ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে চোরাই রাজ্যের নতুন নিয়ন্ত্রক করিম

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

সিলেটের চোরাই রাজ্য হরিপুর তছনছ হয়ে গেছে। সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনার পর চিহ্নিত চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়েছিল। আর এতেই হরিপুরের চোরাচালান এখন শূন্যের কোঠায়। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে চোরাকারবারিরা। সূত্র বলছে; শীর্ষ ৭-৮ জন চোরাকারবারি ভারত পালিয়েছে। দু’একজন ঢাকায় আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক শেল্টারের চেষ্টা করছে। হরিপুরের চোরাই রাজ্য হাতবদল হয়ে এখন জৈন্তাপুরে। রমরমা বাণিজ্য চলছে। গোটা রাতই জেগে থাকে জৈন্তাপুর বাজার। নতুন এই চোরাই রাজ্য নতুন অধিপতি করিম আহমদ। অনেকেই তাকে ‘ব্যান্ডিজ’ করিম হিসেবে চিনেন। এক সময় জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পলাতক লিয়াকত আলীর আস্থাভাজন লোক ছিলেন করিম। লিয়াকতকে উপজেলা নির্বাচনি বিজয়ী করতে দু’হাতে টাকা উড়িয়েছে করিম। পটপরিবর্তনের পর হয়ে উঠেছেন বিএনপি নেতা। শেল্টার পাচ্ছেন স্থানীয় নেতাদেরও। প্রশ্ন ছিল; জৈন্তাপুর বাজারে প্রতিদিন কতো টাকার চোরাই ব্যবসা হয়। উত্তরে বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী মানবজমিনকে জানিয়েছেন; ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার চোরাই ব্যবসা হয়। পাশেই ভারত সীমান্ত। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট সীমান্ত গলিয়ে যেসব পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে তার বেশির ভাগই জৈন্তাপুর বাজারে এসে বৈধ হয়ে যায়। সীমান্ত জুড়ে তার রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জৈন্তাপুরের করিমের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নতুন নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু থেকে অপরাধ জগতে তার পদচারণা। সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশের লাইনম্যান রয়েছে। করিম বিজিবি’র প্রধান লাইনম্যান। সীমান্ত দিয়ে যেসব পশু ও চোরাচালানি পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে সবকিছু থেকে বিজিবি’র নামে চাদা আদায় করে সে। সম্প্রতি বিজিবি’র সঙ্গে চোরাকারবারিদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে তার পেছনে ছিল করিমের হাত। জৈন্তাপুরের নিজপাটের ঘিলাতৈল গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা করিম আহমদ। একক নেতৃত্বে জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর, মিনাটিলা, ডিবির হাওর, রাজবাড়ী, গোয়াবাড়ী ও লালাখাল এলাকায় বিজিবি’র লাইন নিয়ন্ত্রণ করে। বিজিবি’র লাইন পরিচালনা করে অঢেল সম্পদের মালিক। জৈন্তাপুর সদরে রয়েছে তার বিলাসবহুল বাসা। নামে বেনামে রয়েছে কয়েকটি বাড়ি। ছেলে, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, বোনের জামাতা সবাই হয়েছেন তার শেল্টারে কোটিপতি। চলতি ১৪৩২ বাংলা বছরের জন্য নানা বির্তকের মাধ্যমে ১ কোটি ৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন জৈন্তাপুরের পশুর হাট। ভ্যাট, ট্যাক্স মিলিয়ে সেটি দঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। এতে তার সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সেনা সদস্যের হামলার ঘটনায় বর্তমানে পলাতক থাকা আব্দুর রশিদ ও উপজলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নিজপাট ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সরকারের প্রকৃত ইজারা মূল্য ফাঁকি দিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পশুর হাট ইজারা নেন। এতে শতাধিক সিডিউল ক্রয় হলেও সিন্ডিকেট করে কেবল করিমের নামে বাজার ইজারা নেয়া হয়। এ নিয়ে জৈন্তাপুর তোলপাড় চলছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- জৈন্তাপুর সীমান্তের খাঁসিয়া হাওর, শান্তিমাইর জুম করিমের নির্ধারিত লাইনম্যান মোকামবাড়ী গ্রামের রুবেল ও তার ভাই লিটনের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া মোকামপুঞ্জি ও শ্রীপুর তার নির্ধারিত লাইনম্যান মোকামপুঞ্জির বাসিন্দা মাঘাই পাত্র, ছাগল খাউরী, মিনাটিলা, কেন্দ্রী ও লম্বাটিলা কেন্দ্রী গ্রামের উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিজান আহমদ রুবেল, ডিবির হাওর ফরিদের বাড়ি, রিভার্স পিলার (ডিবির হাওর আসামপাড়া), ঘিলাতৈল, তলাল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, করিমটিলা, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী নিয়ন্ত্রণ করে করিম নিজেই। বাইরাখেল, হর্ণি নয়াগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করে তার ব্যবসায়িক পার্টনার বাইরাখেল গ্রামের আব্দুল মালেক ওরফে আব্দুল, জালিয়াখলা, সারীনদীর মুখ নিয়ন্ত্রণ করেন কালিঞ্জি গ্রামের রহিম উদ্দিন ও তার ভাই তাজউদ্দিন। ৫ই আগস্টের পূর্বে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা সামাদ ও আরমানের মাধ্যমে করিম তার বাহিনীর মাধ্যমে জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র নামে কখনো সিও লাইন, কখনো ক্যাম্প লাইন ও কখনো টহল লাইনের মাধ্যমে পণ্য নিয়ে আসা হতো। বর্তমানে করিম নিজেই এ লাইন পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে; হরিপুরের চোরাকারবারিরা ভারত পালিয়ে যাওয়ার আগে জৈন্তাপুরের একাধিক খাঁসিয়া জুমে আত্মগোপনে ছিলেন। তাদের শেল্টার দিয়েছেন করিম।

