ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ন্যূনতম বেতন ৯ম গ্রেডে করার সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার

গণমাধ্যম নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে সংস্কার কমিশন। এতে গণমাধ্যম, সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের নিয়ে নানা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেডে করার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করতে বলেছে কমিশন। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ১৮০ পৃষ্ঠার সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। 

দীর্ঘ প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের মালিকানা; গণমাধ্যমের ব্যাপ্তি ও চ্যালেঞ্জ; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আইনি কাঠামো; গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মান, অপব্যবহার ও বাজার নিয়ন্ত্রণ; গণমাধ্যমের স্বাবলম্বিতা; প্রস্তাবিত জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন; গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিকদের যোগ্যতা; সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও শ্রম আইন; অপ/ভুয়া তথ্যের ঝুঁকি; গণমাধ্যমের অপব্যবহার ও অপসাংবাদিকতা; জবাবদিহিতা ও প্রশ্নবিদ্ধ সাংবাদিকতাসহ নানা দিক নিয়ে বিশ্লেষণ ও সুপারিশ করা হয়। 
সংস্কার প্রস্তাবের রিপোর্ট পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেলতে চাই। সে জন্য আমি চাইবো সংস্কার কমিশন আশু করণীয় বা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায় এমন সুপারিশগুলো দ্রুত আলাদাভাবে আমাদের কাছে পেশ করুক। আর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকি আসে। এসব থেকে সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। প্রয়োজনে আইন করে তাদের সুরক্ষা দেবার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গণমাধ্যম সংস্কারে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকতায় সুরক্ষায় আইন করার সুপারিশ করেছি। এ ক্ষেত্রে সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি খসড়াও করে দিয়েছি। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশপদ, অর্থাৎ নবম গ্রেডের বেতন স্কেলের সঙ্গে সংগতি রেখে সাংবাদিকদের প্রবেশপদের বেতন হতে পারে। সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য এটি হতে পারে। তবে ঢাকায় যেহেতু জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, সে ক্ষেত্রে ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ভাতা’ যোগ করা হতে পারে। সারা দেশে সাংবাদিকরা যে বেতন পাবেন, ঢাকার ক্ষেত্রে এই ভাতা যোগ হবে। এই ভাতা ঠিক করবে সরকার ও সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন পক্ষ মিলে। সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তিনি বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, সম্পাদক ও প্রকাশকের যোগ্যতা কী হবে, সেই তিনটি বিষয়েও বলেছেন। তারা বলেছেন, সাংবাদিকদের ন্যূূনতম যোগ্যতা স্নাতক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা একটি শর্তও যুক্ত করেছেন। সেটি হলো, এক বছর শিক্ষানবিশ থাকার পরে পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা পাবেন। এ রকমভাবে গণমাধ্যম নিয়ে আরও বিভিন্ন সুপারিশ করেছে কমিশন। কামাল আহমেদ বলেন, আশা করি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সবাই এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে। 

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের এক দশকে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট নীতি না মেনে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতায় নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। সে কারণে অনলাইন পোর্টালগুলোর নিবন্ধনগুলো পর্যালোচনাসহ সাতটি সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়েছে, লাগামছাড়া অনলাইনের বিস্তৃতি যেমন অনেকক্ষেত্রেই হলুদ সাংবাদিকতা, অনৈতিক ব্ল্যাকমেইলিং, নাগরিক হয়রানি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্‌ন করছে, তেমনিভাবে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য অস্বাভাবিক প্রতিকূলতা তৈরি করছে। এর কারণ হিসেবে বিগত সরকারের অনলাইন নীতিমালা এক্ষেত্রে ‘কার্যকর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার’ কথা বলা হয়েছে। এজন্য নীতিমালা পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়ন ও কার্যোপযোগী করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন বলছে, বিগত সরকারের অনলাইন নীতিমালার শর্তাবলী ঠিক করার দায়িত্ব প্রস্তাবিত সমপ্রচার কমিশনের ওপর অর্পিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমপ্রচার কমিশন গঠন না করে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয় তাদের মর্জি অনুযায়ী নিবন্ধন দিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ কয়টি সুপারিশ করেছে কমিশন। সেগুলো হলো- অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধনের নীতিমালা হালনাগাদ করা এবং এর আলোকে নিবন্ধন প্রদানের দায়িত্ব ও ক্ষমতা যেহেতু বিগত সরকারের প্রস্তাবিত সমপ্রচার কমিশনের ওপর ন্যস্ত ছিল, সেহেতু তা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের ওপর অর্পণ করা সমীচীন; গত দশকে যেসব অনলাইনের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে, তা যেহেতু কোনো স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট নীতির অধীনে হয়নি বরং সরকারের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে, সেহেতু সেগুলো পর্যালোচনা প্রয়োজন। এ পর্যালোচনার দায়িত্ব স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা সমীচীন; অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার যে তদন্ত ব্যবস্থা রয়েছে, তার অবসান প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ডিক্লারেশনের জন্য বিদ্যমান পুলিশের তদন্ত ব্যবস্থাই যথেষ্ট গণ্য করা যায়; অনলাইন পোর্টালগুলো নিবন্ধন পাওয়ার পর তার বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতি বাতিল করা হোক; অনলাইন নীতিমালায় আইপিটিভি ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ বুলেটিন সমপ্রচার করা যাবে না- এমন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা উচিত; অনলাইন পোর্টালে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার আলোকে সরকারি বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করতে হবে; অনলাইন পোর্টালের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের ফি সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সের ফির কয়েক গুণ। এটি সংবাদমাধ্যমকে নিরুৎসাহিত করার নীতি। এর অবসান হওয়া উচিত; গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে যে কয়টি অনলাইনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল রয়েছে তার মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অন্যতম। ২০০৫ সালে ওয়েবভিত্তিক বার্তা সংস্থা হিসেবে এর যাত্রা শুরু। বিডিনিউজ বাংলাদেশের প্রথম অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম।

এদিকে গণমাধ্যমের মালিকানা নিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে- এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাসসকে জাতীয় সমপ্রচার সংস্থার সাথে একীভূত করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এক প্রতিষ্ঠান একটিমাত্র গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবেন এমন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় সমপ্রচার সংস্থা তৈরি করতে হবে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের মতো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানাতেও সর্বোচ্চ শেয়ার বেঁধে দেয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। ব্যাংকিং খাতে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক পারিবারিকভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণ করতে পারেন না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একই সময়ে পরিবার থেকে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজন। কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে তাই পরিবর্তন প্রয়োজন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, কমিশন প্রথম পর্যায়ে মাঝারি ও বৃহৎ মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে সর্বসাধারণের জন্য শেয়ার ছাড়া ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সমীচীন মনে করছে। উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ার ধারনের সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এক্ষেত্রে কর্মীদের  কতো শতাংশ শেয়ার থাকবে, তাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, কর্মীদের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা পাঁচ শতাংশেই সীমিত রাখতে হবে, যেন উদ্যোক্তারা কর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন। ছোট আকারের মিডিয়া কোম্পানিতে কর্মীদের শেয়ার দেয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে। কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের বাস্তব যে অবস্থা, এই অবস্থা একদিনের সৃষ্টি না, গণমাধ্যম দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের চর্চাগুলোর মধ্যেদিয়ে এসেছে। সেই চর্চাগুলোর ক্রমাবনতির ফলে গণমাধ্যম এক ধরনের সংকটের মধ্যে, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সেই বাস্তবতায়, আমরা মোটামুটি একটা ইতিহাস পর্যালোচনা করেছি এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করে সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল, কী কী ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটি দূর করার জন্য সেরা উপায় কী হতে পারে, সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছি। কমিশন গণমাধ্যম, সাংবাদিক, ও সাংবাদিকতার সমস্যা চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সুপারিশ দেয়ার চেষ্টা করেছে। 

সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপনকালে কমিশনের সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের উপসম্পাদক টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status