প্রথম পাতা
চলে গেলেন মোস্তফা জামান আব্বাসী
স্টাফ রিপোর্টার
১১ মে ২০২৫, রবিবার
চলে গেলেন দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন আব্বাসী। সর্বশেষ শুক্রবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবশেষে চলেই গেলেন তিনি। গতকাল ঢাকার আজিমপুরে বাবা-মায়ের কবরে দাফন করা হয় মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। তার আগে বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পল্লী গীতির অগ্রপথিক। এদেশের পল্লী সংগীতকে তিনিই প্রথম বিশ্বের দেশে দেশে জনপ্রিয় করেছেন। চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লী গীতি ও ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল আইন বিশারদ। বোন ফেরদৌসী রহমান ও কন্যা নাশিদ কামালও সংগীতাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন প্রথিতযশা শিক্ষক ও লেখিকা। তিনি গত বছর মারা গেছেন। ১৯৩৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর ভ্রাতের কোচবিহারের বলামপুর গ্রামে জন্ম নেয়া আব্বাসী কলকাতায় তার শৈশব কাটিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হাভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। লোকসংগীত গবেষণা ও সংগ্রহে তার অবদান অনন্য। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে তিনি ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে রয়েছে কয়েক হাজার লোকগান। এ ছাড়া, তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুল গীতি পরিবেশন করে বাংলাদেশের সংগীতকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি ছিলেন ইউনেসকোর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি। নজরুল ও আব্বাসউদ্দিনের ইংরেজি জীবনী লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক তিনি। তার উপস্থাপনায় বিটিভি’র ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আমার ঠিকানা’, ‘আপন ভুবন’ প্রভৃতি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আবার রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে বহু উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস- ‘হরিণাক্ষি’, ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’ এবং ইংরেজি জীবনী। বাংলা সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।