ঢাকা, ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

আন্দোলনকারীদের মার্চ টু যমুনা ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার
১১ মে ২০২৫, রবিবার
mzamin

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ ৩ দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় গতকালও দিনভর অবরুদ্ধ ছিল। টানা অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা দ্রুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেন। গণজমায়েতে বক্তারা বলেন, যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী। আওয়ামী লীগ একটি খুনি দল। তাদের এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার। এই খুনের দায়েই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচিতে গতকাল বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহবাগ এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। অবস্থান-বিক্ষোভ চলাকালে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালেই আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন এক ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত না আসলে শাহবাগ থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয়া হবে এবং প্রয়োজনে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এক ঘণ্টা পার হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা মার্চ ফর যমুনা ঘোষণা দিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

গতকাল সকাল থেকেই শাহবাগ মোড়ের চারপাশের সড়কগুলো অবরোধ থাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। তবে এম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার যানবাহন চলাচলে ছাড় দেয়া হয়। ছাত্র-জনতার অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ের প্রতিটি সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সকালের দিকে কিছুটা ভাটা পড়লেও বিকাল গড়াতেই লোকে লোকারণ্য হয় পুরো শাহবাগ মোড় চত্বর। বিকাল ৩টার পর থেকেই এলাকা জুড়ে ছোট-বড় মিছিল আসতে শুরু করে। মিছিলগুলো টিএসসি, মৎস্য ভবন ও নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন দিক থেকে শাহবাগমুখী হয়। গণজমায়েতে অংশ নেয় এনসিপি, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জমায়েত ঘিরে ইসলামী ছাত্রশিবির একটি অস্থায়ী চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে পানির সরবরাহ করা হয়।
এ সময় আন্দোলনকারীরা চারদিকে খবর দে- আওয়ামী লীগের কবর দে, ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ ব্যান’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, রক্তে আগুন লেগেছে, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়, চলছে লড়াই-চলবে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করেন শাহবাগ চত্বর। 

সমাবেশে এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়বো না। যত ষড়যন্ত্রই হোক, আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কেউ দমন করতে পারবে না। কেউ যদি আমাকে চাপ প্রয়োগ করে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে তবুও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। নমরুদ, ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগের সেভাবে পতন হয়েছে। 

সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে খুনি দল।  আমরা মাঠে নেমেছি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। তা না হলে বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চান আপনারা ভারতে চলে যান আপনাদের ঠিকানা ওইখানে। 

গণজমায়েতে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগকে জনগণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি জনগণের চেতনা ধারণ করতেন, তাহলে তারাও অনেক আগে এই দলটিকে নিষিদ্ধ করতেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে আমরা নতুন সরকার গঠনে রাজপথে নামবো। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত, আদর্শ থাকতে পারে কিন্তু জুলাই প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে খুনি, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত দল। এদেশে তাদের কোনো স্থান নেই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আর কতো সংগ্রাম আর রক্ত দিতে হবে। যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চান আপনারদের পরিণতি ভালো হবে না।

এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এ বাংলার মাটিতে তাদের ঠাঁই হবে না। রাজনৈতিক দল বলে তাদের পুনর্বাসন করতে চাইলে জুলাই ছাত্র-জনতা তা রুখে দিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়বো না।

গণজমায়েতে এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, ছাত্র শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ এবং জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদদের পরিবারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এদিন রাত ১০টা থেকে এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে যমুনার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। পরে রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পাঁচটি পিকআপ ভ্যান একত্র করে সমাবেশের জন্য যমুনার পাশে ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের ফোয়ারার সামনে ‘জমায়েত মঞ্চ’ তৈরি করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভের পর গত শুক্রবার বিকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তারা ‘শাহবাগ ব্লকেড’-এর ঘোষণা দেন। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status