ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

রামেবিতে জাল সনদ প্রমাণের পরও চাকরিতে বহাল!

ডালিম হোসেন শান্ত, রাজশাহী থেকে
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) আওয়ামী প্রশাসনের কিছু নিয়োগ নিয়ে বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন পদে বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদের হয়েছে নিয়োগ। জাল সনদে চাকরি জানার পরও অনিয়ম দুর্নীতি চাপা দিতে এখনো সক্রিয় সাবেক উপাচার্য ও কিছু কর্মকর্তা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশও কাজে আসেনি আওয়ামী লীগের এমপি ও ক্ষমতাসীনদের দাপটে। এ সমস্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে একজন জাল সনদে এবং চাকরিতে বিধি অনুযায়ী  প্রত্যাশিত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বহাল রয়েছেন অপর এক কর্মকর্তা। এসব অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।  ইসমাইল হোসেন ২০১৮ সালে শুরুর দিকে রামেবিতে যোগ দেন পিও কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চুক্তিভিত্তিক (এডহক)। সেখানে তিনি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্নাতক যে সনদ জমা দেন সেটি জাল। তিনি মাত্র ৬ মাসের মাথায় পূর্বে পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে লিয়াজোঁ ও প্রটোকল অফিসার পদে যোগ দেন এডহকে।   ২০২৩-এ একটি সূত্র থেকে ইসমাইলের সনদ জাল বলে অভিযোগ করে রামেবি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। সে প্রেক্ষিতে ইউজিসি রামেবি’র নিকট ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিলে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সে কমিটির প্রধান ছিলেন রামেবি’র কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মোসাদ্দেক হোসেন, সে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অফিস সংরক্ষিত ইসমাইলের ব্যক্তিগত নথিতে প্রাপ্ত স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সনদটি জাল। তবে তদন্ত কমিটি এও বলে তিনি টাইমস বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেন। এদিকে টাইমস বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সনদ গোপনে নথিতে যুক্ত করা হয় অনুসন্ধানে সেটিও জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রামেবি’র সহকারী রেজিস্ট্রার মো. রাশেদুল ইসলাম। প্রথম তদন্ত চলাকালীন সময়ে অফিসের সংরক্ষিত নথিতে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির যে স্নাতক সনদ ছিল তা রাতারাতি হয়ে যায় টাইমস ইউনিভার্সিটির সনদ। শুধু সনদ বদলই নয় পুলিশের ভেরিফিকেশন  রিপোর্ট টেম্পারিং করে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্যও সংযুক্ত করা হয় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন নথি সংরক্ষকের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা এমন অভিযোগ রামেবি’র এক জনশক্তির। 
১৯১৮ সালে ইসমাইল চাকরিতে প্রবেশ করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সনদ দিয়ে যার প্রমাণ মিলেছে একাধিক স্থানে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন সেখানেও স্ট্যামফোর্ডের সনদ জমার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 
২০২৩ সালে আবারো তার সনদের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করে রামেবি, এ সময় রামেবি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আলোচিত সনদটি যাচাইয়ের জন্য পত্র প্রেরণ করে, ইউনিভার্সিটি এটিকে জাল সনদ অর্থাৎ রামেবিতে চাকরিরত ইসমাইলের যে নয় এ মর্মে রিপোর্ট প্রদান করেন। 
এদিকে আরেক সেকশন অফিসার জামাল উদ্দীন মণ্ডল ১৯১৮ সালের এপ্রিল মাসে রামেবিতে যোগ দেন এডহক ভিত্তিতে। ৩ মাসের ব্যবধানে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে স্থায়ী নিয়োগের আবেদন করেন। এ পদের যোগ্যতা চাওয়া হয় ৪ বছরের স্নাতকসহ ৫ বছরের ৯ম গ্রেডে চাকরির অভিজ্ঞতা। কিন্তু তিনি ৪ বছর মেয়াদি কোনো শিক্ষা সনদ জমা দেননি একইসঙ্গে ৯ম গ্রেডেরও কোনো চাকরির সনদ জমা দেননি। নিয়োগ কমিটি বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না হওয়ায় আবেদিত পদে নিয়োগ দিতে না পারলেও তাকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে, যা চাকরির নিয়োগ বিধি বহির্ভূত। এ সময় রামেবি’র উপাচার্য ছিলেন- প্রফেসর ডা. মোস্তাক হোসেন। এসব অনিয়মের বিষয়ে অবহিত হলেও তিনি নেননি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। অভিযোগ রয়েছে তিনি ইসমাইল ও জামালকে টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেই তাদের সব ধরনের অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে নিতেন এবং তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করতেন। সে কারণেই ৬ জন ডিন এবং একযোগে ১২ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক উপাচার্যের বক্তব্য নিতে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন কেটে বন্ধ করে দেন। এদিকে লিয়াজোঁ ও প্রটোকল অফিসার ইসমাইল হোসেনকে তার মুঠোফোনে বারবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জামাল উদ্দীন মণ্ডল বলেন, আমি একটি এমপিও কলেজে প্রভাষক পদে যুক্ত ছিলাম, সেখান থেকে আমাকে  সাবেক উপাচার্য মহোদয় এখানে চাকরি দেন। আমার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এখানে চাকরির জন্য। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। 
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে রামেবি’র বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এসব প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ন হয়। এসব বিষয়ে আগামী সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হবে। সেখানে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী বিষয় নির্ধারণ করা হবে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status