শেষের পাতা
আশুলিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন
স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবারসাভারের আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় স্ত্রীর সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনসহ লুণ্ঠিত ১৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণ বিক্রির ৭৬ হাজার টাকা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার পিটুয়াবন্দের বাড়ি গ্রামের মো. হক ভূঁইয়ার ছেলে মো. রিপন মিয়া (৪০), পাবনা জেলার সুজানগর থানার চর ভবানীপুর শেখ পাড়া গ্রামের জোনাই প্রামাণিকের ছেলে মো. আরিফ প্রামাণিক (৩০), একই জেলার আতাইকুলা থানার সরাডাঙ্গী (সরদারপাড়া) গ্রামের মৃত করিম শেখের ছেলে মো. শাহ আলম (৪৫), মো. আরমান শেখ (৩৭), রাজশাহী জেলার কর্নহার গ্রামের রাধানগর শল্লাপাড়া মোড় এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বাবু (৪৫) ও কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বৃষ্টিপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মো. মাসুদ রানা কালা মাসুদ (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে কেউ দিনের বেলায় অটোরিকশা চালায়, কেউ ফলের ব্যবসা করে এলাকায় রেকি করে রাতের বেলায় ডাকাতি করে। এদের মধ্যে ৫ ডাকাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যা ও স্বর্ণ ডাকাতি সংঘটিত করে এবং একজন ডাকাতির মালামাল তার জিম্মায় রাখে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির সময় ডাকাত ইমরান, তার দুই ভাই শাহ আলম ও আরমান, রিপন, আরিফ, আকাশ, তালিম ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ একটা ভাড়া গাড়িতে করে নয়ারহাট এলাকায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির টার্গেট করে। ইমরান ও আকাশ উক্ত ভাড়া গাড়ির ভেতরে অবস্থান করে, আরমান ও শাহ আলম ঘটনাস্থলের পাশে পাহারা দেয় এবং তালিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। রিপন ও আরিফ দুটো চাপাতি দিয়ে দিলীপকে কোপ দেয় এবং মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে ৮ জন মিলে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের মধ্যে রিপনকে সাভারের যাদুরচর এলাকা থেকে, মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ, শাহ আলম এবং আরমানকে আশুলিয়ার বারইপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ৩ জন আপন ভাই। পরে রিপন, শাহ আলম, আরমান ও মাসুদ রানা কালা মাসুদের দেয়া তথ্য মতে আরিফকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৮ ভরি স্বর্ণ এবং স্বর্ণ বিক্রয়ের ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির স্বর্ণ ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ইব্রাহিমকে রাজশাহীর কর্ণহাট এলাকা থেকে লুট করা ৫ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আরিফের দেখানো আরমানের ফলের দোকান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত। দিনের বেলায় এরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে একত্র হয়ে বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে থাকে। তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ৯ই মার্চ রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারের দিলীপ স্বর্ণালয়ের মালিক দিলীপকে তার স্ত্রী সরস্বতী দাসের সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সঙ্গে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশের একাধিক টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সাভার, আশুলিয়া, রাজশাহী ও রাজবাড়ী জেলায় অভিযান পরিচালনা করে ৬ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।