শেষের পাতা
ভারত জুড়ে সম্ভাব্য যুদ্ধ মোকাবিলায় আপৎকালীন মহড়া
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
৭ মে ২০২৫, বুধবার
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ঘন ঘন বৈঠক করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’-দু’বার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। মঙ্গলবারের এই বৈঠকের আগে সোমবার রাতে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের সব রাজ্যে আপৎকালীন প্রস্তুতি দেখে নেয়ার মহড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে সব রাজ্যের কাছে পাঠানো বার্তায় যুদ্ধ বাধলে নাগরিক ও প্রশাসনের কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তার মহড়া দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতেই এই মহড়া হবে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম এমন মহড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার (৭ই মে) এই মহড়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে দেশের সব জেলায় এই মহড়া চলবে। মহড়া চলবে গ্রামীণ এলাকাতেও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে যে বিষয়ে মহড়া দিতে বলেছে, তার মধ্যে রয়েছে, বিমান হামলার সময় সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কিনা, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে করণীয় কী এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো হবে। রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে সমস্ত আলো নিভিয়ে ক্র্যাশ ব্ল্যাক আউট করা যায় তারও মহড়া দিতে বলা হয়েছে। বাঙ্কার ও ট্রেঞ্চগুলোকেও পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহড়ায় অংশ নেবেন জেলা শাসক-সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরিক সুরক্ষা কর্মী ও হোমগার্ডরা। এ ছাড়াও মহড়ায় অংশ নিতে বলা হয়েছে এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।
উল্লেখ্য, রোববার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্টে সব আলো নিবিয়ে ‘ব্ল্যাকআউট ড্রিল’ করেছে সেনাবাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকেই এ নিয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, তারা যেন আলোকিত বা দূর থেকে চোখে পড়ে এমন কোনো বস্তু বা আলো ব্যবহার না করেন ওই সময়টুকু। সাধারণত যুদ্ধের সময় বিপক্ষের নজর এড়াতে বা বিপক্ষের বায়ুসেনাকে বিভ্রান্ত করতে বিস্তীর্ণ এলাকার আলো নিবিয়ে ‘ব্ল্যাকআউট’ করে দেয়া হয়। এমনিতেই গত ২২শে এপ্রিল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোববার রাতে ‘ব্ল্যাকআউট’ ড্রিলের পরে বাসিন্দারা স্বাভাবিক ভাবেই আরও সতর্ক হয়ে গিয়েছেন।
এদিকে, যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে রাখা বা লুকিয়ে রাখার জন্য রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে।
যুদ্ধের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর রাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের শীর্ষ কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে জাতীয় সুরক্ষা ও বিশেষ কৌশলগত রণনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার মোদি ফের আরেকবার জাতীয় উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পাঠকের মতামত
মোদির ভোটের রাজনৈতিক মহড়া!! ভারতের যুদ্ধে যাওয়ার অবস্থা নেই, তা মোদি ভালো করেই জানে।
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লাগলে, ভারতে মুসলমানদের উপর হিন্দুত্ববাদীরা ব্যাপক হামলা চালাতে পারে, তখন ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলমানরা যদি বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসে, তখন আমাদের প্রস্তুতি কি? এসব ভেবে সরকারের জুরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আমাদেরও এই ধরনের জনস্মপৃক্ত যুদ্ধ মহড়া চালানো উচিৎ ব্যাপকভাবে। সেইসাথে সক্ষম যুবক যুবতীদেরও সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া জুরুরি। আমরা যুদ্ধ চাইনা, কিন্তু চাপিয়ে দিলে আমরা ও তৈরি।