প্রথম পাতা
মসলার বাজারে অস্বস্তি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৫, শনিবারকোরবানির ঈদ সামনে রেখে চড়েছে মসলার বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে পিয়াজের দাম। রসুন কিনতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম। ২০০ টাকা কেজির আদা ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হলুদ কিনতে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪২০ টাকা। এলাচের কেজি ঠেকেছে ৫৩০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫০০০ টাকা। তবে বাজারে কমেছে চাল, সবজি, মুরগিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে দাম। মাসের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম ৩ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বাজার তদারকির অভাবেই এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সপ্তাহ দুয়েক পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আগে-ভাগেই বাড়ে মসলার দাম। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। তবে গত বছরের তুলনায় তা কিছুটা কম বলে জানালেন বিক্রেতারা। এলাচ বাদে অন্যান্য মসলার দাম নাগালের মধ্যেই আছে বলে দাবি তাদের। রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি জানায়, এবার সব ধরনের মসলার দাম মোটামুটি কম। গুয়েতেমালা থেকে আনা এলাচের উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ কমেছে। তবে অন্যান্য মসলা পর্যাপ্ত এসেছে। ভারত থেকেও নিয়মিত আসছে।
পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারিতে ভারতীয় জিরা ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর ঈদের আগে দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ টাকা, গত বছর ঈদের আগে যেটার দাম ছিল ৫৫০ টাকা। জয়ফল ৭২০ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর ঈদে এই মসলার দাম ৫০ টাকা কম ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবয়ায়ীরা। অন্যদিকে লবঙ্গ ১ হাজার ৩৩০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে, যেটা গত বছর ঈদে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া বাজারে পাইকারিতে ধনিয়া প্রতি কেজি ১৯০, তেজপাতা ২২০ এবং সরিষা ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে খুচরায় দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৬০, চীনা রসুন ২০০ থেকে ২৪০, শুকনো মরিচ (দেশি) ২৮০ থেকে ৩০০ এবং আমদানি করা ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ এবং হলুদ ৩২০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাচের সরবরাহ সংকটের কারণে এ পণ্যটির দাম বেশি। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি এলাচের দাম দেখা গেছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা, যা গত বছরে ঈদের আগে ছিল ৪ হাজার টাকার কাছাকাছি। এক বছরের ব্যবধানে এলাচের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ১ হাজার টাকা। এলাচের দাম কেন বাড়ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন চকবাজারের এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, কেজিপ্রতি এলাচ আমদানিতে খরচ পড়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে পাইকারি দাম গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজারে। তাই নতুন এলাচের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের মজুত করা এলাচ এখন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তারপরও দাম পড়ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা কেজি।
এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মসলা বাজারে ভালোমানের ছোট এলাচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া জিরা ৬০০ থেকে ৬৫০, লবঙ্গ ১ হাজার ২৫০, দারুচিনি ৩৭০ থেকে ৪৭০, গোলমরিচ ১ হাজার ১৮০ ও জয়ত্রি ২ হাজার ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলা বিক্রেতা রাইসুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে যা মজুত ছিল, প্রায় সবই বিক্রি হয়েছে। এবার আমরা অনেকটাই কম লাভে দিচ্ছি।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম বাড়ে। এবারো ব্যতিক্রম নয়। পুরনো সিন্ডিকেট নতুন রূপে সক্রিয় হয়েছে। সরকারের নীরবতার সুযোগে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। মানুষের পকেট কাটা যেন এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। যেসব চক্র অনিয়মে জড়িত, তারা বারবার সুবিধা পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে তারা আরও উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, যখন প্রশাসন নীরব থাকে, তখনই এই চক্রগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়, আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মঞ্জুর আলম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম অনেক কম। রমজানে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম ছিল। তবে ঈদের পর উৎপাদন কম এবং সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছিল। সামনে আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, দাম বাড়তি থাকলে ক্রেতাদের চাহিদা কমে যায়, ফলে আমাদের বিক্রিও কমে যায়।
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিমের দাম ডজনে প্রায় ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে এ সময়ে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামে চড়াভাব এখনো কাটেনি। তবে কিছু কিছু সবজি আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারগুলোতে এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন হিসাবে। পাড়া-মহল্লায় প্রতি ডজন ডিম ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত সপ্তাহেও এ দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে এখন ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু কিছু দোকানে গরুর মাংস কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আগে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ৭৮০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। তবে দরদাম করে আগের দামে কেনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বাজারে এখন গ্রীষ্মের পটোল-ঢ্যাঁড়সের মতো সবজিগুলো অন্যসময়ের তুলনায় কম দামে কেনা যাচ্ছে। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৬০ টাকায়। এ ছাড়া চিচিঙ্গা, ঝিঙে, কাকরোল, উস্তা, বেগুন ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমছে। তবে বাজার এখনো ওঠানামা করছে। বৃষ্টিতে সরবরাহ কমলে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই দামে কিছুটা হেরফের হয়।