ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

গুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ নিয়ে দিনভর তুলকালাম

স্টাফ রিপোর্টার
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
mzamin

রাজধানীর গুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকরা। গুলশান ও আশপাশের এলাকায় তারা বিক্ষোভ করেন। এ সময় চালকরা বেশ কয়েকটি প্যাডেল রিকশা ভাঙচুর করে। বিক্ষোভকারী চালকদের অভিযোগ, গুলশান সোসাইটি রিকশা চলাচল সীমিত করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে। যেখানে ২০ হাজার টাকার প্যাডেল রিকশা কয়েকগুণ বেশি দামে রাস্তায় নামানো হচ্ছে। এতে কিছু মানুষের জীবিকার পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা গুলশান, বাড্ডা, নদ্দা ইত্যাদি এলাকায় রিকশা চালিয়ে আয় করি। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা হলে গুলশানে অন্য কোনো রিকশাও চালাতে দেয়া হবে না। বিক্ষোভে আসা মঞ্জু  নামের এক রিকশাচালক  বলেন, অন্য রিকশা চললে এখানে ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলতে দিতে হবে। এই রিকশা চলাচলের দাবি নিয়ে আজ আমরা মিছিল বের করেছি। গুলশান সোসাইটির সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। 

গুলশান-বাড্ডা লিংকরোডে গুলশান চেকপোস্টে দায়িত্বরত গুলশান থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, গুলশানের প্রবেশপথ থেকে এদিকে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা আসলেই ঘুরিয়ে দিচ্ছি। সোসাইটির ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। এখন পর্যন্ত আমি ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা দেখিনি। হয়তো কিছু কিছু দেখা যায়, ভেতরের রাস্তায় কারণ একসঙ্গে হয়তো সব বন্ধ করা সম্ভব না   
গতকাল সরজমিন গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল একদমই বন্ধ ছিল। বেলা গড়াতে কিছুটা সচল হয় রিকশাগুলো। প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলতে দেখা গেছে। প্যাডেলচালিত রিকশার চালক, পুলিশ ও ব্যাটারিচালিত কিছু রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তায় প্যাডেলচালিত রিকশার পাশাপাশি কিছু কিছু ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলছে এবং তা খুবই কম। ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বেরিয়ে পড়েন রিকশা নিয়ে। ফুল কুমার নামে প্যাডেলচালিত রিকশাওয়ালা বলেন, বৃহস্পতিবার মাইকে জানিয়ে দিয়েছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ। ঘোষণার পরে মাঝেমধ্যে দু-একটা যাচ্ছে। বলা যায় আগে ১০০টা চললে এখন ৫টা চলছে। গুলশান মহাখালী লিংরোডের আরেকজন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা এমনিতেই বিপদজনক। তাছাড়া এসব রিকশা আমরা যারা নিবন্ধিত প্যাডেলচালিত রিকশার চালক আছি তাদের জন্যই খারাপ। আমাদের যাত্রী কমে যায়, পরিমাণমতো ভাড়াও পাই না। 

প্রতিবন্ধী রিকশাচালক শাহজাহান বলেন, আমিও শুনেছি বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমার আর কোনো কাজ করার সুযোগও নাই, প্রতিবন্ধী। তাই বের হতে হচ্ছে।  এখনো কোনো পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এখনো পড়িনি। তবে আমি দেখেছি ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিমাণ একদম কম চলতেছে। মোহাম্মদ এরশাদ নামের আরেকজন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক বলেন, গতকাল গুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের পোস্টার দেখেছিলাম। আমি আজ পোস্টার দেখিনি, তাই বের হলাম একটু আগে। তবে আজকে একটু কম আছে রিকশা। পুলিশ জানিয়েছে রিকশাগুলো যেন ভেতরের রাস্তাগুলোতে চলে। এখন তাই ধীরে ধীরে চালকরা বের হয়ে আসছে।  

এদিকে, ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা বন্ধের প্রতিবাদের সঙ্গে সঙ্গে প্যাডেলচালিত রিকশায় হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে রিকশাচালকরা। প্যাডেলচালিত রিকশার চালকরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা ক্ষোভের বসে নিবন্ধনকৃত প্যাডেলচালিত রিকশায় হামলা চালায়। এ সময় তারা প্যাডেলচালিত রিকশায় গুলশান সোসাইটির স্টিকার ছিঁড়ে ফেলে, রিকশার চাকায় ফুটো করে দেয়, কিছু কিছু রিকশার চাকার রড় ভেঙে দেয়।  

গুলশান-১ গোলচত্বরে প্যাডেলচালিত রিকশাচালক হুমায়ুন বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ, তবে এখনো চলছে দু-একটা। আমি প্যাডেলে চালাই,  তাই সকালে অন্য এক রিকশাচালক আমার রিকশার স্টিকার খুলে নিয়ে গেছে, রড ভেঙে দিয়েছে। কারণ তাদেরটা বন্ধ, আমারটা কেন চলবে! গুলশান-২ এর প্যাডেলচালিত রিকশাচালক দুলাল বলেন, আমার রিকশার স্টিকার ছিঁড়ে ফেলছে। তারা বলে, তাদের যদি রিকশা চালাতে না দেয়া হয়, আমাদেরও তারা চলতে দেবে না। এ জন্য আমাদের রিকশায় আক্রমণ করে। আমরা বলি, এসব রিকশা যেহেতু সমস্যা,  তোমরাও প্যাডেলচালিত রিকশা চালাও। তারা উল্টো আন্দোলন করছে।   

উল্লেখ্য, গুলশানে আগে শুধু নির্দিষ্ট রংয়ের নিবন্ধিত প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচল করতো। গত সাত-আট মাস ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বাইরের রিকশাও চলাচল করছে। এতে এলাকায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এই পরিস্থিতিতে গুলশানে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গুলশান সোসাইটি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর অংশ হিসেবে শনিবার থেকে গুলশানের ৯টি প্রবেশপথে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে গুলশান সোসাইটি ২০ জন অতিরিক্ত নিরাপত্তা গার্ড নিয়োগ দিয়েছে, যারা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করবেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status