খেলা
কিংসকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনী
স্পোর্টস রিপোর্টার
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
দুই বড় দল আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস উপহার দিতে পারলো না মন মাতানো ফুটবল। সাদামাটা ম্যাচের রঙ বরং আরও ফিকে হয়ে গেল আবাহনীর আসাদুজ্জামান বাবলু লালকার্ড দেখায়। দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে গেল কিংস। নাটকীয়তার তখনও বাকি। শেষদিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা ফেরাােলা আবাহনী। এরপর অতিরিক্ত সময়েও খেলা ১-১ হওয়ায় ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার প্রথম কোয়ালিফায়ারে বসুন্ধরা কিংসকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পা দিয়েছে আবাহনী। দিনের আরেক ম্যাচে আগে গোল করেও জিততে পারেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন। কামাল বাবুর রহমতগঞ্জ ২-১ গোলে গোপীবাগের দলকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয় এলিমিনেটরে রহমতগঞ্জ মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংসের। যে দল জিতবে তারা ট্রফির জন্য লড়বে আবাহনীর বিপক্ষে।
এদিন ঘাড়ের চোটের কারণে রক্ষণে কিংস পায়নি কাজী তারিক ও রায়হানকে। চোট কাটিয়ে ফেরা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হুয়ান লেসকানোকেও শুরুর একাদশে রাখার ঝুঁকি নেননি কোচ ভ্যালেরি তিতা। তাতে কিংসের আক্রমণে ছিল না চেনা ধার। তাতে ২৮ মিনিটে প্রথম কুলিং ব্রেকের আগ পর্যন্ত আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ দেখা গেল না তেমন একটা। শুরু থেকে নিজেদের শক্তির জায়গা রক্ষণের চাদরে মুড়ে থাকলো আবাহনী। চোট জর্জর কিংস যা একটু চেষ্টা করলো বটে, কিন্তু মেলেনি গোলের দেখা। কুলিং ব্রেকের পর আক্রমণের ধার বাড়ায় কিংস, কিন্তু মিতুলের বিশ্বস্ত দেয়ালে চিড় ধরানোর জন্য তা ছিল না যথেষ্ট। ৩৭তম মিনিটে রাকিব হোসেনের আড়াআড়ি ক্রস গোলমুখে পান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, কিন্তু মিতুল ঝাঁপিয়ে ফেরান। এরপর মজিবুর রহমান জনির কোনাকুনি শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৪২তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় আবাহনী। ফাহিমকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন আসাদুজ্জামান বাবলু। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় পানির গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে নিজের উপরই হতাশা ঝাড়তে দেখা যায় এই ডিফেন্ডারকে। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ায় রক্ষণের শক্তি বাড়াতে মিডফিল্ডার রবিউল হাসানকে তুলে ডিফেন্ডার শাকিল হোসেনকে নামান আবাহনী কোচ মারুফুল হক। দ্বিতীয়ার্ধেই আবাহনীর সে স্বস্তি উবেও যায়। ৫৭ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল তুলে নেয় কিংস। ফার্নান্দেসের লং বল দুই ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ও শাকিলের কেউ ক্লিয়ার করতে পারেননি, তাদের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া বল জনি ছুটে গিয়ে টোকায় জড়িয়ে দেন জালে। হতভম্ব মিতুল কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। ৮৪ মিনিটে সমতা ফেরায় আবাহনী। রাফায়েল অগোস্তর বাঁকানো ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে ফিরলে অনায়াসে তা জালে পাঠান বদলি নামা আরমান ফয়সাল আকাশ। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দুই দলই রয়ে-সয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। ১০২ মিনিটে মেহেদী হাসানের দৃঢ়তায় রক্ষা পায় কিংস। বদলি নামা ইব্রাহিমের ভাসানো বলে মিরাজুলের হেড কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান মেহেদী। শেষদিকে মেহেদীকে তুলে গোলরক্ষক আনিসুর রহমানকে নামান ভ্যালেরি তিতা। তাতেই যেন বাজিমাত কিংসের। আবাহনীর প্রথম শট নিতে আসা জাফর ইকবালের আলতো করে নেয়া শট গ্লাভসে আটকান আনিসুর। এরপর কিংসের প্রথম শট জালে জড়ান জোনাথন ফার্নান্দেস। এরপর শেখ মোরসালিন জাল খুঁজে নিলেও রাব্বি হোসেনের শট ঝাঁপিয়ে ফেরান মিতুল। চতুর্থ শটে ডেসিয়েলও উড়িয়ে মারেন পোস্টের উপর দিয়ে। প্রথম শট মিসের পর আবাহনীর রাফায়েল অগোস্ত, এমেকা, সবুজ হোসেন এবং ইব্রাহিম জাল খুঁজে নিলে ফাইনালে পৌঁছে যায় আবাহনী।
এদিকে ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে ছোট কর্নার সতীর্থ থামিয়ে দেওয়ার পর এমফন সানডেই ছুটে এসে শট নেন। বল বাঁক খেয়ে লাফিয়ে ওঠা হাবিবের গ্লাভসকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। এগিয়ে যায় ব্রাদার্স। ৬৩তম মিনিটে কর্নার থেকে স?্যামুয়েল বোয়াটেং হেডে সমতায় ফেরান রহমতগঞ্জকে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে এগিয়ে যায় পুরান ঢাকার দলটি। ফ্রি-কিক ক্লিয়ার করতে বল বুক দিয়ে রিসিভ করতে গিয়েছিলেন রহমত মিয়া, কিন্তু তার বুকে লেগে চলে যায় সলোমনের পায়ে। হঠাৎ পাওয়া সুযোগ দারুণ টোকায় কাজে লাগান তিনি। বাকিটা সময় ব্যবধান ধরে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রহমতগঞ্জ। অবশ্য ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী ১৫ই এপ্রিল কিংসের মুখোমুখি হবে রহমতগঞ্জ। জয়ী দলের বিপক্ষে পরের সপ্তাহে ফাইনালে খেলবে আবাহনী।