শরীর ও মন
আগা ফাটা চুলের পরিচর্যা
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
৯ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার
চুলের আগা একবার ফেটে গেলে, তা স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে অনেকে চুলের যে অংশটুকু ফেটে গেছে সেই অংশ কেটে ফেলেন। কিন্তু অনেক সময় নারীদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। চুলের চিকিৎসক বিদ্যায় বিশেষভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি সাধারণত মেয়েরাই চুল নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন এবং তারা চিন্তা করতে করতে আরও চুল হারিয়ে ফেলেন। মূলত তারা নিয়মিত ঘুমাতে যান না, খাবার-দাবার নিয়মিত খান না এমনকি ভিটামিন জাতীয় খাবারও কম খান। মূলত সুন্দর জীবন-যাপন না করার কারণে অনেকের অকালে চুল রুগ্ণ, আগা ফাটা ও খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। খুশকি যে চুলের জাত শত্রু তা অনেকেই জানেনই না। চুলকে পরিষ্কার রাখা, ও খুশকি মুক্ত রাখতে পারলে অনেকের চুল এমনিতেই ভালো থাকে। তারপর পরিপাটি ও সুন্দর চুলের জন্য নিতে হয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা। চুলের আগা ফাটার সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো, তেল ও মেডিকেটেড শ্যাম্পু। তেল চুলে পুষ্টির জোগান দেয়। তাই নিয়মিত চুলে তেল দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সবাই সাধারণত নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকি। এ ছাড়াও জলপাই তেল, বাদাম তেল বা তিলের তেল ব্যবহার করা যায়।
এ সময় তেল খুব ভালোভাবে মাথার ত্বকে মালিশ করার পাশাপাশি চুলেও লাগাতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে তিনদিন তেল লাগানো উচিত। চুলের রুক্ষভাব কমাতে এবং আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা বাদ দিতে হবে। কারণ চুল ধোয়ার ফলে, মাথার ত্বকের তেলও ধুয়ে যায়। তাই সপ্তাহে দুই থেকে তিনবারের বেশি শ্যাম্পু করা উচিত নয়। শ্যাম্পুর রাসায়নিক উপাদানও চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে, শ্যাম্পুতে সালফেটের পরিমাণ লক্ষ্য করতে হবে। সালফেট হলো ডিটারজেন্ট তৈরির প্রধান একটি উপাদান যা প্রচুর ফেনা তৈরি করে। সালফেট চুলের কিউটিকলের আদ্রর্তা কেড়ে নেয়। ফলে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে চুলের আগা ফাটার পরিমাণও বেড়ে যায়। হারবাল শ্যাম্পুতে সাধারণত সালফেট
থাকে না অথবা কম পরিমাণে থাকে। তাই চুল ধোয়ার জন্য হারবাল শ্যাম্পু বেছে নেয়া ভালো। মনে রাখতে হবে:
- বার বার শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি ছাড়া উপকার হয় না। চুলের সঠিক পরিচর্যা করার জন্য ভালো ব্র্যান্ডের বা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।
- শ্যাম্পু করার পর যে পানিতে মাথা ধোয়া হয় তাও অনেক সময় ক্ষতি করে চুলের। বিশেষ করে পানির ক্লোরিন এর জন্য দায়ী। এই ক্লোরিনযুক্ত পানি প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে চুলের ডগা ফেটে যায়। তাই এই পানি ব্যবহারের আগে পানিকে যদি সম্ভব হয় ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নেবেন। বাইরে বের হলে সূর্যের তাপ যেন চুলের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সহজ সমাধান ছাতা ব্যবহার করা।
- চুলের আগা ফেটে গেলেই বুঝতে হবে চুলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে চুলের আগা কেটে ফেলার চেষ্টা করবেন। আগা কাটার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে এবং সেটা দক্ষ হাতেই করতে হবে। এ ধরনের হেয়ার কাটকে স্পিটেন্ট কাট বলে। এ হেয়ারকাটে চুল কখনই ছোট হবে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে চুলের ফাটা আগাগুলো আলাদা করে কেটে দেয়া হয়। এই একটা কাটিং চুলের পুরানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। এ ছাড়া চুলের রুক্ষতাও কমে যাবে এবং চুল পড়ার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। চুলে যত্নে কিছু বাড়তি করণীয়:
* নিয়মিত চুলে ব্রাশ করুন। ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ান। খেয়াল রাখুন আঁচড়ানোর সময় চুল যেন না ছিঁড়ে।
* হেয়ার স্প্রে বেশি ব্যবহার করবেন না।
* প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। খাদ্যে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ভিটামিস-সি, ভিটামিন-ই যেন অবশ্যই থাকে।
* রুক্ষ চুলে শ্যাম্পু করার অন্তত এক ঘণ্টা আগে তেল লাগান। শ্যাম্পু করার পর গোড়া বাদ দিয়ে কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না।
* চুল প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ বার ব্রাশ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে ও চুল চকচকে হবে। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ব্যবহৃত ব্রাশ, চিরুনি পরিষ্কার করে নিন।
* অনেক বেশি জেল চুলের ক্ষতি করে।
* চুল জোরে আঁচড়াবেন না, পরিষ্কার চিরুনি ব্যবহার করবেন।
মনে রাখবেন আপনার চিন্তামুক্ত জীবন, সুন্দর জীব-যাপন ও পুষ্টিযুক্ত খাবার ও প্রতিদিন প্রচুর পানি পান আপনার চুলকে সুস্থ রাখবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: পথিকৃৎ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন
চেম্বার: কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার
বিটিআই সেন্টার গ্র্যান্ড, ২য় তলা গ্রিন রোড ফার্মগেট ঢাকা।
প্রয়োজনে: ০১৭১১৪৪০৫৫৮