বিশ্বজমিন
যুক্তরাষ্ট্রের চোখে ইরানের চোখ
মানবজমিন ডেস্ক
(২ দিন আগে) ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৭:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে ইরান। বোমা হামলার হুমকি দেয়ার পরও তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করেনি। উল্টো সাফ জানিয়ে দিচ্ছে, আক্রান্ত হলে পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ বলেছেন, ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে। এরও জবাব দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বুধবার বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ‘আলোচনাযোগ্য নয়’। অর্থাৎ এ ইস্যুতে তারা কোনো আলোচনা করতে চায় না। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আরাঘচি সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের সমৃদ্ধকরণ একটি বাস্তবসম্মত ও গৃহীত বিষয়। সম্ভাব্য উদ্বেগের জবাবে আমরা আস্থা তৈরি করতে প্রস্তুত। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মধ্যস্থতায় পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। এর অধীনে তাদেরকে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার বিনিময়ে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সেই ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি পরিত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। এরপর দীর্ঘদিনের শত্রু এই দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে। ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির অংশ হিসেবে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছেন। তিনি জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তা পুনর্বহাল করেছেন। মার্চ মাসে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেন।
উইটকফ মঙ্গলবার অফিসিয়াল এক্সে বলেন, যে যেকোনো পারমাণবিক চুক্তির অংশ হিসেবে ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ‘বন্ধ এবং নির্মূল’ করতে হবে। ইরানের সাথে একটি চুক্তি কেবল তখনই সম্পন্ন হবে যদি এটি ট্রাম্পের চুক্তি হয়। তিনি আরও বলেন, যেকোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। এর অর্থ ইরানকে তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ এবং অস্ত্রায়ন কর্মসূচি বন্ধ এবং নির্মূল করতে হবে। সোমবার ফক্স নিউজের সাথে কথা বলার সময় উইটকফ বলেন, ইরানের শতকরা ৩.৬৭ ভাগের বেশি (ইউরেনিয়াম) সমৃদ্ধ করার দরকার নেই। কিছু পরিস্থিতিতে তা শতকরা ৬০ ভাগ, আবার কিছু পরিস্থিতিতে শতকরা ২০- তা হতে পারে না। আপনার এমন একটি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর দরকার নেই। যেখানে আপনি শতকরা ৩.৬৭ ভাগের বেশি (ইউরেনিয়াম) সমৃদ্ধ করছেন। মঙ্গলবার তার বিবৃতিতে যেকোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওদিকে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে,
ট্রাম্প পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের ডেকেছিলেন মঙ্গলবার। কিন্তু পরবর্তী দফার আলোচনার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা ‘পরস্পরবিরোধী এবং বিরোধপূর্ণ অবস্থান’-এর নিন্দা করেছেন আরাঘচি। তিনি বলেন, আলোচনার সময় আমরা আমেরিকানদের প্রকৃত মতামত খুঁজে বের করব। ইরানের শীর্ষ এ কূটনীতিক বলেছেন, তিনি একটি সম্ভাব্য চুক্তির কাঠামো নিয়ে আলোচনা শুরুর আশা করছেন। তবে জোর দিয়ে বলেছেন- এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গঠনমূলক অবস্থান প্রয়োজন। তিনি বলেন, যদি আমরা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকি, তাহলে আমাদের সমস্যা হবে। মঙ্গলবার খামেনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে- প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা ভালোভাবে এগিয়ে গেলেও, তা এখনও নিষ্ফল প্রমাণিত হতে পারে।