ঢাকা, ৩ মে ২০২৫, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

দুরবস্থায় ৬০০ বিজ্ঞানী

পিয়াস সরকার
৩ মে ২০২৫, শনিবার
mzamin

ক’দিন ধরেই উত্তাল বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক)। দু’মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারী-বিজ্ঞানীরা। ১১ দফা দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তারা। প্রায় ৬০০ বিজ্ঞানী ও ২৫০০ কর্মকর্তার অভিযোগ তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে খুব বাজেভাবে। করতে দেয়া হচ্ছে না স্বাধীন বিজ্ঞান চর্চা। ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ মেলার পরও মিলছে না অনুমতি। সভা-সেমিনারগুলোতে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আমলে নেয়া হচ্ছে না নিউক্লীয় তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা। যে সফটওয়্যারে তাদের তথ্য দিতে বলা হচ্ছে তা ভারতীয় একটি সফটওয়্যার। নিয়ন্ত্রণ করা হয় চেন্নাই থেকে।

বাপশক-এর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিজ্ঞানীরা জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকার পাশাপাশি প্রত্যেকের পরিবারের জীবন বৃত্তান্ত, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আয়-ব্যয়, আমদানি-রপ্তানি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি সব কিছু এই সফটওয়্যারে দিতে হয়। এই সফটওয়্যারটি নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে ভারতের চেন্নাই থেকে। বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে কোনো গোপনীয়তাই থাকবে না।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ পদগুলো শূন্য। বর্তমানে চেয়ারম্যান ও মাত্র একজন সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হলেও এখনো মন্ত্রণালয় ফ্যাসিস্টের দোসরমুক্ত হয়নি। পূর্ণ স্কলারশিপ থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা/প্রশিক্ষণের জন্য গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রদান করা হচ্ছে না। অভিযোগ গত কয়েক মাসে মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১২ জন কর্মকর্তা পরমাণু প্রযুক্তি বিষয়ক বৈদেশিক প্রশিক্ষণে মনোনয়ন নিয়েছেন। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নিউক্লিয়ার সিকিউরিটির ওপর একটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং কোর্সে কোনো বিজ্ঞানীকে না পাঠিয়ে পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারি মো. মইনুল ইসলাম তিতাসকে। ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর নিউক্লিয়ার সিকিউরিটির ওপর ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে যান ডেপুটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, অস্ট্রিয়ায় ইনসাইডার থ্রেট ইউজিং দি শাপারস থ্রিডি মডেলের ওপর কর্মশালায় যান সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফারজানা, সিডনিতে অনুষ্ঠিত সেইফ ট্রান্সপোর্ট অব রেডিওকেটিভ মেটেরিয়াল প্রোগ্রামে যান সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মো. সানোয়ার হোসেন।

ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েও যেতে পারেননি দেশের বাইরে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালের নির্দিষ্ট একটা কমিশন আইন আছে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে কমিশন কীভাবে চলবে সব বলা আছে। এখানে উচ্চশিক্ষাকে ট্রেনিং হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা ২০১০-এর আগে অনেক সহজ ছিল। আমি আমেরিকায় ফুল ব্রাইট ভিজিটিং স্কলার্স প্রোগ্রামে স্কলারশিপ পাই, যা সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা। রূপপুরে যে বর্জ্যগুলো উৎপন্ন হবে বা আমাদের এখানেও কিছু মেডিকেল নিউক্লিয়ার বর্জ্য বের হয়, এটার ডিসপোজালের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা প্রয়োজন। কমিশন থেকে খুবই উৎসাহ দেয়া হলো। দেশের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে এই স্কলারশিপটা আমি পেয়েছিলাম। ২০২৪ সালের কথা, কমিশন থেকে মন্ত্রণালয়ে জিও’র জন্য চিঠি পাঠালো। আমার পাসপোর্টে জে ওয়ান ভিসা লেগে গেছে, আমি কোথায় থাকবো, কার আওতায় কাজ করবো সেটাও ঠিক করা হয়েছে। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটিতে এই প্রোগ্রামটা ছিল। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আমার জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) নামঞ্জুর করা হলো।

