শেষের পাতা
অসহনীয় চাপে সিলেটের মানুষ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার
প্রতীকী ছবি
দ্রব্যমূল্যে অসহনীয় হয়ে উঠেছে সিলেট। চালের বাজার অস্থির। মাছ বাজারেও বেড়েছে দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন কোনো পণ্য নেই যে সিলেটে দাম বাড়েনি। ফলে বাজারের আগুন দামে সাধারণ মানুষের চিড়ে-চ্যাপ্টা অবস্থা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘একমাত্র জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখনো বাজারে পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।’ করোনার পর দু’দফা বন্যা। হাওরে ফসলহানি হয়েছে। সবজিও ফলেনি সিলেটে।
প্রায় সময়ই বাজারে জেলা প্রশাসকের অভিযান আসে। এ সময় দেখানো হয় এক রেট। কিন্তু বাস্তবে বিক্রি করা হয় বেশি দামে।’ তিনি জানান, ‘বাজারে দামের কারণে আমরা না পারছি বলতে, না পারছি ধৈর্য্যধারণ করতে।’ পাইকারী বাজার সিলেটের কালীঘাট। চাল, তেল, পিয়াজসহ নানা পণ্যের পাইকারী আড়ত এটি। কালীঘাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‘সিলেটের বেশিরভাগ নিত্য পণ্য চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়। আগে যেখানে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকায় ট্রাক আসতো। এখন সেই ট্রাক আসে ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকায়। ফলে পণ্য পরিবহনের হিসেবে দাম তো বেড়েই গেছে। এছাড়া এখন ট্রাক পাওয়াও দুস্কর হয়ে পড়েছে।’ তারা জানিয়েছেন, ‘খাতুনগঞ্জে এখন পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। জ্বালানির অজুহাত তুলে সবাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে সিলেটের বাজারেও দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি হারে তারা কম লাভেই পণ্য বিক্রি করছেন বলে জানান।’ সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে; সিলেটে সকল প্রকার চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
কালীঘাট, কাজিরবাজারসহ কয়েকটি চালের বাজারে চারদিন ধরে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া- ভাজ্য তেলের দাম বাড়তির দিকে। দু’দিন আগেও ৫ লিটার তেল বিক্রি হয়েছে ৯১০ টাকায়। গতকাল বিকালে সেটি বিক্রি হচ্ছিল ৯৩০ টাকা দরে। পিয়াজের কেজিও ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। আদা, রসুন, ডালের দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা হারে বেড়েছে। সিলেটের কালীঘাটের চাল বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি স্বীকার করেন সিলেটে চালের দাম বাড়তির দিকে। জানান, ‘চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হারে বেড়েছে। এর জন্য দায়ী এলসির চাল ব্যবসায়ী। তারা চাল বিক্রি করছেন না। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগে চাল আসছে না বলে জানিয়েছেন। এছাড়া, স্থানীয়ভাবেও মোকামে চালের সংকট। ধানের ভাণ্ডার সুনামগঞ্জে এবার চাল নেই। আর বেশি দাম দিলে মোকাম থেকে চাল পাওয়া যায়। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’ ফারুক আহমদ জানান, ‘সিলেটের চালের আড়তগুলোতে মজুত কমে আসছে। আর যত মজুত কমবে তত দাম বাড়বে।’ সিলেটে ব্রয়লার মুরগির দাম নাগালের বাইরে।
কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইসঙ্গে দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। সিলেটের লাল বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, ‘পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসায়ীরা এই দাম বাড়িয়েছে। তারা কম লাভে বিক্রি করেও দাম কমাতে পারছেন না। এছাড়া গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে মুরগির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’ সিলেটের বাজারে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এক হালি ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। এই দাম বাড়তির দিকে রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। তবে, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। কাজিরবাজার সিলেটের প্রধান মৎস্য আড়ত। বন্যার পানির টান পড়ায় দেশি মাছ বাজারে বেড়েছে। তবে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা রুই, কাতল, গ্রাসকাপ মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। ইলিশের বাজারেও আগুন। এখন প্রতি কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা দরে। কাজিরবাজার মৎস্য আড়তদার সমাবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, ‘পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা হারে দাম বেড়েছে। আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আপাতত দেশি মাছ বিক্রিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দেশি মাছের দাম কম রয়েছে বলে জানান তিনি।’ সিলেটের বাজারের এই অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা পড়েছে চাপের মুখে। এই অবস্থা থেকে সহসাই উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন, ‘পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এখন চাপের মুখে। কারণ, এই পণ্যের লাগাম টেনে ধরতে ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করেও পারছেন না। আগে যেখানে শতে ২ টাকা লাভ করা হতো, এখন এক টাকা লাভ করা হচ্ছে। এরপরও পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি।’ এদিকে, বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি। এছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। ফলে বাজারে আসা ক্রেতারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা ভালো অবস্থানে নেই। মন্ত্রীরা যা বলছেন; ঠিক তার উল্টো দিকে আমরা আছি। সিলেটের অসহনীয় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যাদের ভূমিকা রাখা দরকার তারা সটিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রাও অস্থির হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।’
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]