ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ভেপিংকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হচ্ছে ভুলভাবে

স্টাফ রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার, ৭:৩৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৪৪ অপরাহ্ন

mzamin

ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে প্রস্তুত করা খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের যে ধারা যুক্ত করা হয়েছে তা কার্যকর হলে তা ধূমপানের ঝুঁকি কমানোর পরিবর্তে বাড়াবে এবং বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হবে। এই খাত সংশ্লিস্টরা বলছেন, সরকার অংশীজনদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে ভেপিং বা ই-সিগারেট নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় ভেপিংকে তামাকজাত দ্রব্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ভেপিং পণ্য উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, মজুদ, বিক্রি এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডেস্টা) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া থেকে ভেপিং পণ্য তথা ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভেপিং সংক্রাস্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা এবং তামাক পণ্য ও ভেপিং– এই দুইটিকে আলাদা পণ্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানানো হয়। 

তবে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মকর্তা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভেপার বা ভেপিং পণ্য বিক্রেতাদের সংগঠনকে অংশীজন মনে করে না। বেন্ডস্টার সভাপতি মাসুদ উজ জামান বলেন,‘ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া বা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা অনেকে ফের প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাবে। এতে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে বরং বেড়ে যাবে। ২০৪০ সালে মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন তা বাধাগ্রস্ত হবে।’ তিনি বলেন,‘পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ডের (বর্তমানে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি) গবেষণায় ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

 এমন গবেষণা ও বাস্তবতা আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে ভেপিংকে তামাকজাত পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে তা নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হচ্ছে ভুলভাবে।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘ই-সিগারেটের নিকোটিন আরও বেশি ক্ষতিকর।

বিজ্ঞাপন
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভেপার বা ভেপিং পণ্য বিক্রেতাদের সংগঠনকে অংশীজন মনে করে না, কারণ বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এফসিটিসির ৫.৩ ধারায় বলা আছে সরকারি কর্মকর্তারা (তামাকজাত পণ্য) উৎপাদকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন না।’ তবে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ৫.৩ ধারায় তামাক খাতের সব ধরনের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়নি।

 বরং তামাক নিয়ন্ত্রণের আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠায় তাঁরা সহযোগিতা করতে পারবে। হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘যখন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মাদকের ব্যাপারে কোনো আইন করতে যায় তখন তাঁরা কি মাদক বিক্রেতা বা মাদকসেবীদের সঙ্গে কথা বলে? তাদের অংশীজন হিসেবে গণ্য করে? সুতরাং তামাক বা তামাকজাত পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সস্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই।’ ‘ই-সিগারেটের নিকোটিন তরলীকৃত এবং তা স্বাভাবিক নিকোটিনের তুলনায় আরও বেশি ক্ষতিকর। আমরা ভেপিংকে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি না।’ এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অংশীজনদের মতামত ছাড়াই আইন করে ফেলা বা আইনের সংশোধন আনাটা নিয়মের মধ্যে পড়ে না, রীতিমত অসাংবিধানিক।’ তিনি আরো বলেন, ‘তামাক বাংলাদেশে বৈধ পণ্য। মাদকের সাথে একে মেলানো বা তামাকের ব্যবসায়ীদের অপরাধী আখ্যা দেওয়া একদমই বেআইনি।’ যুক্তরাজ্যে ভেপিংকে বৈধ করে আইন আছে এবং তা সফলভাবে ধূমপান হ্রাস করছে, এমন প্রসঙ্গের জবাবে হোসেন আলী বলেন, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের মতো আইন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে ভেপিং করা যায়। যুক্তরাজ্যে আইনের শাসন আরও দৃঢ। মানুষ আইনের প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল।’ বেন্ডস্টার সভাপতি মাসুদ উজ জামান মনে করেন, ‘যুক্তরাজ্যের ভেপিং নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কের মন্তব্য সঠিক তথ্য নির্ভর নয়। কারণ ভেপিং পণ্য কেনার জন্য চিকিৎসকের প্রেসস্ক্রিপশন দরকার পড়ে না।’  
মাসুদ আরো বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থার বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন করেছে, দেশটিতে ২০১২ সালে ৭ লাখ ভেপার ছিল, যা ২০১৯ সালে ৩৬ লাখে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ ভেপিংয়ের সাহায্যে ধূমপান পুরোপুরি ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন।

 তিনি বলেন, ভেপিয়ের সময় মানুষ নিকোটিন গ্রহণ করে আর ধূমপানের সময় নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ধোঁয়া যায় শরীরে, ফলে ভেপিং তুলনামূলক অনেক নিরাপদ।’হোসেন আলীর মন্তব্যের সমালোচনা করে মাসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্যের নামী প্রতিষ্ঠান ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির গবেষণাকেও বাতিলের খাতায় ফেলতে চাইছে। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের এর সুখ্যাতি রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের অখ্যাত কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত বৈশ্বিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য, এমন দাবি শিশুসুলভ।’

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status