তিনি বলেন, আমি সচিবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি বললেন সিদ্ধান্ত হয়েছে ওটা কিছু করা যাবে না। এরপর ফের পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করার পরও হলো না। জে ওয়ান ভিসা ছয় মাসের জন্য দেয়া হয়। আমাকে ছয় মাস পর অবশ্যই ফেরত আসতে হতো। সচিব বললেন, এত পড়াশুনা করে কী হবে? এই বিজ্ঞানী বলেন, দুইজন উপদেষ্টা ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, দেখেন এটা প্রেস্টিজিয়াস একটা প্রোগ্রাম। দুই দেশের সম্পর্কেরও বিষয়। তাও জিও দেয়া হয় নাই। ফুল ব্রাইট স্কলারশিপে চান্স পেয়ে যাননি- এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নাই। সরকারের এক টাকাও খরচ দিতে হতো না বরং রেমিট্যান্স নিয়ে আসতে পারতাম। আমি গত ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ রিট করেছিলাম। হাইকোর্টের রায় আমার পক্ষে আসলো। একটা রুলিং দেয়া হলো, কেন জিও দেয়া হবে না এবং ৭ দিনের মধ্যে জিও দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। এটা চিফ জাস্টিজ পর্যন্ত গিয়েছিল। চিফ জাস্টিজ বলেন, রুলিংয়ের উপর হেয়ারিং করে রায় দেয়ার জন্য। এরপর আবারো আমি আপিল করতে পারতাম কিন্তু করি নাই। কারণ সময় শেষ। যখন হাইকোর্টে ডিরেকশন দেয়া হয় তখন হাইকোর্ট থেকে মন্ত্রণালয়ে ফোন করা হয়েছিল। তারা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ বিষয়ে শোকজও করা হয়েছিল। সেটা আমার রায়েও লেখা আছে।

তিনি বলেন, আমরা কমিশনে আসি দেশকে সেবা দিতে। দেশি-বিদেশি একটা চক্র আছে যারা চায় না বাংলাদেশ বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক। রূপপুরে আমাদেরকে কোনো কাজে লাগানো হয় নাই। রাশিয়ানদের, ভারতের কাজে লাগানো হচ্ছে। আমি নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য সক্ষম। প্রয়োজনে তারা আমার মেধা যাচাই করুক। সেখানে যারা বাংলাদেশি কাজ করছে যারা তারা সব স্টাফ টাইপের লোক। মনে রাখতে হবে, রূপপুর কিন্তু চারটা পদ্মা সেতুর সমান টাকা। প্রশ্ন তো ওঠেই, রূপপুরে যে প্রকল্প করা হয়েছে এর থেকে ভারত-পাকিস্তান অর্ধেক টাকায় কীভাবে করলো?

ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ৫ই আগস্টের পর আমরা আশাবাদী ছিলাম পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে। কিন্তু উল্টো হয়েছে বরং সচিবালয়ের লোকদের মাধ্যমে জঘন্য আকার ধারণ করেছে। তারা চান আমরা যাতে ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। রূপপুর কিন্তু ১০০ বছরের প্রজেক্ট। এখানে নিজস্ব লোকবল না থাকলে, প্রযুক্তি না থাকলে অন্য স্থান থেকে নিয়ে আসতে হবে। ভারত এটাই চায়। রূপপুরে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রণালয় ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ই আগস্টের আগে তো এসোসিয়েশনের নির্বাচনও করতে দেয়া হয় নাই। বলেন, রুপপুর নিয়ে যদি কেউ আন্দোলন করে বা তোমরা কেউ করো বেথ দিয়া পিটায়া পিঠের ছাল উঠায়া দেবো এবং চাকরিচ্যুত করে বাড়িতে পাঠাবো।

আরেক ভুক্তভোগী ড. মো. সাইফুর রহমান বলেন, আমি ফুল ফান্ডেড জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস) ফেলোশিপ পাই। আমি বাংলাদেশে হাড় ও মাথার স্কাল (খুলি) নিয়ে কাজ করি। জাপানে আমার কাজ ছিল মানুষের দেহের একটা কোষ থেকে মাথার খুলির বিভিন্ন অংশ তৈরি করা। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে কিনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। আমার প্রোগ্রাম ছিল ২ বছরের। এরমধ্যে মেডিসিনের যারা নোবেল লরিয়েট ছিলেন তাদের সঙ্গে বৈঠকও ছিল।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে জিও’র জন্য ’২৪ সালের অক্টোবরে আবেদন করি। এরপর ডিসেম্বরে আবেদন করলেও দেয়া হয়নি। পোস্ট ডক্টরেট শুধু ডিগ্রি নয়। মন্ত্রণালয়ের লোকজনভাবে এটা বেনজির টাইপ ডিগ্রি। এটা একটা প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের উন্নতি হয়। বিশ্বব্যাপী কাজকে দেখানো যায়। ২০২২/২৩ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথে বাচ্চাদের মাথার খুলি ডেভেলপের বিষয়ে একটা সুযোগ ছিল পোস্ট ডক্টরেট করার। তখনো আমাকে যেতে দেয় নাই। তখন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বলা হয়েছিল লাইফ ক্রাশ করে দেবে, গোয়েন্দাদের দিয়ে ফ্যামিলিকে তুলে নেবো ইত্যাদি। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়ার পরও যেতে পারি নাই। তখন চেয়ারম্যান ছিলেন ড. অশোক কুমার পাল। তিনি বলেন, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ে কী হবে?

