ভারত
‘ আমাকে পলাতক বলতে পারেন, কিন্তু আমি চোর নই’
মানবজমিন ডিজিটাল
(১৭ ঘন্টা আগে) ৭ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩:১২ পূর্বাহ্ন
৯,০০০ কোটি টাকারও বেশি জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে ভারতে ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন শিল্পপতি বিজয় মালিয়া। সম্প্রতি উদ্যোক্তা রাজ শামানির চার ঘন্টার পডকাস্ট কথোপকথনে তার বিরুদ্ধে ওঠা মামলাগুলো সম্পর্কে কথা বলেছেন এই বিজনেসম্যান । কিংফিশার এয়ারলাইন্সের সাবেক প্রধান ভারত থেকে তার বিতর্কিত প্রস্থান, আইনি লড়াই, তার এয়ারলাইন্সের পতন এবং তাঁকে 'চোর' বলা নিয়ে একাধিক বিষয় শেয়ার করেছেন। পডকাস্টে মালিয়া বলেছেন - ' আমি দেশ ছেড়ে পালাইনি। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে দেশ ছেড়েছিলাম। ২০১৬ এর মার্চের পর আর ফিরিনি। যে সমস্ত কারণে দেশ ছেড়েছি তার যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। আপনি যদি তারপর আমাকে পলাতক বলতে চান তো বলুন। কিন্তু চুরি ব্যাপারটা এল কোথা থেকে? চোর শব্দটা আমাকে বলবেন না।” ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মালিয়া বিদেশে থাকা তার আইনি ঝামেলা আরও বাড়িয়েছে কিনা তা নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "যদি আমার ভারতে ন্যায্য বিচার এবং মর্যাদাপূর্ণ অস্তিত্বের নিশ্চয়তা থাকতো তাহলে আমি হয়তো ভারতে ফেরার কথা ভাবতাম । কিন্তু আমি তা করি না।"ন্যায্যতার নিশ্চয়তার ভিত্তিতে তিনি ভারতে ফিরে আসবেন কিনা তা সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হলে, মালিয়া উত্তর দেন, “যদি আমাকে আশ্বস্ত করা হয়, অবশ্যই, আমি এটি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাববো ।” তিনি আরেকটি প্রত্যর্পণ মামলায় যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের আপিল রায়ের উদ্ধৃতিও তুলে ধরেছেন , যেখানে তিনি বলেছেন যে ভারতের তরফে তাঁকে আটকের শর্তগুলো মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের ৩ নং ধারা লঙ্ঘন করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।অতএব, তাকে ফেরত পাঠানো নাও হতে পারে। সাক্ষাৎকারে মালিয়ার মন্তব্যের বিষয়ে ভারত সরকার এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।কিংফিশার এয়ারলাইন্সের পতনের কথা বলতে গিয়ে মালিয়া পডকাস্টার রাজ শামানিকে বলেন, '২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট একটি বড় কারণ ছিল। আপনি কি কখনও লেহম্যান ব্রাদার্সের কথা শুনেছেন? আপনি কি কখনও বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কথা শুনেছেন ? এর কি ভারতে কোনও প্রভাব পড়েনি? অবশ্যই, পড়েছে। প্রতিটি সেক্টরেই ক্ষতি হয়েছে। অর্থ রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় রুপির মূল্যও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।"কিংফিশার এয়ারলাইন্সের ভরাডুবির জন্য পরোক্ষে তৎকালীন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি।কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্যই বিপুল টাকা ঋণ নিতে হয় মালিয়াকে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েই তিনি পরোক্ষে কাঠগড়ায় তোলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। মালিয়ার কথায়, ‘তখন হাতে টাকা নেই। এয়ারলাইন্স কোম্পানির খুব খারাপ অবস্থা চলছে। সাহায্যের জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোম্পানি কাটছাঁট করব। বিমানের সংখ্যা কমিয়ে দেব। কিছু কর্মী ছাঁটাই করাও দরকার। কারণ আমার পক্ষে আর টানা সম্ভব হচ্ছে না।’কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায় বলে দাবি করেন মালিয়া। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল, কোম্পানি ছোট করার দরকার নেই। ব্যাঙ্ক তোমার পাশে আছে। এখান থেকেই শুরুটা হয়।’ সাক্ষাৎকারে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের ভরাডুবির জন্য ক্ষমাও চান তিনি । বলেন, ‘কিংফিশার এয়ারলাইন্সের ব্যর্থতার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’মালিয়ার আইনি ঝামেলা ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল, তিনি স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া সহ ভারতীয় ঋণদাতাদের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে ১১,১০১ কোটি টাকার ঋণের মামলায় লন্ডন হাইকোর্ট কর্তৃক জারি করা দেউলিয়া ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল হেরে যান। ফেব্রুয়ারিতে, মালিয়া কর্ণাটক হাইকোর্টে তার আইনি আইনজীবীর মাধ্যমে যুক্তি দেন যে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই ১৪,০০০ কোটি টাকা আদায় করেছে - যা মূলত বকেয়া ৬,২০০ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি।তিনি আদালতকে ঋণদাতাদের উদ্ধারকৃত অর্থের বিস্তারিত বিবরণ প্রদানের নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি আর দেবদাসের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ঋণ আদায় কর্মকর্তাদের নোটিশ জারি করে। তা সত্ত্বেও, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া কিংফিশার এয়ারলাইন্সের সাথে সম্পর্কিত আর্থিক অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে বিজয় মালিয়ার প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস