শেষের পাতা
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ ও পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি
৭ মে ২০২৫, বুধবার
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে নবম শ্রেণির দুই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলো- ফারিয়া জান্নাত ইরিনা (১৪) ও আদ্রিতা ইসলাম প্রিয়া (১৪) । এ ছাড়া হিমা আক্তার বর্ষা (১৫) নামে আরেক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরটেকী গ্রামে বজ্রপাতে দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া দুই ছাত্রীর মধ্যে ফারিয়া জান্নাত ইরিনা চরটেকী নামাপাড়ার ফকির বাড়ির জালাল উদ্দিনের মেয়ে ও আদ্রিতা ইসলাম প্রিয়া একই বাড়ির বাদল মিয়ার মেয়ে। এ ছাড়া আহত হিমা আক্তার বর্ষা একই গ্রামের মো. বোরহান উদ্দিনের মেয়ে। তিনজনই চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার বেলা ১টায় ৯ম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ছিল। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য তারা বাড়ি থেকে স্কুলে আসছিল। পথে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে বজ্রাঘাতে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইরিনা ও প্রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত বর্ষাকে কিশোরগঞ্জে রেফার্ড করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নূর-এ-আলম খান জানান, ইরিনা ও প্রিয়া এই দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় বর্ষা নামে আরেকজনকে আনা হয়েছে। তাকে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে চরটেকী নামাপাড়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিলাপ করছেন ইরিনার মা রোজিনা আক্তার। পাশেই ইরিনার চাচাতো বোন ঋতু বোনের স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করছেন। বাড়ি ঘিরে আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য মানুষের ভিড়। ইরিনা-প্রিয়ার সহপাঠীরাও তাদের বাড়িতে এসেছেন। প্রিয় সহপাঠীর অকাল মৃত্যুতে তারাও যেন শোকে স্তব্ধ। তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে ইরিনার মৃত্যুতে কষ্টে বিলাপ করে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন মা রোজিনা আক্তার। কান্না করছেন আর ইরিনাকে নাম ধরে ডাকছেন। আমার ইরিনা কই? ইরিনা কই? ইরিনার চাচাতো বোন ঋতু আক্তার আহাজারি করছেন আর বলছেন, ‘কতো স্বপ্ন ছিল আমার বোনের। পড়ালেখা করবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কতো কথা বলতো আমার লগে, আমি এখন কার লগে কথা বলমু।’
বজ্রপাতে নিহত প্রিয়ার বাড়িতেও একই চিত্র। আত্মীয়-স্বজনসহ হাজারো উৎসুক মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। কেউ সান্ত্ব্তনা দিচ্ছেন, কেউবা আবার শোক জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে বসে মেয়ের শোকে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন প্রিয়ার বাবা বাদল মিয়া। ২ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে প্রিয়া সবার ছোট। ছোট মেয়েকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাদল মিয়া। চোখে জল নিয়ে নির্বাক বসে রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদেক হোসেন বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। পুরো গ্রামজুড়ে শোক বইছে। একই গ্রামের পাশাপাশি দুই বাড়ির দুটি মেয়ে অকালে মারা গেল। একনজর দেখতে হাজারো মানুষ ছুটে আসছেন। সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন করার কথা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে যান। হাসপাতালে ইরিনা ও প্রিয়া এই দু’জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত বর্ষাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মারা যাওয়া দুই ছাত্রীর পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এদিকে একই সময় জেলার হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর বন্দে গরু আনতে গিয়ে কটু মিয়া (৪০) নামে এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি চমকপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালিবের ছেলে।