প্রথম পাতা
যুদ্ধবিরতি
মানবজমিন ডেস্ক
১১ মে ২০২৫, রবিবার
ভয়াবহ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এলো ভারত ও পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন দেশ দুটি অবিলম্বে এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল থেকে তা কার্যকর হয়েছে। দুই দেশ পাল্টা-পাল্টি হামলায় ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছার পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শুক্রবার দিবাগত রাতে দীর্ঘসময় আলোচনার পর আমি সন্তুষ্টির সঙ্গে এ ঘোষণা দিচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। ভারতের পক্ষে সত্যতা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ট্রাম্প তার পোস্টে আরও লিখেছেন, সাধারণ জ্ঞান এবং ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন জানাই। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। ওদিকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নিরপেক্ষ কোনো স্থানে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা শুরু করায় রাজি হওয়ার জন্যও অভিনন্দন জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুবিও বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টা ধরে তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও অসিম মলিক। রুবিও লিখেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শেহবাজ শরীফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার প্রশংসা করি। ওদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার নিশ্চিত করেছেন যে, ভারতের সঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতিতে যাচ্ছেন এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সব সময় আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে। এক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে আপস হবে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, গোলাগুলি এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান। যেকোনো রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো আপস নয় এবং কঠোর অবস্থানে থাকবে ভারত। এটা অব্যাহতভাবে ভারত বলে আসছে। অব্যাহতভাবে তা করে যাবে ভারত। ওদিকে তার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, শনিবার বিকালে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালক ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালককে ফোন করেছিলেন এবং একমত হয়েছেন তারা। তিনি সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল ৫টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে উভয়পক্ষই স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে সব রকম লড়াই বন্ধ রাখবে। এর প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুই দেশের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালকরা স্থানীয় সময় ৩টা ৩৫ মিনিটের সময় কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ১২ই মে দুপুর ১২টায় সামরিক অভিযান নিয়ে আবার কথা বলবেন দুই মহাপরিচালক। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিষয় নয়। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতিতে তার সে অবস্থান বদলে ফেলেন। তিনি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই প্রতিবেশী দেশকে উত্তেজনা প্রশমনে রাজি করান।
ইসলামাবাদ থেকে বিবিসি’র সাংবাদিক কামাল হায়দার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বন্ধুপ্রতীম অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোর পর অবশেষে একটি শুভ সংবাদ পাওয়া গেল। এতে সীমান্তের উভয়পাশে স্বস্তি ফিরেছে। এখন পারমাণবিক অস্ত্রধর এই দুই দেশের মধ্যে সংকট সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। যদি তারা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না করে এবং দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে না আনে, তাহলে ভবিষ্যতে আবারো একই অবস্থার প্রত্যাবর্তন ঘটবে। পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এই দুই দেশের যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছিল। হামলা-পাল্টা হামলায় একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিচ্ছিল সংঘাত। এ নিয়ে শুধু ওই দুই দেশ নয়, আতঙ্ক বিরাজ করছিল আঞ্চলিক পর্যায়ে তথা আন্তর্জাতিক মহলে। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখা ও সীমান্ত অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়। পরিস্থিতির অবনতিতে পাকিস্তানে মার্কিন কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল সীমাবদ্ধ করা হয়। অবশেষে শ্বাসরুদ্ধকর এ অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সীমান্তের দুই পাশের জনগণ।