দেশ বিদেশ
সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য
স্টাফ রিপোর্টার
(২ দিন আগে) ৫ মে ২০২৫, সোমবার, ১০:০৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে একটি কার্যকর জাতীয় নীতির প্রয়োজন। যাতে কেউ কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সক্ষমতা ও মনোভাব থাকা সত্ত্বেও কর্মবাজার থেকে বঞ্চিত না হয়।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় সংলাপে এই বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। আইএলও, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে উদ্যাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, আমরা একত্রিত হয়েছি সকল শ্রমিকের, বিশেষ করে যাদের কণ্ঠস্বর প্রায়শই অশ্রুত হয়েছে, তাদের ধৈর্য, আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার স্বীকার করার জন্য। বাংলাদেশ যখন জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ছে, তখন সকল নারী ও পুরুষের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা নারীদের ও পুরুষদের কথা শোনেন, যারা সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অর্ন্তভুক্ত হলেও তাদের কাজের জগতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং কর্মস্থলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় থেকে লিলি প্রু মারমা আদিবাসীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগের অভাব, ভৌগোলিক ও ভাষাগত বাধা তুলে ধরেন। তাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানান তিনি। এসময় অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, ‘বৈষম্য কাঠামোগত এবং অচেতনভাবে এখনও বিদ্যমান’। তাই তারা স্পষ্টভাবে নীতি এবং সংস্কৃতি ও মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
শ্রমিক প্রতিনিধি ও ন্যাশনাল কোঅরডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) এর চেয়ারম্যান বাদল খান বলেন, কার্যকর অন্তর্ভুক্তি কেবল মাত্র শ্রম অধিকারের ভিত্তিতেই অর্জন করা সম্ভব; এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার ভিত্তি হতে হবে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তাহমিদ আহমেদ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতির বাইরেও যেতে হবে। এটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির অংশ হতে হবে, যা সকল কর্মীকে মর্যাদা এবং সুরক্ষা প্রদান করে। আজ আমরা যে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো শুনেছি তা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আরও কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিউজ্জামান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার শুধু একটি উন্নয়ন লক্ষ্য নয়, এটি সবার জন্য মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। অন্তর্ভুক্তি কেবল ব্যক্তিদের উপকার করে না, এটি সমগ্র সম্প্রদায় ও অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।
নারী ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ঘর থেকে শুরু করে যাতায়াতের পথে এবং কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে নারীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির পথে মূল বাধা। তিনি বলেন, গণপরিবহন এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা একটি বড় সমস্যা। তিনি বলেন নারীদের কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা শক্তিশালী নীতি গ্রহণ ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি যৌন হয়রানি এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের উপর জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।