শেষের পাতা
২২ লাখ টাকা ছিনতাই, ১৮ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
আফজাল হোসেন
১৫ জুন ২০২৫, রবিবার
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে প্রকাশ্যে এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত চালালেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং থানা পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
গত ২৭শে মে সকালে জাহিদুল হক নামের এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী তার শ্যালক মো. মাহমুদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর লেনে পরিবারসহ বসবাস করেন। সেদিন সকালে প্রতিদিনের মতো তারা পায়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তারা স্টেডিয়ামের সুইমিংপুল ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি আব্দুল বাতেন সড়কে পৌঁছালে হঠাৎ দুটি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তরা তাদের পথরোধ করে। এ সময় জাহিদুলের হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে তারা। প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজন জাহিদুল হকের পায়ে গুলি করে এবং তারপর ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আশপাশে থাকা লোকজন আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই ছিনতাইয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন মুখোশ ও ক্যাপ পরা ব্যক্তি ব্যবসায়ীর দিকে পিস্তল তাক করে গুলি ছুড়ছে। পরে ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগী পাঁচজন দু’টি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষ।
মিরপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এবং ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। র্যাব, ডিবি এবং পুলিশের একাধিক টিম এ নিয়ে কাজ করছে। আমরা আশাবাদী শিগগিরই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো। তিনি আরও জানান, আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি- অপরাধীদের আটক করতে পারবো।
মিরপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ফারজিনা নাসরিন জানান, তদন্তে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অভিযানের অগ্রগতি রয়েছে এবং আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
এ ঘটনাকে ঘিরে মিরপুর-১০ ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় দিনের আলোয় এমন ভয়ঙ্কর ছিনতাই এবং এখনো কোনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। দিনদুপুরে রাজধানীর এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংঘটিত এই সাহসী ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পরবর্তী ১৬ দিনেও কোনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
পাঠকের মতামত
পুলিশ হয়ত নিজেই ডাকাত তাহলে ধরবে কাকে?