বাংলারজমিন
চট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে মতবিনিময়
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবারচট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে মতবিনিময় সভা করেছে আইনজীবী ও সাংবাদিকরা। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, কাস্টমসসহ অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাজার হাজার কোম্পানি, শিল্প কারখানা, সরকারের রাজস্ব আয়, বিচারপ্রার্থীদের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানালেও ঢাকার বিরোধিতায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করা সাংঘর্ষিক, তবে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির বিশেষ বিবেচনার ওপর চলমান সংস্কারের প্রেক্ষিতে তারা আস্থা রাখতে চান।
গতকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এতে আইনজীবী ছাড়াও সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাইকোর্ট বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট এস এম বদরুল আনোয়ার। এতে বলা হয়, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা। সম্প্রতি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছেন মাননীয় বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। এজন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি জনগণের বাংলাদেশে বিচারিক সেবা দিচ্ছেন মাত্র ২ হাজার জন বিচারক। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানসহ বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান তথা ৭২ এর সংবিধানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনুচ্ছেদ- ১০০ সংযোজন করে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিধান রাখা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ সময় এডভোকেট কাশেম কামাল বলেন, বর্তমানে নতুন বাংলাদেশ পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে জোরালোভাবে বেঞ্চ স্থাপনের দাবিটিকে আমরা পুনরায় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা এবং অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সুবিবেচনার জন্য পেশ করতে চাই। এটি জনগণের স্বার্থে করা উচিত। আইনজীবীরা বলেন, ২০১৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরে এসে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের ঘোষণা দেন। চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী আজ জনস্বার্থ সম্বলিত তীব্র আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। নৈতিকভাবে রাজনৈতিক ও আইনজীবীর নেতৃবৃন্দও এই দাবি মেনে নিয়েছেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ঢাকার বাহিরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে আলোচনা হয়েছে। এরপরও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তারা বলেন, অথচ এর বহুবিধ সুবিধা জনগণ পেতো। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় যাতায়াতের দুর্বিষহ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতো। যানজটের শহর ঢাকা। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিচারের জন্য ঢাকায় যেতে মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন। হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। সেইসঙ্গে জীবনের ঝুঁকি তো আছেই। স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় আইন আদালতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। সেখানে বিচার পেতে সার্কিট বেঞ্চ থেকে অন্তত তিনগুণ ব্যয় করতে হয়। সুপ্রিম কোর্টে এখন পাহাড়সম মামলার জট দেখা দিয়েছে। বিচারক স্বল্পতার কারণে এবং বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও বিলম্বিত বিচারের বিষয়ে অতিসম্প্রতি প্রধান বিচারপতি স্বয়ং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঢাকা কেন্দ্রিক পরিবহন ও হোটেল মালিকদের কায়েমি স্বার্থ এবং নানারকম অদৃশ্যমান স্বার্থের দ্বন্দ্বও প্রধান বৈষয়িক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।