভাগির জোট কিনা? আপনাদের নিজেদের মধ্যেই ঐক্য আছে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। বিএনপিকে নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না, নুরুল হক নুর এবং আপনার বক্তব্যের মধ্যেও ভিন্নতা দেখা গেছে। আপনি বলেছেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আসল সম্মানিত লোক...‘আমি খালেদা জিয়াকে সম্মান করি এবং মনে করি যে উনাকে সুচিকিৎসা দেওয়াটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। এটা কোনো দলীয় বিষয় নয়। একজন বীর উত্তমের বিধবা স্ত্রীকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা বিরাট অন্যায়। উনার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারলে আমাদের জাতির ওপর একটা কলঙ্ক থেকে যাবে। উনি পৃথিবীর যেখানেই চান সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। গত ৫২ বছরে দেশের রাজনীতি যেভাবে চলেছে তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। বিএনপিও (ক্ষমতায়) ছিল, জাতীয় পার্টিও ছিল। এদেশে অনেককিছু বদলানো উচিত। মানুষকে একটু আশ্বস্ত করার জন্য আমরা সাত সংগঠনের এই ঐক্য করেছি, এই সরকারকে আমরা ক্ষমতাচ্যুত করবো এবং ইনশাআল্লাহ্‌ একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করবো। এই রাষ্ট্রের মালিকানা আমরা জনগণকে ফেরত দেবো। নির্বাচনে ভোট যে কী গুরুত্বপূর্ণ! মানুষ এটাকে যে কী পরিমাণ গুরুত্ব দেয়! আমাদের গ্রামে মানুষ দু’-তিন ঘণ্টা ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়েছিল ভোট দেয়ার জন্য। সাড়ে ছয়টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকে তারা দেখলো সাড়ে আটটায় দরজায় খুললো এবং ব্যালট বাক্স ভর্তি। একটা সময়েই দেশের ধনী-গরিব সবাই সমান, যে মুহূর্তে তারা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আওয়ামী লীগ একটা বিষাক্ত দল। এখানে আমরা এমন দলকে ক্ষমতায় আনবো যেখানে সরকার জনগণকে ভয় পাবে। একটা বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে আমরা সেটা করবো। আমরা ক্ষমতায় গেলে দেখবেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে, আমার বিরোধিতা করছে, সাংবাদিকরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম। আমাকে কঠিন প্রশ্ন করে আপনি নিশ্চিন্ত মনে বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারবেন। কারণ, আমি সাদা পোশাক পরা কোনো লোক পাঠাবো না, ছাত্র সংগঠনের কোনো লোককে ভয় দেখানোর জন্য পাঠাবো না।’  

আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে রাজনীতিতে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আপনি রাজনীতিতে কতদিন থাকবেন এ নিয়ে যেমন অনেকে সন্দেহ করেন, এর পাশাপাশি, যে মানুষটি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে রাজনীতিতে এসেছেন তাকে ভোট দেয়া মানুষের উচিত হবে কিনা এমন কথাও বলা হয়- এই কথা বলতেই রেজার সোজা উত্তর ‘আমাকে যদি শেখ হাসিনার মতো মূল্যায়ন করেন, তাহলে সেটি ভাবতে পারেন। আমি মনে করি, এদেশে খুব অন্যায় হচ্ছে। আমার বাবা, এই দলে (আওয়ামী লীগ) ছিলেন বলে মনে হলেও আসলে এই দলে ছিলেন না। তিনি অন্য এক আওয়ামী লীগে ছিলেন যে দলটি মানুষের পাশে দাঁড়াতো, যে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি ব্যবস্থার পক্ষে যুদ্ধ করেছে, যে দলটি মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় আন্দোলন করেছে। ওই আওয়ামী লীগ আর নেই। এখন আছে একটা লুটেরা আওয়ামী লীগ। লুটতরাজ এবং মানুষের ওপর অত্যাচার করা ছাড়া এদের আর অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। যে পরিমাণ টাকা-পয়সা তারা বিদেশে পাচার করেছে সেটার বিভিন্নরকম অঙ্ক আমি শুনি। কিন্তু, এটার প্রমাণ পাবেন কিছুদিন পর। জনগণের এটা জানার অধিকার আছে।’  

