ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

সাউথচায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে রাশিয়া ও চীনের অস্ত্র সরবরাহে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

মানবজমিন ডেস্ক
৯ মে ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুরুর ঠিক আগে রাশিয়া ও চীন থেকে অস্ত্রের চালান হাতে  পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী এ দুই দেশ। এক্ষেত্রে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত, আর চীনের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার চির প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাতের পেছনে মস্কো ও বেইজিংয়ের কোনো ভূমিকা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ভারতীয় মিডিয়া বলছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ইগলা-এস নামের আকাশ প্রতিরক্ষা  ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েছে ভারত। ২২শে এপ্রিল ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার মধ্যেই ভারতের কাছে রাশিয়ার অস্ত্র পৌঁছানোর খবর দিয়েছে মিডিয়া। এর মধ্যে স্বল্প উচ্চতায় থাকা বিমান এবং ড্রোন ধ্বংসকারী সরঞ্জামও রয়েছে। আর  ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এবং ধারণা করা হচ্ছে নয়াদিল্লির জরুরি চাহিদা মোতাবেক এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়া। প্রায় ৩০ লাখ ডলার সমমূল্যের ইগলা-এস আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েছে ভারত। যেগুলো হাতে বহনযোগ্য। ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতেই এসব অস্ত্রের আমদানি করেছে দিল্লি। বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্তবর্তী এলাকায় এগুলোর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায় তারা। এদিকে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিরসনে উভয় দেশকে সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তবে এখানে খেয়াল রাখার বিষয় হচ্ছে ইউক্রেনে হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকেই ভারতে অস্ত্র চালান করেছে রাশিয়া।
পেহেলগাম হামলার দুই সপ্তাহ পার না হতেই এ সপ্তাহে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে সামরিক হামলা চালিয়েছে ভারত। এই অভিযানের নাম দিয়েছে অপারেশন সিঁদুর। ভারতীয় গণমাধ্যম অনুসারে, ভারতের সামরিক অভিযানে ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ গবেষক চিতেগি বাজপাই বলেছেন, রাশিয়া মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেও ভারতকে তাদের অস্ত্র দেয়া এটা স্পষ্ট করেছে যে, নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বহু দূরে রয়েছে মস্কো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলেও দিল্লি-মস্কোর সম্পর্ক বেশ পুরানা। ১৯৫০-এর দশকে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থনের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছিল রাশিয়া। এ ছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও বেশ গভীর। গত বছর দুই দেশের মধ্যে ৬৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। যার মধ্যে রাশিয়ার তেল ও অস্ত্রও রয়েছে। বাজপাই বলেছে, রাশিয়ার জ্বালানি ও অস্ত্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ভারত। কৌশলগত কারণে দুই দেশের সম্পর্ককে বরাবরই অগ্রধিকার দিচ্ছে দিল্লি। অন্যদিকে পাকিস্তানও মস্কোর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। বেইজিংয়ের সহায়তায় এ সম্পর্ক ২০১৭ সালের পর থেকে অনেকটা এগিয়েছে। ২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করাচি থেকে লাহোর পর্যন্ত একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। সম্প্রতি সময়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও আরও গাঢ়ো হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করেছে দুই দেশ। গত বছর রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই ওভারচুক বলেছিলেন, ব্রিকস ব্লকে পাকিস্তানকে সমর্থন দেবে রাশিয়া। 
এদিকে চীনা সমর্থনের ওপরই ভরসা করছে পাকিস্তান। ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে চীন। বিশেষ করে আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছে বেইজিং। এরপরেও বেইজিংও নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই বলে মনে করেন বাজপাই। বলেছেন, সম্প্রতি ইসলামাবাদকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সমরাস্ত্র দিয়েছে বেইজিং। বলা বাহুল্য যে, পাকিস্তানকে অস্ত্র দেয়া দেশের তালিকায় চীনের অবস্থান অনেক উপরে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিউটের তথ্যানুসারে,  ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান ৮১ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করেছে চীন থেকে। 
গত মাসে চীনের কাছে থেকে পিএল-১৫ সিরিজের উচ্চ গতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি জেএফ-১৭ নামের কয়েকটি যুদ্ধবিমানও নিয়েছে তারা। বাজপাই বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনের সম্পৃক্ততার পরিমাণ নির্ভর করবে  বৈরী সম্পর্কের মাত্রার উপর। তিনি আরও বলেন, যদি পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে বেইজিংয়ের কার্যকর ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা কম।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status