দেশ বিদেশ
সাতরাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ
দিনভর যানজট ভোগান্তিতে নগরবাসী
স্টাফ রিপোর্টার
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবাররাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বেশক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে সাতরাস্তা এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো ঢাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সাতরাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এফডিসি মোড় থেকে হাতিরঝিল এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহন থেমে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরেও যানজট লেগে যায়। এভাবেই দিনভর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে নগরবাসী গন্তব্য পৌঁছাসহ জরুরি কাজ সেরেছেন। গতকাল সকাল ১০টার পর শিক্ষার্থীরা সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সরজমিন দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে যায় পুরো ঢাকা। তেজগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কাওরানবাজার, মগবাজার, এফডিসি মোড়, হাতিরঝিল, গুলশান, মালিবাগ, মৌচাকসহ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র যানজট। শুধু সড়ক নয়, তেজগাঁও, কারওয়ানবাজার, মহাখালী এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইনকামিং রুটও স্থবির অবস্থায় ছিল। বিকাল সোয়া ৩টা থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। চারদিকে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি এতে আরও বেড়ে যায়। রোদের সময় ক্রিকেট আর বৃষ্টির সময় বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সড়কে খেলতে দেখা যায় তাদের। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সড়কে জোহরের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এর আগে স্লোগানে স্লোগানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে তাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানান। দ্রুত দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ব্যানারে এ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আনোয়ার নামের এক সিএনজি চালক বলেন, সকালে সাতরাস্তা সড়ক দিয়ে প্রবেশ করেই যানজটে পড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানেই দাঁড়িয়ে আছি। যাত্রীরা নেমে গেছেন কিন্তু আমার বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। সিএনজিচালক আফজাল বলেন, আমরা তো অসহায়, আমাদের এই ভোগান্তি দেখার মানুষ নেই। সরকারে যারা বসে আছেন, তারা তো জানেন এই আন্দোলনের কথা। তারা তো আইসা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। প্রাইভেটকার চালক নয়ন বলেন, মহাখালী যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিয়ে এখানে এসে আটকা পড়েছি। কখন বের হতে পারবো জানি না। বলাকা বাসের চালক নয়ন বলেন, বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে এসেছিলাম। যানজট দেখে সবযাত্রী নেমে গেছেন। মনে হচ্ছে সারা দিনই এভাবে যাবে।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, আমরা আগের ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরও একটি নতুন দাবি যুক্ত করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো, ল্যাব এসিস্ট্যান্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। আমরা চাই না, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে পরে আমাদের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের এ ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অনেক শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্নে মিজান বলেন, ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাত রাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ছিল রোদ, এখন বৃষ্টি। ভোগান্তির অবস্থাটা বোঝেন। চারদিক স্থবির হয়ে আছে। ডাইভারশন করে কিছু সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই অবরোধ না ওঠা পর্যন্ত সড়ক সচল করা কঠিন।’