জাতীয় পার্টিকে রেজা কিবরিয়া সরকারের পোষ্য বিরোধী দল বলেছেন। সমসাময়িক রাজনীতিতে দলটির নানাবিধ গতিবিধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, তারা নিজেদের শুধরাবার চেষ্টা করবে। এখন পর্যন্ত তারা যা করেছে, সেজন্য তারা একটি দালাল দল হিসেবে জনগণের কাছে চিহ্নিত। এখন তারা নিজেদের শুধরাবার একটা সুযোগ পেয়েছে। সুযোগটা তাদের নেয়া উচিত।’ তারা ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন? ‘আমি জানি না, তারা পারবে কিনা। আমি আশা করি। খারাপ মানুষও ভালো হতে পারে। এখন থেকে যদি তারা ভালো কাজ করে হয়তো জনগণ তাদের মাফ করে দেবে। তবে, আমি নিশ্চিত নই মাফ করবে কিনা। এই জালিম সরকারের সঙ্গে থেকে তারা জনগণের সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছে। মজলুমদের পক্ষে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়ে যদি তারা সেটা কাজে লাগায় জনগণ নিশ্চয়ই কিছুটা ক্ষমা করবে। আপনাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদেরও কি স্বাগত জানাবেন? ‘আমি এখন বলতে পারবো না। আমার দল এবং মঞ্চের সঙ্গে আলাপ করতে হবে যে তাদের কতটা বিশ্বাস করা যায়। (হেসে) তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও বাজারে অনেক প্রশ্ন আছে। এগুলো সব ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ 

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি, এই অবস্থায় আপনি সরকার পতনের কথা কীভাবে বলছেন? ‘আন্দোলনের মাধ্যমে এটা করবো। যখন নির্বাচনের কথা রয়েছে, ততোদিন যদি এই সরকার থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতি এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখান থেকে ফিরতে ১৫-২০ বছর লেগে যাবে। আমি সেটা চাই না। আমি তার আগেই তাদের পতন দেখতে চাই। সরকারতো নিজেরাই ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায়। তাই তারা সকলের মাঝে ষড়যন্ত্র দেখতে পায়। আমি বলেছি, মান্না ভাই বলেছেন, রব ভাই বলেছেন- আমরা এই সরকারের পতনের জন্য কাজ করছি। আমরাতো লুকিয়ে কোনো কাজ করছি না। সুতরাং, এটা কোনো ষড়যন্ত্র না। ১৬ কোটি বা ১৮ কোটি মানুষ যাই হোক, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। এটা কি ষড়যন্ত্র?’ আপনি কি যে কোনো মূল্যে সরকারের পতন চান? ‘এমন কোনো কাজ করা যাবে না যেটাতে আমাদের দেশের সুনাম নষ্ট হবে বা জনগণের ক্ষতি হবে। আমি চাই, এ সরকার সরে যাক। অর্থনীতিকে ঠিক করার সময় এখনো কিন্তু আছে। শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে যদি আমাদের দেশ থাকে তবে খুব কঠিন হয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কায় দেখুন, আইএমএফ কথাই বলতে চায় না। আইএমএফ’র কাছে শ্রীলঙ্কা সাহায্য চাইতে গেলে তারা বলেছে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করলে, একটু স্থিতিশীল না হলে আমরা কথাই বলবো না। তারা এখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কোনো আশার আলো নেই।’ আপনি বিভিন্ন সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছেন। জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনের কথাও বলেছেন। এখন আপনি কি চাচ্ছেন? ‘যেকোনো নামই দেয়া যায়। কিন্তু, মূলকথা হলো আমাদের দেশে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য। সেটা হলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এটাতো পরীক্ষিত। এটা বাদ দেয়ার কোনো মানে হয় না। একটা দলীয় সরকার বিশেষ করে একটা ঘৃণিত, অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status