দেশ বিদেশ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ মে ২০২৫, বুধবারভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনায় শুধু দু’টি দেশ নয়, বাংলাদেশ সহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে দেশের পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ পোশাক শিল্পের বেশ কিছু কাঁচামাল আসে ভারত থেকে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এমন এক সময়ে এই ঘটনা ঘটলো, যখন কয়েক দশকের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পর অর্থনীতির গতি কিছুটা কমে গেছে, কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। এমন সময় যুদ্ধ শুরু হওয়া মনে আশায় গুড়েবালি। দেশে অনেকগুলো কারখানা পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের ২৩০টি কারখানা এখন পরিবেশবান্ধব। বিশ্বের আর কোথাও এত পরিবেশবান্ধব কারখানা নেই। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
দেশের পোশাক খাতের নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় সীমান্তে কড়াকড়ি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমদানি-রপ্তানি। পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতি ব্যাহত হবে। এ ছাড়া আকাশ পথেও ব্যয় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। যুদ্ধ-বিগ্রহ চললে আশপাশের দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি পুরো দক্ষিণ এশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে আমাদের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যার প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুদ্ধ লাগলে যেমন সংশ্লিষ্ট দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি আশপাশের দেশগুলোকেও এর প্রভাব বহন করতে হয়। আমাদের মতো সীমান্তবর্তী দেশগুলোও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আমাদের সুতা, কাপড়সহ নানা কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের শিল্পখাতে। ফলে আমরাও নানা দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়বো। এ অবস্থায় তিনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে উত্তেজনা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আসার আহ্বান জানান তৈরি পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই দেশের যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক খবর না। এতে করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলো। তিনি বলেন, আকাশসীমা বন্ধ। এটা আশপাশের দেশে প্রভাব ফেলবে। আমরা ভারত থেকে আমদানি করি। যুদ্ধের সময় ভারত মজুত করবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে করে আমাদের দেশে নিত্যপণের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তাই দ্রুত দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ফিরে আসুক এই কামনা করি।
বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে পোশাক খাত এখন অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার নিয়ে অস্থির সময় পার করছে এই খাত। ফলে সব কিছুতে খরচ বেড়ে গেছে। এমন সময় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আরও সমস্যা বাড়িয়ে দিলো বলে মনে করেন তিনি। যুদ্ধ বন্ধ হোক, শান্তি ফিরে আসুক- এটা আমাদের প্রত্যাশা।
এদিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনায় দেশের শেয়ারবাজারেরও প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। এই আতঙ্কের কারণে বুধবার লেনদেনের শুরুতে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। বুধবার ঢাকা স্টক এঙচেঞ্জে ৯০ শতাংশের বেশি কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে চলমান যুদ্ধ এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। তবে আশা করছি, শিগগিরই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই সাবেক শিক্ষক।