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এমনটাও বলে যে পোস্ট ডক্টরেট করা যাবে না। পরমাণু শক্তি কমিশন ১৯৮৫ (The Bangladesh Gazzete 1985, 15th August, BANGLADESH ATOMIC ENERGY COMMISSION) সার্ভিস রুলের ৮ নম্বর পাতায় উল্লেখ আছে  উচ্চতরশিক্ষা/ প্রশিক্ষণ- বিজ্ঞানীরা পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরেট করতে পারবেন যা প্রশিক্ষণ হিসাবে গণ্য হবে।

এই বিজ্ঞানী বলেন, এই বিজ্ঞানী বলেন, মন্ত্রণালয় বলে ডক্টরেট করেছেন নামের আগে ড. লেখার জন্য আমাদের অনুমতি নিতে হবে। এগুলো কিন্তু দেশের টাকার ফ্যাসিস্ট আমলের তথাকথিত পিএম বা বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ না যে, দেশের টাকায় বিদেশে গিয়ে মোজ মাস্তি করবো। বিগত সময়ে এক সচিব শুধু বলতেন, বিল্ডিং বানাও-যন্ত্রপাতি কেনো। মানে তার কথা শুধু রাজমিস্ত্রি হও। সব সময় বলছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবো, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। কিন্তু কোনো অর্থ ব্যয় করা হয় নাই, কোনো লক্ষ্য নিয়ে কাজও করা হয় নাই। পলিসিও নাই। এদের লক্ষ্য ছিল যন্ত্রপাতি কেনো। এটা কীভাবে চালায় এটা শেখার জন্য বিদেশে গিয়ে ঘুরে আসো।

সাইফুর রহমান বলেন, জাপানের স্কলারশিপ যখন দিল না তখন আমি মন্ত্রণালয়ে একজন এডিশনাল সেক্রেটারির কাছে গেলাম। অনেক কথার পর তিনি বলেন, আমরা রাজা, আপনারা প্রজা এটা মেনে নেন। এটা মেনে নিলেই সমস্যা শেষ। ৫ই আগস্টের আগে তো এসোসিয়েশনের নির্বাচনও করতে দেয়া হয় নাই। বলে, তোমরা এসোসিয়েশন করলে পিটায়া পিঠের ছাল উঠায়া দেবো। যাই হোক, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আবেদন না করে দেয়া হলো। কমিশন চেয়ারম্যান স্যার আবেদন করতে বললেন। এরমধ্যেই জাপানের ভিসা পেলাম, যে বাসায় থাকবো সেটা ঠিক হলো, ল্যাবের ফান্ডও প্রস্তুত হয়ে গেলো। কিন্তু পুনর্বিবেচনাতেও না করে দেয়া হলো। জাপান অ্যাম্বাসি থেকে ফোন দেয়া হলো স্কলারশিপ নেবো কিনা? আমি বারবার সময় বাড়ালাম কিন্তু যেতে পারলাম না। হাইকোর্টে গেলাম গত মার্চে। রিট করলাম। হাইকোর্ট আদেশ দিলেন, সাতদিনের মধ্যে জিও দিতে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে আপিল করা হলো। এই প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরে। এখনো প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আমার সুযোগ এখনো রয়েছে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) কার্যালয় আগারগাঁওয়ে। প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে একটি পোস্টার। যাতে লেখা- ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র সিনিয়র সচিব খুনি হাসিনার সুরক্ষা সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোকাব্বির হোসেনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণ চাই।’ এসব অভিযোগ ও দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, তথ্য পাচারের কোনো বিষয় না। তাদের মূল দাবি তারা আইবাসে যুক্ত হতে চান না। এটা সরকারের ইস্যু। অর্থ বিভাগ যখন দুই বছর ধরে সময় দিচ্ছে তারা অক্টোবরে না করেন। তারা সময় বাড়িয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিলেন। আমরা দেখলাম ১৩ শতাংশের জন্য সমস্যা হবে। আমরা বললাম, এটা কেস টু কেস সমাধান করে দেবো কিন্তু তারা রাজি হলেন না। ওনাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আইবাসে বেতন না নেয়া। তাদের কিছু লোকবল নিয়োগ আছে তারা অনুমোদনবিহীন। আইবাসে ঢুকতে গেলে ওনারা আটকে যাবেন।

