ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

‘বর্তমান সংকট রোগের উপসর্গ মাত্র’

স্টাফ রিপোর্টার
১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
mzamin

শুধুমাত্র বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির বর্তমান চাপ তৈরি হয়নি। মূলত আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে   করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার মতে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে দরিদ্র সরকার গত ১০ বছরে নিজের আর্থিক সংস্থান নিশ্চিত করেনি, যার অনিবার্য পরিণতি ভোগ করছে দেশ। যে কারণেই অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলা হোক না কেন, ২০২৪ শেষ হওয়ার আগে এই দুর্যোগ কাটবে না। বর্তমান সংকট রোগের একটি উপসর্গ মাত্র। আসল রোগ হলো বাংলাদেশের আর্থিক খাতের যথাযথ সংস্কার হয়নি। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে। আর্থিক খাতের অযত্নের কারণে এগুতে পারছি না। বৃহস্পতিবার সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত এ আলাপচারিতার শিরোনাম ছিল ‘বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় একটি উত্তরণকালীন নীতি সমঝোতা খসড়া’।

বিজ্ঞাপন
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে আগামীতে রাজনৈতিক টানাপড়েন যাই-ই থাকুক না কেন অর্থনীতি তা থেকে মুক্ত থাকবে। অংশগ্রহণমূলক নীতি সমঝোতার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে, সরকারের রাজনৈতিক সহযোগী, সুশীল সমাজ, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞসহ নানা পর্যায়ে আলোচনা করে দুই থেকে তিন বছরের একটি স্বল্প মেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করা জরুরি।

 সরকারের এই মুহূর্তে তিনটি বিষয় করণীয় উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারকে প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। দ্বিতীয়ত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে উৎসাহ দেয়া এবং তৃতীয়ত, অসুবিধাগ্রস্ত মানুষকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ৬টি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছিলেন।  অর্থবছরের শুরুর দুই মাসের মধ্যে এর চারটি আরও তীব্র হয়েছে। বাজেটের পর অর্থনীতি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। অনেকে বলছেন- বৈশ্বিক কারণে এই পরিস্থিতি। আমি তাদের সঙ্গে আংশিক একমত হয়ে বলছি, শুধু বৈশ্বিক কারণে বললে এক ধরনের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দেয়া হবে। অর্থনীতির মূল ফুসফুস হলো আর্থিক খাত। বর্তমানে যে আর্থিক কাঠামো এবং সরকারের খরচ করার যে সক্ষমতা তা উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে সমর্থন দেয়ার মতো নয়। সরকার এখন আর্থিক সম্পদ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে। অথচ সরকারের আর্থিক সামর্থ্য থাকলে জ্বালানি তেলের এত উচ্চ হারে দর বাড়িয়ে মানুষকে কষ্টে ফেলতে হতো না। 

ভর্তুকি কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সার, বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসে ভর্তুকি দরকার। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সেটা খারাপ ভর্তুকি। জ্বালানি তেলের ভর্তুকি কমিয়ে বড় অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া ভুল পদক্ষেপ। দেবপ্রিয় বলেন, ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে শুধু তা দিয়ে পুরো পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করা যাবে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। বৈশ্বিক পরিস্থিতি সব দেশকে আঘাত করেছে। কিন্তু অনেকেই এই পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারছে। আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এখন যদি আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশ থাকতো তাহলে বর্তমানের এত চাপ তৈরি হতো না। বর্তমান সংকটে শ্রমিক শ্রেণিকে সুরক্ষা দেয়ার পরামর্শ দিয়ে  সিপিডি’র এই বিশেষ ফেলো বলেন, এই মুহূর্তে একটি জাতীয় মজুরি কমিশন গঠনের সময় হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের এখন মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া উচিত। বেশি বিনিময় হারের সুবিধা পাচ্ছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। তাই এর একটি অংশ পোশাক শ্রমিকদের পাওয়া উচিত। কারণ, বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 নীতিনির্ধারকরা ক্ষুণ্ন মনে স্বীকার করছেন যে, অর্থনীতি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকেরা অপরিপক্ব ও বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন। তারা বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলছেন। কেউ বলছেন, দুই মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঠিক হয়ে যাবে, কেউ বলছেন, ২০২৪ সালের আগে ঠিক হবে না। কেউ বলছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেবে না, কেউ বলছেন নেবে। এসব কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, নীতি প্রণয়নের মধ্যে রাজনীতিবিদেরা নেই, আমলানির্ভর নীতি প্রণয়ন হচ্ছে। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পূর্বশত হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেউ যদি বলেন, আইএমএফের শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মানে, দেশ নীতি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কোনো সরকারের জন্য এটি সম্মানজনক নয়। তবে এই ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রাক-পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই সময়ে তিনি বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপের উদাহরণ দেন। তিনি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে অনভিপ্রেত ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status