যেসব পথ দিয়ে আসে চোরাই পণ্য: জৈন্তাপুর বাজারের চোরাচালানের গরু-মহিষসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় চোরাই পণ্য নিয়ে আসার ধুম। আর শেষ হয় ভোর রাতে। এ কারণে রাতে জেগে থাকে জৈন্তাপুর বাজার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- খাঁসি হাওর, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, মিনাটিলা, আদর্শগ্রাম, কেন্দ্রী দিয়ে সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা গরু মহিষ শেওলারটুক হয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার মঞ্জিলতলা, কাকুনাখাই, পাঁচ সেউতী হাওর দিয়ে কুওর বাজার, কেন্দ্রী লম্বাটিলা, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, করিমটিলা, ভিরতগোল, বাইরাখেল, হর্ণি, মাঝেরবিল, সাইনবোর্ড হয়ে বিভিন্ন পথে আসা গরু-মহিষ আসে। লালাখাল হয়ে নিয়ে আসা গরু-মহিষ দরবস্ত ও চতুল বাজারে প্রবেশ করে। বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসন থেকে এসব পণ্য নিরাপদ রাখতে করিমই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 

করিম আহমদের বক্তব্য: এ ব্যাপারে শুক্রবার বিকালে করিম আহমদের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। বাজার ইজারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- বাজারে শরীকান শতাধিক ব্যক্তি। ইজারাদার হিসেবে আমার নাম দেয়া হয়েছে। আমার নামে বাজার এলেও এখনো নিয়ন্ত্রণ পাইনি। ফলে বাজারে পশু কোথায় থেকে আসে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। বলেন- আমি কখনো বিজিবি’র লাইনম্যান ছিলাম না। এখনো নেই। এসব বিষয়ে আমার ওপর সবসময় দোষ দেয়া হয়। কোনো সিন্ডিকেটও নেই বলে দাবি করেন। করিম বলেন- বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা টহল দেন। কোনো পণ্য নিয়ে আসা খুব কঠিন। এ কারণে ভারত থেকে কম পণ্য আসছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status