দেশ বিদেশ
দেশে থ্যালাসিমিয়া রোগী বাড়ছে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
স্টাফ রিপোর্টার:
৭ মে ২০২৫, বুধবারবাংলাদেশে থ্যালাসিমিয়া রোগী দিন দিন বাড়ছে। গত সাত বছরে রোগী বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসিমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে। দেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসিমিয়া আক্রান্ত রোগী রয়েছে। বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসিমিয়া রোগের বাহক। তাই সমাজে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনে বিশ্ব থ্যালাসিমিয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সভাপতি রাশেদ রাব্বি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রক্তরোগ, রক্ত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের রোগীর পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি জানান, ২০১৮ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭২৫ জন। ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৯৮ জন, ২০২০ সালে ৩ হাজার ৪১৬ জন, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৯৪১ জন, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৫৫ জন, ২০২৩ সালে ছিল ৭ হাজার ২২ জন এবং ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১১ জন থ্যালাসিমিয়া রোগী। প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসিমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ থ্যালাসিমিয়া রোগের বাহক। ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশে ৭ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ থ্যালাসিমিয়া রোগের বাহক ছিল। বিশ্ব থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসিমিয়া রোগী রয়েছে। একজন রোগীর পেছনে মাসে কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান জানান, সরকারি হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসা নেই বললেই চলে। তাই এই চিন্তা থেকেই থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রোগীদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেই ২০০২ সালের দিকে। এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, থ্যালাসিমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। মানবকোষে রক্ত তৈরি করার জন্য দুটি জিন থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্ত তৈরির একটি জিনে ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসিমিয়া বাহক বলে। আর দুটি জিনেই ত্রুটি থাকলে তাকে থ্যালাসিমিয়া রোগী বলে। সব বাহকই রোগী হন না। শিশু জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো- ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন রোগসংক্রমণ, শিশুর ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। আরও জানানো হয়, থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধযোগ্য। স্বামী-স্ত্রী দুজনই থ্যালাসিমিয়ার বাহক হলে তখনই সন্তানের এ রোগ হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনের একজন যদি বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে কখনো এ রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে হবু স্বামী বা স্ত্রী থ্যালাসিমিয়ার বাহক কিনা, তা সবারই জেনে নেয়া দরকার। এ জন্য বিয়ে নিবন্ধনের সময়ে থ্যালাসিমিয়া আছে কিনা, বিষয়টি দেখা যেতে পারে। বাহকদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করে সাইপ্রাস, ইতালি ও গ্রিসের মতো দেশ থ্যালাসিমিয়া রোগী প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেলে থ্যালাসিমিয়া রোগী সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন। এই রোগের চিকিৎসায় সরকারকে ভর্তুকি দেয়ার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে দেশে আগামী ৮ই মে বিশ্ব থ্যালাসিমিয়া দিবস পালন করা হবে। থ্যালাসিমিয়া রোগ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘থ্যালাসিমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন ও থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল যৌথ উদ্যোগে আগামী ১০ই মে একটি আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে।