বাংলারজমিন
বিদেশে অপহরণ করে দেশে মুক্তিপণ আদায়, থানায় মামলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২৪ মার্চ ২০২৫, সোমবার
সৌদি আরবে অবস্থানকালে একটি চক্রের হাতে অপহরণের শিকার হন প্রবাসী যুবক মো. মনিরুল ইসলাম। এরপর তার মুক্তিপণ হিসেবে দেশে স্ত্রী ও ভাইয়ের কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা, দুই হাত ও পা বেঁধে রাখা হয়েছে চেয়ারে- এমন ছবি পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। আগুন দিয়ে পোড়ানোর মতো নির্মম নির্যাতন ও চিৎকারের শব্দ শুনানো হয় পরিবারের লোকজনকে। পরে মনিরুলের জীবন বাঁচাতে তার পরিবার ২১ লাখ টাকা দেয় ওই অপহরণকারী চক্রের দেশীয় হোতার কাছে। গত বছরের ২৫শে ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত সৌদি আরবে অপহরণ চক্রের হাতে জিম্মি ছিলেন প্রবাসী মনিরুল ইসলাম। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ক্লাবহাট এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। বিকাশে মুক্তিপণের টাকা নেয়ার সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মানব পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশ যান মনিরুল ইসলাম।
স্থানীয় দালাল জহরুল ইসলামের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরব যান তিনি। ভালো কর্ম-পরিবেশ ও উপযুক্ত বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মনিরুলকে একটি চক্রের হাতে তুলে দেয়। তারা মনিরুলকে আটকে রাখে এবং অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এরপর ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মনিরুলের স্ত্রী মোসা. আরজিনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। মনিরুলকে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে।
গত বছরের ২৫শে ডিসেম্বর থেকে ২রা জানুয়ারির মধ্যে দেশে থাকা তার পরিবারের কাছে চক্রটির দেশে অবস্থান করা সদস্যদের মাধ্যমে মুক্তিপণ হিসেবে বিভিন্ন বিকাশ নম্বর ও নগদে ২১ লাখ টাকা আদায় করে। মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী চক্রটি তাকে সৌদি আরবের একটি রাস্তায় ছেড়ে চলে যায়। পাচারকারী, দেশে-বিদেশে থাকা অপহরণ চক্র সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামিদের দ্বারা শোষণ, নিপীড়ন এবং সার্ভিচিউডের দ্বারা অতিষ্ঠ হয়ে মনিরুল অপহরণকারীদের কাছে তার স্বাধীন জীবন প্রার্থনায় ও দাসত্ব জীবন থেকে মুক্তি চান। এ সময় মুক্তিপণ হিসেবে তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করে তারা। মনিরুল ইসলামের জীবন বাঁচাতে কয়েক দফায় মানব পাচার ও অপহরণ চক্রের দেশি সদস্যদের হাতে নগদ ও বিকাশের মুক্তিপণের টাকা দেয় তার পরিবার।
অপহরণ হওয়া মনিরুল ইসলামের স্ত্রী আরজিনা বেগম বলেন, মামলার প্রধান আসামি জহরুল ইসলাম তাদের আত্মীয়। এই জহরুল ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যায় মনিরুলকে। সেখানে মো. জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ দেয়া হয়। কিন্তু মো. জাহাঙ্গীর নামের ওই ব্যক্তি তার দলবল নিয়ে মনিরুলকে শ্রমদাস বানিয়ে রেখেছে। একপর্যায়ে তাকে এক বন্দিশালায় নিয়ে যায় তারা। নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোতে তাদের কাছে পাঠিয়ে দফায় দফায় মুক্তিপণ আদায় করে। আরজিনা আরও বলেন, তার স্বামীর কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা, দুই হাত ও পা বেঁধে রাখা ছবি পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। আগুন দিয়ে পোড়ানোর মতো নির্মম নির্যাতন ও চিৎকারের শব্দ শুনানো হয় তাদের। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, সৌদি আরবে মনিরুল ইসলাম নামের এক বাংলাদেশিকে অপহরণ করে একটি চক্র। তাকে আটকে রেখে দেশে থাকা স্ত্রী, শ্বশুর ও ভাইয়ের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কয়েক দফায় বিকাশ ও নগদে ২১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ করেন তার পরিবার। এ ঘটনায় মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।