ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যা

দুই ক্লু নিয়ে তদন্তে পুলিশ

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

প্রবাসী অধ্যুষিত শহর মৌলভীবাজার। শান্তিপ্রিয় এই শহরে কেন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হলেন তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া (৩৭)। প্রকাশ্যে চার সহকর্মীর মধ্যে শুধু সুজনকেই কেন হত্যা করলো খুনিরা। হত্যার নেপথ্যে কারা। খুনি ভাড়া করলো কে। ব্যক্তিগত আক্রোশ নাকি পেশাগত দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক না ব্যবসায়িক বিবাদ। নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। তবে দুটি ক্লু ধরে তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘাতকদের ধরতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা তার ৪ বন্ধু তাদের চোখের সামনে যা ঘটেছে তা পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী এডভোকেট সুজন। কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে কখনো জড়াননি। তার সহকর্মী, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন কারও কাছে তথ্য নেই তার শত্রুর তালিকার। আইন পেশা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসা বা কাজে জড়িত নন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পিতা-মাতা জীবিত। বড় ভাই এনামুল হক সুমন শহরের কুদালিপুল এলাকায় গাড়ির পার্টসের ব্যবসা করেন। তবে তার পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও পরিচিতজন বলছেন- চলমান একটি মার্ডার মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা ও শহরের শান্তিভাগ এলাকায় প্রায় আড়াই মাস আগে একজন প্রবাসীর জায়গা-জমির বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনজীবী হিসেবে ভূমিকা রাখায় তিনি প্রাণে হত্যার হুমকিও পান। প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট ভূপতি রঞ্জন চৌধুরীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন সুজন। 

কারা ভাড়াটে হয়ে এসব ঘটাচ্ছে 
প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত শান্তিপ্রিয় এই জেলা শহরে কারা এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। ধারাবাহিক ঘটে যাওয়া এ সকল ঘটনার নেপথ্যে কারা এমন প্রশ্ন সবার। আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যাকাণ্ড ছাড়া চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে একই ধরনের হামলা হয়েছে ৪-৫টি। হামলার ধরন, হামলাকারীদের বয়স ও তাদের হামলার পরিকল্পনা প্রায় একই ধাচের। জেলা শহরে আলোচিত ঘটনার মধ্যে ১৮ই মার্চ রাতে সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মসজিদে অজুখানায় সাংবাদিক মো. শাহজাহান মিয়ার ওপর ১০-১২ জনের দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। একইদিন তারাবির নামাজ শেষে শ্রীমঙ্গল সড়কের বাসস্টেশন এলাকায়, সন্ধ্যার দিকে শহরের বেরির পাড় ও তারাবির সময় কুদালীপুল সিএনজি পাম্প এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ১১ই মার্চ শহরের একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন এক মহিলা। ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে অনেকটাই মিল পাওয়া যায় দুর্বৃত্তদের। এ বিষয়ে কেউ ভয়ে প্রকাশ্যে ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না চাইলে জানাচ্ছেন পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যারা শহরে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতো এখনো আড়ালে থেকে তারাই তাদের পরিবর্তিত লোকবল দিয়ে শহরকে অশান্ত করে তুলছে। এরইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখছে মাদক ব্যবসা, হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ঠিক আগের মতো শহরে সাইলেনসার বিহীন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার দিয়ে বিকট শব্দে একদল কিশোর ও তরুণ আতঙ্ক ছড়ান। স্কুল কলেজের সময়ে ও রাতে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়ায় অল্প বয়সীদের আড্ডা দিতে দেখা গেলেও এ থেকে নেই কোনো প্রতিকার। 

মামলা  
খুনের শিকার সুজন মিয়ার ভাই ব্যবসায়ী এনামুল হক সুমন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সময় সুজন মিয়ার সঙ্গে থাকা তার ৪ বন্ধু সাইফুর রহমান আখন্দ, সৈয়দ ফুয়াদ হোসেন, শেখ আজিজ আহমদ মুন্না ও মো. বাদল মিয়াকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।

প্রস্তুত থাকা খাবারো খেতে পারলেন না 
ঘাতকদের হাতে প্রাণ যাওয়ার কিছু আগে স্ত্রী মনিরা বেগম ফোন দিয়ে অবস্থান জানতে চেয়ে রাতের খাবারের জন্য কলিমাবাদ এলাকায় শ্বশুরের বাসায় ফেরার তাগিদ দেন। প্রতি-উত্তরে স্ত্রীকে সুজন জানান, বন্ধুদের সঙ্গে পৌরসভার ভেতরে ফুচকার দোকানে ফুচকা খাচ্ছেন। তার জন্যও বাসায় ফুচকা নিয়ে আসছেন। কিছু সময়ের ভেতর বাসায় ফিরবেন। রাতের খাবার তার নিজের শহরের হিলালপুরের বাসায় নিয়ে খাবেন তাই টিফিনে রাখতে বলেন। সুজন ফুচকা কিনলেন ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর হাতে পৌঁছাতে পারলেন না। আর তার স্ত্রী রাতের খাবার টিফিনে তুলে রাখলেও তার আর খাওয়া হলো না।  

স্ত্রীকে ঘরে তুলতে পারলেন না 
গেল বছরের আগস্ট মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া। স্ত্রী মনিরা বেগম মনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তারা ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ১৯ তারিখে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর ২০২০ সাল থেকে সুজনরা দুই ভাই মিলে নতুন বাসার নির্মাণকাজ শুরু করলেও চলতি বছরের মার্চের দিকে শেষ হয়। সুজনের ইচ্ছা ছিল বড় ভাই এনামুল হক সুজনকে বিবাহ করাবেন এবং একই সঙ্গে দুই ভাইয়ের স্ত্রীকে নতুন বাসায় উঠাবেন।  

শোকসভা
জেলা বারের সদস্য সুজন মিয়ার মৃত্যুতে ফুল কোর্ট রেভারেন্স পালিত হয়। গতকাল দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির ১নং বার হলে শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভা ও দোয়ায় জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যসহ আইনজীবীদের সহকারীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আইনজীবীরা জানান বুধবার কর্মবিরতি ও বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচি পালন করবেন তারা।  

যেভাবে হত্যা করা হয়
রোববার রাত প্রায় ১১টার দিকে পৌরসভার ভেতরে মেয়র চত্বর এলাকায় তামান্না ফুচকার দোকানের সামনে বসে আইনজীবী সুজনসহ তার সঙ্গের ৪ জন বন্ধু ফুচকা খাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন কিশোর বয়সী দুর্বৃত্তরা আইনজীবী সুজন মিয়ার পাশে দাঁড়ায় এবং তাকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে দুইজন প্রথমে সুজনকে লাথি দেয়। এ সময় তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গেলে তাদের একজন ছুরিকাঘাত করে। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ওসি গাজী মো. মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই বাদী হয়ে আসামি অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছেন। হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটন ও আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
 

পাঠকের মতামত

None of the four Friends were injured or stepped forward to save them. The matter is mysterious.

kabir
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ২:৪৭ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status