ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

কানাইঘাটে পুলিশের প্রকাশ্য চাঁদাবাজির ঘটনায় তোলপাড়

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

প্রকাশ্য চাঁদাবাজির ঘটনায় কনস্টেবল নারায়ণ প্রত্যাহার হওয়ার পর ওসি আব্দুল আউয়ালকে ঘিরে চলছে নানা নাটকীয়তা অভিযোগ উঠেছে- ওসি নিজেই মঞ্চস্থ করছেন নাটক। আর এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কানাইঘাট। ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দুপুরে। চার বছর আগে জব্দ করা কানাইঘাটের লোভাছড়া কোয়ারির প্রায় ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর গত জানুয়ারি মাসে অকশনে দেয় জেলা প্রশাসন। আর এই অকশনে অংশ নিয়ে সিলেটের পিয়াস এন্টারপ্রাইজ প্রায় ২২ কোটি টাকা মূল্যে ইজারা নেয়। তবে এখনো পাথর সমঝে পায়নি পিয়াস এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে গেল কয়েক মাস ধরে লোভাছড়া পাথর চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি তারা একাধিকবার ওসি আউয়ালকে অবগত করেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ইজারাদার পক্ষ থেকে টাকা জমা দেয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তারা কার্যাদেশও পেয়ে যাবেন। এই অবস্থায় শনিবার পিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তুহিন আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জাবেদ, বর্তমান মেম্বার ময়নুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মাছুম আহমদ, জয়নাল আবেদীন, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন সহ কয়েকজন লোভাছড়ার পাথর পরিদর্শন করতে যান। লোভাছড়া পৌঁছে তারা দেখেন এক ব্যক্তি নৌকা থেকে চাঁদা তুলে পাথর চুরি করাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তারা ক্ষুব্ধ হন। হাতেনাতে ধরে ফেলেন ওই ব্যক্তিকে। আটকের পর ওই ব্যক্তি জানায়, সে কানাইঘাট থানার কনস্টেবল নারায়ণ। ওসি আউয়ালের নির্দেশে সে ওই এলাকায় চুরি হওয়া পাথর থেকে চাঁদাবাজি করে। ঘটনাটির দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়। 

উপস্থিত লোকজন তাৎক্ষণিক বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করলে সেটি ভাইরাল হয়। আটক ব্যক্তি পুলিশ কি না সেটি নিশ্চিত হতে পিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তুহিন আহমদ তাৎক্ষণিক কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়ালকে ফোন দেন। কিন্তু ওসি তার ফোন রিসিভ করেননি। পরে ইজারাদার সহ উপস্থিত ব্যবসায়ীরা নারায়ণকে আটক করে সিলেট ডিআইজি’র অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এদিকে, সিলেট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর ইজারাদার সহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আটক নারায়ণকে নিয়ে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিষয়টি সমাধানের জন্য গোলাপগঞ্জ থানায় বৈঠকে বসেন।  বৈঠকে সব শুনে আটক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে তাকে সমঝে নেন। সন্ধ্যায় কনস্টেবল নারায়ণকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কানাইঘাট থানায়। চাঁদাবাজির ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় রাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত কনস্টেবল নারায়ণকে কানাইঘাট থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ইজারাদারের পার্টনার মাছুম আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আটক কনস্টেবলের মুখ থেকে জানা গেছে ওসির নির্দেশেই সে ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করছিল। গেল কয়েক মাসে ওই এলাকা থেকে অর্ধ কোটি টাকার পাথর লোপাট করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ওসি নিজের দোষ আড়াল করে তার অপরাধের সহযোগী কয়েকজন চোরাকারবারিকে থানায় ডেকে এনে রাতে বিক্ষোভ করায়। এবং পুলিশ সদস্যকে হেনস্তা করা হয়েছে প্রচার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর কানাইঘাটে আসেন ওসি আব্দুল আউয়াল। প্রথমে তিনি কয়েকটি জলমহাল নিয়ে বিবদমান পক্ষের এক পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করেন। এ নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে এলাকায়। হরিপুরের চোরাই রাজ্য পতনের পর কানাইঘাট এখন হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিদের অন্যতম কেন্দ্র। প্রতিদিন কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে গরু, মহিষ সহ ভারতীয় প্রায় কোটি টাকার পণ্য পাচার হচ্ছে। আর ওই পণ্য থেকে প্রতিদিন ওসি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছেন। তালিকাভুক্ত হরিপুরের অনেক চিহ্নিত চোরাকারবারি বর্তমানে কানাইঘাটে অবস্থান নিয়েছেন। কানাইঘাট হয়ে তারা তাদের চোরাই ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।

 এ নিয়ে সম্প্রতি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ওসি গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, শনিবার পুলিশ সদস্য আটকের সময় তার একটি পুলিশ দল ওই এলাকায় ছিল। ঘটনাকারী পুলিশ সদস্য অন ডিউটিতে ছিল। চাঁদাবাজির ঘটনাটি সত্য কি না সেটি ঊর্ধ্বতনরা খতিয়ে দেখছেন। তবে বিষয়টি প্রকাশ হওয়া মাত্র কনস্টেবল নারায়ণকে প্রত্যাহার করে সিলেট পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত হবে। এরপর সত্য-মিথ্যা বের হবে। তবে তার পক্ষ থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার মতো ঘটনা ইন্ধন দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টিকে আইনিভাবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রোববার রাতে কানাইঘাট পৌর বিএনপি’র সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশ কনস্টেবল চাঁদাবাজি করলে তার ঊর্ধ্বতনরা রয়েছেন। তার বিচার হবে। কিন্তু তাকে হেনস্তা করায় প্রতীয়মান হয় বিষয়টি পরিকল্পিত। ইজারাদার পক্ষের লোকজন জানিয়েছেন, কম মূল্যে পাথর ইজারা নিতে না পেরে অনেকেই এখন পিয়াস এন্টারপ্রাইজের বিরোধিতায় নেমেছেন। তারা বিষয়টিকে বিতর্কিত করতে ইতিমধ্যে ওসির নির্দেশে কানাইঘাটের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন। শনিবার রাতে ওসির সঙ্গে তারা থানার বাইরে এসে সাংবাদিকদের ডেকে এনে বক্তব্য দেন। এ নিয়ে কানাইঘাটের পাথর ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারাও ওসির অপসারণ দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

পাঠকের মতামত

এরা হারামের টাকা খায় কি ভাবে ?

আমি বাবন ;)
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status