উচ্চশিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ড. মুনিরুজ্জামান পোস্ট ডক্টরেট স্কলারশিপ পেয়েছেন। উচ্চশিক্ষা হচ্ছে পিএইচডি পর্যন্ত। এটা কোনো উচ্চশিক্ষা নয়, এটা চাকরি। এটা কোনো সেমিনার না ওয়ার্কশপও না। ফলে ওনারটা নামঞ্জুর করা হয়েছে। উনি আদালতে গিয়েছিলেন। মহামান্য আদালত ফুল বেঞ্চে এটা না করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ওনারা স্বায়ত্তশাসন চান। ২০১৭ সালের আইন অনুযায়ী ওনারা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। স্বায়ত্তশাসন দেয়া আমাদের এখতিয়ার না।

রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের বিষয়ে বলেন, রাশিয়ান টেকনোলজি ও নির্দেশনায় প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে। কোথায় কোন লোক কী করবে, সব রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। মন্ত্রণালয়ের এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। আমরা ১৯০০’র বেশি লোক নিয়োগ দিয়েছি। ওনাদের একদল ফেস বাই ফেস কাজ করেছে। এখানে গবেষণার কোনো সুযোগ নাই। পাওয়ার প্লান্টে যে নিয়োগ, সেটা গত সাত বছরে হয়েছে। ওনাদের দাবি বায়ারদের বাদ দিয়ে ওনারা বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি করবেন পিডিবি’র সঙ্গে। নিউক্লিয়ার পাওয়ারের আইন বলা হয়েছে, রূপপুরের প্রথম পিডি হবেন কোম্পানির এমডি। তাহলে পাওয়ার বিক্রির চুক্তি করবে কীভাবে? কোম্পানি আইনেই তো রেজিস্ট্রার্ড হয়েছে। কোম্পানি করাই হয়েছে ব্যবসার জন্য। সেই অনুযায়ী কোম্পানিকে বলা হয়েছে তোমরা পিডিবি’র সঙ্গে সেল পারসেস এগ্রিমেন্ট করো।

কমিশনের বিষয়ে বলেন, এখানে কমিশনের মেম্বার পদ খালি। তাদের মধ্যে কিছু জটিলতা ছিল। ওনারা গুছিয়ে দেয়ার পরই এসএসবি’তে পাঠাই। এটা তো এসএসবি’র এখতিয়ার, আমার না। আমরা ১৮২ জন নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছি। ওনারা নিয়োগ করেন নাই। সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন। আমাদের ২২টি ইনমাস (ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস) পরে রয়েছে। এখানে যে জনবল সৃজন হয়েছে, একজন লোকও নিয়োগ দেন নাই। আমি বারবার চিঠি দিয়েছি, মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্র পড়ে আছে। এটার কারণ হচ্ছে নিয়োগ যদি আগে হয়ে যায় ওনারা জুনিয়র হয়ে যাবেন।

অস্থায়ী পদ স্থায়ীকরণের বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ওনাদের তো প্রস্তাব দিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ওনারা তো রিসার্চ প্রজেক্ট নেন। উদাহরণ হিসেবে বলেন, চিটাগংয়ে ১ কোটি ২ লাখ টাকার ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করবেন। ওনারা ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার পর দুই কিস্তিতে কাজ হওয়ার প্রেক্ষিতে ৭৬ লাখ টাকা দেয়া হয়। ওনারা বলেন, এটা বাদ দিয়ে অন্য একটা করবো। অডিটে আসছে ওনারা একটা কাজও করেন নাই। যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে, এই টাকা দিয়ে ভিন্ন কাজের সুযোগ তো দিতে পারি না।

