শেষের পাতা
কালোটাকা সাদা করার ব্যবস্থা বাতিল করা হবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা বাতিলের চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেয়া শুরু হয়েছে। আর আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো কর অব্যাহতি দেয়া হবে না।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, আগামী বাজেট কেমন হতে পারে। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, প্রকৃত অর্থে আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। কিছুদিন ধরে এনবিআর যে কাজগুলো করেছে, এর মাধ্যমে বিষয়টি আপনারা টেরও পেয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এ বছর দু’বার সয়াবিন তেলের শুল্ক কমানো হয়েছে; দু’বার চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে। এ ছাড়া খেজুর, ডাল, ডিম, চাল, পিয়াজ প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছি। তার সুফলও পাওয়া গেছে। আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এতে (শুল্কছাড়ের ফলে) আমরা কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছি। তবে আমরা সেগুলো চিন্তা করিনি। আমরা জনস্বার্থ চিন্তা করেছি।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বিগত সময়ে কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব চিন্তা-ভাবনা হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি গতানুগতিক। সেগুলোর কিছুটা দাতাদের ইচ্ছায়, কিছুটা (সরকারের) যা মনে হয় সেভাবে; কিছুটা চাপ থেকে এবং কিছুটা যেমন ইচ্ছা সেভাবে। তবে এখন সুযোগ এসেছে পরিকল্পিতভাবে কিছু করার; নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার। যারা আয়কর দেন না, তাদের টিআইএনের আওতায় এনে ধরা গেলেই কর-জিডিপি হার বাড়বে।
শওকত হোসেন আরও বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা বা নিয়মের কথা বলি; কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। আবার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া এনবিআরের পক্ষেও বড় কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব না।
মূল প্রবন্ধে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ বলেন, দেশের আর্থিক উন্নতি, পরনির্ভরশীলতা কমানো ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দেশের ভেতরে কর আহরণ বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক; কিন্তু কর আহরণ ও কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অবকাঠামো সমস্যার কারণে দেশের কর-জিডিপি হার এখনো অনেক কম।
দেশে রাজস্ব-জিডিপি’র হার বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে উল্লেখ করে আবু ইউসুফ বলেন, গত বছর এটি আরও কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে। প্রত্যক্ষ কর আহরণ কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার ভ্যাট ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক রাজস্ব আদায়ে বেশি নির্ভর করছে, যা নিম্নআয়ের মানুষদের প্রভাবিত করছে।
অতীতে ট্যাক্স আদায়ে পলিসি লেভেলে জোর দেয়া হলেও বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়নি অভিযোগ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমকে অটোমেশন করতে উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এটি বাস্তবায়ন হলে ট্যাক্স নিয়ে ভীতি কমবে। ভবিষ্যতে আর অফলাইনে রিটার্ন নেয়া হবে না। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেন, তাদের তদারকির আওতায় আনা হবে এবং যারা ট্যাক্স দেন তারা হয়রানির শিকার হবেন না।
তিনি বলেন, রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হবে ইনকাম ট্যাক্স ও ভ্যাট। আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। বড় বাজেট তৈরি করার প্রবণতা কমাতে হবে। আইন তৈরি হয়, তবে বাস্তবায়ন করা হয় না।
আবদুর রহমান খান বলেন, ইএফডি যন্ত্র দোকানে আছে, কিন্তু তা ব্যবহার করা হয় না। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন না। ভ্যাট দেন ভোক্তারা। অনেক ক্ষেত্রে দোকানদাররা ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে জমা দেন না। ফলে ভ্যাট থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। কর প্রশাসনের দুর্বলতা আছে। গত বছর ১ কোটি ১৪ লাখ টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা পড়েছে ৪৫ লাখ। এবার ১৫ লাখ অনলাইন রিটার্ন জমা পড়েছে। এদের মধ্যে ১০ লাখই শূন্য রিটার্ন জমা পড়েছে।
করের আওতা বাড়াতে গ্রাম, মফস্বল এলাকায় ভ্যাট ট্যাক্স আদায় বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
পাঠকের মতামত
প্রচুর কালো টাকা এখনো ট্রাঙ্কে, আলমীরায় বন্দী হয়ে আছে। এক ধাক্কায় কিভাবে সেগুলো সাদা করা যায় তার বাস্তবসম্মত পথ বের করার চেষ্টা করুন।