ভারত
সরকারি পদ গ্রহণ এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে বিচারকদের সতর্ক করলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ দিন আগে) ৪ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
বিচারকদের অবসর গ্রহণের পরপরই সরকারি পদ গ্রহণ বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে সতর্ক করলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ভূষণ আর গাভাই। তিনি বলেছেন যে, এই ধরনের অভ্যাস ‘উল্লেখযোগ্য নৈতিক উদ্বেগ’ তৈরি করে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করার ঝুঁকি তৈরি করে।মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার উপর একটি উচ্চ-স্তরের গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি গাভাই জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘যদি কোনও বিচারক অবসর গ্রহণের পরপরই সরকারের আরেকটি পদে নিয়োগ গ্রহণ করেন, অথবা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বেঞ্চ থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে তা উল্লেখযোগ্য নৈতিক উদ্বেগের জন্ম দেয় এবং স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন উঠবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন বিচারক রাজনৈতিক পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। কারণ এটিকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা সরকারের সাথে আনুকূল্য অর্জনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হতে পারে।’
প্রধান বিচারপতির মতে, ‘অবসর-পরবর্তী এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিচার বিভাগের সততার উপর জনসাধারণের আস্থা হ্রাস করতে পারে। বিচারিক সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতের সরকারি নিয়োগ বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয় - এমন ধারণার জন্ম দিতে পারে।’
প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘ভারতে বিচারপতি নিয়োগে কে প্রধান ভূমিকা পালন করবে, এই প্রশ্নটি বহুদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত নির্বাহী শাখা। তখন দুইবার ভারতের প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিদের উপেক্ষা করা হয়েছিল।’
তিনি আলোচনায় জানান, এই দুই ঘটনাই বিচার বিভাগের ঐতিহ্যবিরোধী ছিল। ১৯৬৪ সালে বিচারপতি সৈয়দ জাফর ইমাম শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়োগ পাননি, এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বিচারপতি পিবি গজেন্দ্রগড়করের নাম সুপারিশ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার ‘এডিএম জবলপুর বনাম শিবকান্ত শুক্লা’ মামলায় মৌলিক অধিকার নিয়ে ভিন্নমত দেয়ার কারণে বিচারপতি হংসরাজ খান্নাকে উপেক্ষা করে। এই কথা জানানোর পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জবাবে ১৯৯৩ ও ১৯৯৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, ভারতের প্রধান বিচারপতি ও চারজন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি কলেজিয়াম সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে সুপারিশ করবে।’
ভারতের প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা গণতান্ত্রিক গুণাবলী। আজকের ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্য অবাধে প্রবাহিত হয় এবং ধারণাগুলো দ্রুত রূপ নেয়, তখন বিচার বিভাগকে তার স্বাধীনতার সাথে আপস না করেই অ্যাক্সেসযোগ্য, বোধগম্য এবং জবাবদিহি করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস