ঢাকা, ৩ মে ২০২৫, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

শিল্পায়ন নীতি নিয়ে উদ্বেগ

এম এম মাসুদ
৩ মে ২০২৫, শনিবার

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শিল্পায়নবান্ধব নীতির বদলে উল্টো নেয়ায় উদ্বিগ্ন উদ্যোক্তারা। উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে দেশীয় কসমেটিকস শিল্পে নীতি সহায়তার পরিবর্তে স্থানীয় উৎপাদনে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে আমদানিকারকরা কসমেটিকস ফিনিশড গুডস হিসেবে পণ্য আমদানি করলেও নীতিমালার ফাঁক গলে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন। এতে করে ছিটকে পড়ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। এতে বিনিয়োগ হারানোর সঙ্গে খাত সংশ্লিষ্টদের সম্ভাবনার কর্মসংস্থানে অশনি সংকেত দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কোনো মহলের ভূমিকা দেশীয় শিল্পবিরোধী। যার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবল অসম প্রতিযোগিতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের মতে, কোনো কোনো মহলের শিল্পায়নবিরোধী মনোভাব কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকারের যে অগ্রাধিকার নীতি রয়েছে তার পরিপন্থি।

কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সম্প্রতি তথ্য মতে, একটি প্রতিষ্ঠান ফ্লোরমার ব্র্যান্ডের কসমেটিকস আইলাইনার আমদানি করার সময় ওজনের ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ৪.৮০ গ্রাম। কিন্তু আদতে ওই পণ্যটি মোড়ক ও কন্টেইনারসহ ওজন প্রায় ১০ গ্রাম। সব ধরনের ব্যয় দেখানোর পর পণ্যটির আমদানি খরচ পড়েছে ৪.৩১ টাকা। কিন্তু এই পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা। অপরদিকে স্থানীয় উৎপাদকদের একই হারে ব্যয় করে কাঁচামাল আমদানি করে ফিনিসশ গুডসের ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানি পণ্যের তুলনায় স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জে পড়ছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র কালার কসমেটিকস খাতে চলতি বছরে আমদানি প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার। উল্লেখ্য, প্রায় সব আমদানিকারকরাই আন্ডার ইনভয়েস এবং ওজনে ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করেন। তাই প্রকৃতপক্ষে টাকার অঙ্কে হওয়ার কথা ন্যূনতম ১৬শ’ কোটি টাকা। সে হিসাবে শুধুমাত্র আমদানিতেই ফাঁকি হচ্ছে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা।

এনবিআরের দেয়া আদেশ অনুযায়ী, আমদানি পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের জন্য কসমেটিকসের ক্ষেত্রে মোড়কের ওজনভিত্তিক মূল্য প্রধান আমদানি পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নিরুপণ করতে হবে। কিন্তু কাজল, লিপস্টিক, লিপজেল বা আইলাইনারের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র ভেতরের লিকুইডের ওজন অনুযায়ী শুল্ক পরিশোধ করছে। অথচ বাজারে বিদেশি কোনো পণ্য ৫শ’ টাকার নিচে নেই। তাই দেখা যাচ্ছে, আন্ডার ইনভয়েস দেখিয়ে আমদানি করলেও ব্যবসা করছে ৯৯%। যেমন; তুরস্ক থেকে একটি আইলাইনার আমদানিতে নিট ওজন পিসপ্রতি ঘোষণা দিচ্ছে ০.০০১২০ গ্রাম। যার শুল্ক, ইন্স্যুরেন্স, ল্যান্ডিং, পরিবহনসহ সর্বমোট খরচ হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৪ টাকা মাত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একটি আইলাইনারের ওজন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্রাম। সে অনুযায়ী শুল্ক দিলে অনেক বেশি পাওয়ার কথা। কিন্তু এই আইলাইনারের বাজারমূল্য কমপক্ষে সাড়ে ৫শ’ টাকা রাখা হচ্ছে। এসব কারণে বড় শুল্ক ফাঁকিতে পড়ছে দেশ। তাছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারা এসব আমদানিকারকদের মোকাবিলায় দামের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। 

এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন এসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) জেনারেল সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন বলেন, এই খাতে এখনই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। শুধুমাত্র সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পের আকার ও ব্যাপকতা আটকে আছে। আমদানি বিকল্প দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। কর্মসংস্থান ছাড়াও উপরন্তু, রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। তাই নীতিনির্ধারণে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা। তিনি বলেন, স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরি। 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও এনবিইআর’র চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, সরকারের পক্ষে দেশীয় এসব পণ্য জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সম্পূরক ভ্যাট, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে বলা যায় এ খাতে অন্যতম বাধা। 
বাংলাদেশে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার সামগ্রীর বার্ষিক বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই খাত দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হলেও আমদানিনির্ভর বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশি কোম্পানির পণ্যগুলো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে।
দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status