দেশ বিদেশ
পুলিশের সঙ্গে করলেন চিৎকার-চেঁচামেচি
পত্রিকায় প্রকাশিত টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আইনজীবীকে দিলেন হাজী সেলিম
স্টাফ রিপোর্টার
৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবারবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা মনির হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক এমপি হাজী সেলিমকে। গতকাল তিনি কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি তার আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথের হাতে বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছেন। এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজী সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিতর্কিত এই কাণ্ড করেন তিনি।
গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জাহাজের টেন্ডার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির কাগজ কেটে আদালতে নিয়ে এসেছিলেন হাজী সেলিম। এ বিষয়ে তার আইনজীবী প্রাণনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মক্কেল কারাগারে ডিভিশন পেয়েছেন। এজন্য তাকে পত্রিকা দেয়া হয়। তিনি পত্রিকা পড়তে গিয়ে জাহাজের টেন্ডার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান। যেহেতু তার জাহাজের ব্যবসা রয়েছে, সুতরাং এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিতেই পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে আসেন। পরে শাহবাগ থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হয়। এসময় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী উপস্থিত ছিলেন। শাহবাগ থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এজলাস থেকে হাজী সেলিমকে নামিয়ে হাজতখানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেও বাধে বিপত্তি। পুলিশের সঙ্গে ফের চিল্লাপাল্লায় লিপ্ত হন হাজী সেলিম। পরে শান্ত হলে ধীরে ধীরে এজলাস থেকে নামিয়ে হাজতখানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং দুই হাত পেছন দিক থেকে পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। চিৎকার চেঁচামেচির বিষয়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, হাজী সেলিমরা কখনো ভাবেননি, তাদের জীবনের এমন পরিণতি হবে। কারাগারে আসার আগেও হাজী সেলিম মঞ্চে নেচেছেন, চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন, কারাগারে আসার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ধমকাচ্ছেন, চিৎকার করছেন। এর আগে গত বছরের ২রা সেপ্টেম্বর রাতে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
এদিকে হাজী সেলিমকে কতোদিন কারাগারে থাকতে হবে সে বিষয়ে আইনজীবীর কাছে জানতে চান তিনি। ইশারায় আরও ১ বছর থাকতে হবে কিনাÑ জানতে চান। আইনজীবী প্রাণনাথ ইশারায় ২ মাস থাকতে হবে জানালে হাজী সেলিম হাসতে থাকেন। কোরবানির ঈদও কারাগারে কাটাতে হবে জানতে পেরে হাজী সেলিমকে কাঠগড়ার লোহার উপরে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গতকাল সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে হাজতখানা থেকে বের করার সময় তিনি বিমর্ষ ছিলেন। আদালতের নিচতলা থেকে দোতলায় নেয়ার সময় হাজী সেলিম বিরক্তি প্রকাশ করেন। কাঠগড়ায় নেয়ার পর পুলিশের একজন সদস্য হাজী সেলিমের হেলমেট খুলে দেন। এ সময় হাজী সেলিমের লম্বা সাদা চুল আর দাঁড়ি দেখা যায়।