দেশ বিদেশ
অবৈধ অভিবাসন ও পাচার বন্ধে ঐকমত্য
আরও বেশি বৈধকর্মী চায় ইতালি, ঢাকা আসতে পারেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবারসফররত ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের জানিয়েছেনÑ তার দেশ বৈধপথে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশ থেকে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার তাগিদও দেন তিনি। মাত্তেও সফরের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি জানান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সেপ্টেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী। সেই ঢাকা-রোম দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহ রয়েছে তাদের। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ইতালির মন্ত্রী বাংলাদেশিদের নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন, মানব পাচার মোকাবিলা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, ইতালিতে বাংলাদেশিদের অবস্থান অত্যন্ত সুসংহত। আমরা বাংলাদেশিদের প্রতি সত্যিই সন্তুষ্ট। কারণ তারা পরিশ্রমী। তাদের এবং আমাদের সমাজ সংস্কৃতি প্রায় একীভূত। তাই আমরা বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে আরও কর্মী নিতে চাই। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাংলাদেশ সফর বিষয়ে বলেন, আমি এখানে আসার অন্যতম কারণ হলো আপনাদের সঙ্গে এটা শেয়ার করা যে, অনেকেই ইতালিতে পৌঁছানোর জন্য অবৈধ পথ তালাশ করেন। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা চাই ইতালি যেতে আগ্রহীরা আইনি কাঠামো অনুসরণ করুক। সমুদ্রপথে অভিবাসীদের অনিয়ন্ত্রিত ইউরোপ যাত্রাকে নিরুৎসাহিত করে তিনি অবৈধ অভিবাসন এবং সংঘটিত অপরাধ নির্মূলে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা এ সংক্রান্ত সহযোগিতার একটি নতুন নীতি প্রস্তাব করতে এখানে এসেছি। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ অভিবাসন এবং মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ ইতালির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ইতালিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা স্বাগতিক দেশের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি ইতালিয়ানদের সদ্ভাবের বিষয়টিও নোটিশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু লোক আছে যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের ইতালি যেতে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। এরাই মূলত সমস্যাটি তৈরি করে। মানব পাচারে সুবিধাভোগী নয়, বরং অভিবাসীরা ভুক্তভোগী বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, এই সমস্যা মোকাবিলায় দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে আরও কর্মী নিতে আগ্রহী ইতালি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: এদিকে সোমবার বিকালে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) জানান, বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিতে ইতালির পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমিকরা খুব পরিশ্রমী ও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটি নতুন করে বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী। তবে অন্য দেশের ভিসা নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার প্রবণতাকে তারা সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ইতালি অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে এবং ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা খাতেও সহায়তা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে তারা। মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে যেসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালি গেছেন, তাদের যেন উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেয়া হয়, সে বিষয়েও দেশটিকে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতালির পুলিশ মাফিয়া চক্রসহ সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে পারদর্শী। সে জন্য তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে চায়। বৈঠকে আমরা পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে ইতালির সহায়তা কামনা করেছি। বৈঠকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ; অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধ নেটওয়ার্ক দমনে বাংলাদেশের গৃহীত নীতি ও কর্মপন্থা; অপরাধ দমন ও বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক অ্যাডভাইজার ম্যাক্রো ভিলানি ও ডেপুটি হেড অব কেবিনেট সাবিনা মাদারো, ইমিগ্রেশন ও বর্ডার পুলিশের সেন্ট্রাল ডিরেক্টর ক্লডিও গালজেরানো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।