খেলা
জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ দল
প্রথমবার সাদা পোশাকে সাকিব টপঅর্ডার নড়বড়েই থাকলো
স্পোর্টস রিপোর্টার
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
লিটন কুমার দাস থাকবেন না, আগেই জানা ছিল। পিএসএলের পুরো আসরে খেলার জন্যই তাকে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে বিসিবি। তার জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই ফিরেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ওয়ার্কলোড বিবেচনায় নেই তাসকিন আহমেদও। তার জায়গায় প্রথমবার টেস্টে ডাক পেয়েছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দলে চমক বলে এটুকুই। তবে টপঅর্ডারে কোনো বিকল্প ভাবতে পারেননি নির্বাচকরা। ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও সেই নড়বড়ে টপঅর্ডার নিয়েই মাঠে নামতে হবে টাইগারদের।
আগামী ২০শে এপ্রিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এর আগে গতকাল এই ম্যাচের জন্য ১৫ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করে বিসিবি। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চোটের জন্য ছিলেন না মুশফিকুর রহিম ও নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই ম্যাচ দিয়ে দু’জনেই দলে ফিরেছেন। দল ঘোষণার পর জানা গেছে চোটের কারণে নেই তাসকিন আহমেদ। তার চোট নিয়ে বিসিবি’র চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাঁ একিলিস টেন্ডনে সমস্যার কারণে তাসকিন এখন পুনর্বাসনে আছে, সিরিজে তাকে পাওয়া যাবে না।’
এ ছাড়া দলে ফিরেছেন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান। জাতীয় লীগের সবশেষ আসরে ৫ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অফ স্পিনার। পেস আক্রণে প্রথমবার ডাক পাওয়া তানজিম সাকিব এরমধ্যে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে তার শিকার ২৫ উইকেট।
সবশেষ সিরিজের দল থেকে বাদ পড়ার তালিকায় আছেন হাসান মুরাদ, শরিফুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন। ক্যারিবিয়ান সফরের দলে ডাক পেলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়েই জায়গা হারালেন বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ। শান্তর চোটে শেষ মুহূর্তে ওই সফরে দলে ফেরেন শাহাদাত। দুই ম্যাচে সুযোগ পেলেও ভালো করতে পারেননি তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। চার ইনিংসে একবারও ৩০ স্পর্শ করতে পারেননি তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচে সুযোগ পেলেও ভালো করতে পারেননি শাহাদাৎ হোসেন দীপু। চার ইনিংসে একবারও ৩০ স্পর্শ করতে পারেননি তিনি। এই সিরিজে দলে ফেরার সম্ভাবনা ছিল পেসার ইবাদত হোসেনের। কিন্তু এখনো তার ফিটনেস নিয়ে নিশ্চিত নন নির্বাচকরা। বিসিবি’র ভিডিওবার্তায় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে চোটের কারণে জাতীয় দলের বাইরে থাকা ইবাদত হোসেন চৌধুরীকে বিবেচনায় রেখেছেন তারা। আপাতত ফিজিও ও ট্রেনারের পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। সবুজ সংকেত পেলেই দলে ফেরানো হবে তাকে।
তবে এত পরিবর্তনেও টপঅর্ডার একই থেকে গেছে। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় টিকে গেছেন এই সিরিজেও। এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট খেলেছেন জাকির, প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর বাকি ১৩ টেস্টে করেন মাত্র ৪টি ফিফটি। শেষ ৩ টেস্টে ২০ এর আগেই থেমেছে তার ইনিংস। টেস্টে এ নিয়ে সর্বশেষ ১০ ইনিংসের ৬টিতেই এক অঙ্কের ঘরে আউট জাকির। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫ রান করার পর বাদ পড়েন দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের নামের সঙ্গে টেমপারেন্ট ভালো যোগ হয় শুরু থেকে। টেস্টে এটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জয় তো কিছুই করতে পারছেন না। শেষ ১৩ ইনিংসে ফিফটি মাত্র ১টি। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৪ ইনিংসে করেন মাত্র ১৪ রান। যেভাবে পেসারদের বিপক্ষে একের পর এক ইনিংসে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি, তাতে তার টেকনিক বা টেস্টে ব্যাটিং করার সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামও একই ঘরানার, তবে বাকি দু’জন থেকে কিছুটা ভালো অবস্থায় আছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শেষ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৬৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪৬ রান। তবে এর আগে আবার রান খরা! শেষ ১৫ ইনিংসে তার ফিফটি মাত্র ৩টি। এরমধ্যে ৩ বার আউট হয়েছেন শূন্য রানে, আর ৩ বার ফিরেছেন সিঙ্গেল ডিজিটে! সেই একই ওপেনাররাই খেলবেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অথচ গেল জাতীয় ক্রিকেট লীগে আসরের ১২ ইনিংসে ৭৮ গড়ে করেন সর্বোচ্চ ৭৮৫ রান করেন অমিত হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও তাকে বিবেচনা করলেন না নির্বাচকরা। ৭০০ রান করা এনামুল হক বিজয়, ৫৮৭ রান করা অমিত মজুমদারও থেকে গেলেন আড়ালে! অথচ টপঅর্ডার টেস্টে ম্যাচ শুরুর আগেই ধরেন ড্রেসিংরুমের পথ। অন্যভাবে দেখলে জাতীয় দলে ওপেনাররা ক্রমাগত ব্যর্থ হয়ে সুযোগ পাবেন কিন্তু ঘরোয়া লীগে রান বন্যা বইয়ে দিয়েও ডাক পাবেন না! এমন হলে তো পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ (সহ-অধিনায়ক), তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব।