বাংলারজমিন
সাবেক এমপি’র ঘনিষ্ঠদের দখলে তমরদ্দি ঘাট, পাল্টাপাল্টি মামলা
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার
নোয়াখালী হাতিয়া তমরদ্দি লঞ্চ ঘাট বিএনপি’র বহিষ্কৃত যুগ্ম-আহ্বায়ক আলমগীর কবিরের যোগসাজশে সাবেক এমপি আয়শা আলীর ঘনিষ্ঠদের দখলে থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঘাট দখলে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা হাতিয়ার সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার সকালে ঘাট দখলের অভিযোগ এনে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব হারুন অর রশীদ আজাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তমরদ্দি ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মো. রুবেল মাহমুদসহ দলটির তিন নেতা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তমরদ্দি লঞ্চ ঘাটের ইজারাদার নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা কাজল। ৫ই আগস্টের পর উপজেলা বিএনপি বহিষ্কৃত যুগ্ম-আহ্বায়ক আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে তমরদ্দি ঘাটের সকল কর্মকাণ্ড দখল করে নেন। পরবর্তীতে ইজারাদার কাজলের সঙ্গে বিএনপি নেতা আলমগীর সমঝোতা করেন। নেপথ্যে ছিলেন উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন বাবু। সেই থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন বাবু ও আলমগীর ঘাটের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। ঘাটের প্রতিদিনের রোজগার আলাউদ্দিন বাবু, আলমগীর ও গোলাম মাওলা কাজলের প্রতিনিধিরা বসে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। স্থানীয়রা জানায়, আলাউদ্দিন বাবু এক সময় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিল। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হন। এরপর তিনি ২০১৬-২০২৪ সাল পর্যন্ত সাবেক এমপি আলীর হাত ধরে উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের ব্যানারে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেন। আওয়ামী লীগের হয়ে ভোটকেন্দ্র দখলে ছিলেন সামনের সারিতে। কিন্তু গত ৫ই আগস্টের পর তিনি আবার রাতারাতি বিএনপি বনে যান। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তমরদ্দি ঘাটে এখনো বিএনপি নেতাকর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। শুধু তাই না, তমরদ্দি, চর আতাউরে ধান চাষিদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় এবং আমার পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে দুটি মামলার আসামি করা হয়। ওই সব মামলার বাদী স্থানীয় যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের কর্মী। হাতিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবর আজমের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন বাবু, তার ছোট ভাই আফসার উদ্দিন জিয়া ও আলমগীর কবির একত্রিত হয়ে তমরদ্দি লঞ্চ ঘাট দখল করে এবং রাতে তমরদ্দি বাজারে লুটপাট চালায়। আমি বিএনপি করার কারণে আওয়ামী লীগ নেতা বাবু আমাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। ওই কলরেকর্ড ২০২৩ সালের ২১শে জুন বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করে। জানা যায়, গত ২৭শে ফেব্রুযারি হাতিয়া তমরদ্দি লঞ্চ ঘাটে মালামালের অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় দুই বোন আকলিমা বেগম (৩৩) ও নাসিমা বেগম (৩০)কে পিটিয়ে আহত করা হয়। এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে আকলিমা বেগম বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় আলমগীর কবির ও কাজলের নাম উল্লেখ করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আলমগীর কবির বলেন, আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিএনপি’র এক কেন্দ্রীয় নেতা আমাকে হাতিয়াতে তার সঙ্গে রাজনীতি করতে ডেকেছে। আমি না যাওয়ায় তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাকে দুবার শোকজ করে। এরপর পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। যারা আমার বিরুদ্ধে জেলা বিএনপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় তারা সবাই একাধিক মামলার আসামি। তারাই ৫ই আগস্টের পর ঘাট দখলের জন্য হামলা চালায়। যোগাযোগ করা হলে আলাউদ্দিন বাবু ফোন রিসিভ করেনি। হাতিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি একেএম ফজলুল হক খোকন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আলমগীরকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারাই চাঁদাবাজি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোনো চাঁদাবাজকে রাখা হবে না। নোয়াখালী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব হারুন অর রশীদ আজাদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। হাতিয়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম মানবজমিনকে বলেন, জিয়াকে অপারেশন ডেভিল হ্যান্টে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে, ঘাট নিয়ে মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষই মামলা দায়ের করেন।