বিভিন্ন সেমিনারে মন্ত্রণালয়ের লোকজন যায়। এই বিষয়ে বলেন, আইইএফ (ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ফোরাম) যে সেমিনার ডাকে কিছু সেমিনার হয় বিজ্ঞানীদের জন্য, কিছু ম্যানেজমেন্টের জন্য। তারা তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন- আইন, লেজিসলেটিভ ও পলিসি রিলেটেড। এটা বিজ্ঞানীদের ট্রেনিং না। আমরা আগে নিউক্লিয়ার ইউজার কান্ট্রি ছিলাম না। আমি আগস্টে যোগদানের পর ১৬৮টি জিও দেয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। কিছু বাদে সব দিয়ে দিয়েছি। দাবির বিষয়ে বলেন, সরকারের সঙ্গে কথা বলবো আমরা এটা পুরোই ছেড়েই দিতে চাই। সরকার স্বায়ত্তশাসন দিতে চাইলে আমার কোনো সমস্যা নাই। তারা অনেক জ্ঞানী মানুষ, দেশের অগ্রগতির জন্য তাদের প্রয়োজন রয়েছে।

পাঠকের মতামত

মানবিক বিভাগ থেকে পাস করে ক্ষমতা পেলে যা হয় আরকি।পরিবারতন্ত্র ভিত্তিক রাজনীতি করার মতো মানসিকতা থেকে এই অবস্থা।দেখেছিস আমার ক্ষমতা কতো! নিজের নাক কেটে পরের যত্রা ভংগ করতে ওস্তাদ একেকজন।তাতে দেশের যা হয় হোক।বউয়ের কাছে নি:চয় রসিয়ে রসিয়ে ক্ষমতা দেখানোর গল্প বলা হয়েছে ও হয়,না হলে আবার কিসের আমলা।পজেটিভ কোন কাজে এদের মাথা মগজ কাজ করে?আর করবেই বা কি মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে আর কতটা আগানো যায়। মাথা গরম হয়ে পড়ে।মাথার সার্কিট এলোমেলো হয়ে যায়,ফলে মাথা নেগেটিভ ফলাফল দিতে থাকে।দেশে এতো CSE তে ডিগ্রীধারি আছে যে,এ সমস্ত বিজ্ঞানীদের সহায়তায় বিষয় ভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু ওইযে নীতিনির্ধারণীর চেয়ারগুলো বেদখলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৮:০৮ অপরাহ্ন

উচ্চশিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ড. মুনিরুজ্জামান পোস্ট ডক্টরেট স্কলারশিপ পেয়েছেন। উচ্চশিক্ষা হচ্ছে পিএইচডি পর্যন্ত। এটা কোনো উচ্চশিক্ষা নয়, এটা চাকরি। এটা কোনো সেমিনার না ওয়ার্কশপও না। ফলে ওনারটা নামঞ্জুর করা হয়েছে। উনি আদালতে গিয়েছিলেন। মহামান্য আদালত ফুল বেঞ্চে এটা না করে দিয়েছেন। ................ সচিব চরম মিত্থা চার করেছেন এখানে। উনার আবেদনে কোথাও পোস্টডক লেখা ছিল না, ছিল ৬ মাসের ফেলো শিপ। How to deal with such a abject kind bitch.

Sumon
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৭:০৯ অপরাহ্ন

Can you imagine ?? ''এই সফটওয়্যারটি নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে ভারতের চেন্নাই থেকে। বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে কোনো গোপনীয়তাই থাকবে না।''

Nafiz
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৪:৫১ অপরাহ্ন

এদেশে এভাবে বিজ্ঞান এগুতে পারবে না। হয় সবার জন্য একই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন নতুবা সিঙ্গাপুরের মত বিজ্ঞানের ছাত্র ও চাকুরীজীবীকে "বিশেষ" ক্যাটেগরি ঘোষণা দিয়ে আলাদা বেতন কাঠামো ও নিয়মনীতি চালু করুন। অন্যথায়; কেউ কেউ ডাবল "এসএসসি" পাশ (বিসিএস রা) দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে নিজেদের "রাজা" ভাবতে শুরু করবে।

rasu
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

আমাদের হৃদয় এতো ছোট তার কিছু নমুনা। সারা জীবন অন্যের গোলাম হয়ে থাকতে চাই।মেধাকে কেউ মূল্যয়ন করে না। আহারে বাংলাদেশ কবে এটার উন্নতি হবে!!!

Md.Mahadi Hassan
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status