প্রথম পাতা
‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ নিয়ে পাল্টাপাল্টি
মোহাম্মদ রায়হান
৪ মে ২০২৫, রবিবার
নাগরিক সমস্যা সমাধানে ও নগরবাসীর কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে ‘সবার ঢাকা’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অ্যাপটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছিল ৪ কোটি টাকা। অ্যাপটি দিয়ে সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছিল ডিএনসিসি। এ ছাড়া উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে নাগরিকরা দ্রুত তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন এবং সমাধান পাবেন। অ্যাপটি মেইন্টেন্যান্সের জন্য দেয়া হয়েছিল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানিকে (আইআইএফসি)। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপ উদ্বোধনের পর থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
তবে ডিনএনসিসি’র অভিযোগ, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি ডিএনসিসিকে অ্যাপটির মেইন্টেন্যান্সের স্বত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না। এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিয়েও ইতিবাচক সাড়া পায়নি ডিএনসিসি। বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ডিএনসিসি’র ‘সবার ঢাকা’ যে অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো। তবে ডিএনসিসি’র এমন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা চুক্তি বাতিলের পরপরই অ্যাপটি ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিয়েছে।
অ্যাপটি উদ্বোধন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, এ অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সম্পর্কিত যেকোনো অভিযোগ পাঠাতে পারবেন সিটি করপোরেশনকে। অভিযোগ পেয়ে গুগল ম্যাপে লোকেশন ট্র্যাক করে, একেবারে পিন পয়েন্ট করে, সেখানে গিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন করপোরেশন কর্মকর্তারা। চালু হওয়ার এক বছরের মাথায় স্মার্টফোনের প্লে-স্টোর থেকে প্রায় ৩০ হাজার বার সবার ঢাকা অ্যাপ ডাউনলোড ও রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়। এরমধ্যে ২৫ হাজার ৪৩৭টি সমস্যার কথা জানায় নাগরিকরা। সমস্যাগুলোর মধ্যে সমাধান হয় ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ ২৪ হাজার ৭২৫টি সমস্যা। এখনো এই অ্যাপ গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। নাগরিকদের যে কেউ নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন সেবা। তবে বিপত্তি হচ্ছে অ্যাপের পরিচালনা নিয়ে। ডিএনসিসি চাচ্ছে নতুন কিছু সেবা চালু করতে এ অ্যাপে। কিন্তু অ্যাপের মেইন্টেন্যান্সের দায়িত্ব নতুনভাবে হস্তান্তর করতে না পারায় সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, এই অ্যাপ এখনো চলমান আছে। অ্যাপের কাজ যারা সম্পন্ন করেছিল তারা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। কিন্তু আগে যতটুকু ডেভেলপ করা ছিল তা চলমান রয়েছে। আইআইএফসি এটা ডেভেলপ করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট অভিজ্ঞ লোকবল ছিল না এটা পরিচালনা করার। এখন নতুন প্রশাসক এই অ্যাপকে মোডিফাই করতে চাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে অ্যাপ আমরা নিতে চাইলে তারা অনেকটা গড়িমসি করছে। আমরা তাদের বারবার বলার পরেও তারা এক সপ্তাহ, দশ দিন করে পিছিয়ে নিচ্ছে। তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা তো আমাদের বুঝিয়ে দিবে। বুঝিয়ে দেয়ার পরে আমরা কাজটা তাদের দিতেও পারি অথবা অন্য পক্ষের মাধ্যমে কাজ করাতে পারি। তাদের দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। আমার ধারণা তারা মনে করছে তারা এটা কষ্ট করে ডেভেলপ করেছে, এখন অন্য একপক্ষ এটাকে নতুন করে চালাবে তারা এটা মানতে পারছে না। এ জন্য তারা দিতে চাচ্ছে না। কাজ শেষ এখন তাদের আমরা বলেছি এটা আমাদের বুঝিয়ে দেন। তাদের বলা হয়নি যে এটা মেইন্টেন্যান্সের জন্য জন্য বা ভবিষ্যতের আপনাদের সঙ্গে চুক্তি করা হবে এমন কিছু বলা হয়নি। কাজ শেষ এখন তারা এটা বুঝিয়ে দেয়া হলো যৌক্তিক। এ বিষয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানির অতিরিক্তি পরিচালক মুন্সী শহিদ আলম মানবজমিনকে বলেন, ডিএনসিসি’র সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে দুই বছর আগে। তাদের আমরা সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছি গত সপ্তাহে।