বাংলারজমিন
কুমিল্লা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে আওয়ামী প্রভাবে ১০ বছর বহাল তবিয়তে গবেষণা কর্মকর্তা
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবারস্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাত মাস অতিবাহিত হলেও কুমিল্লার বেশক’টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলটির দোসর ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এরমধ্যে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের প্রথমসারির নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কুমিল্লা শিক্ষা অফিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে টানা ১০ বছর ধরে গবেষণা কর্মকর্তা পদে অধিষ্ঠিত থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী পরিবারের রওশন জাহান।
নরসিংদীতে জন্মগ্রহণকারী রওশন জাহানের পিতা মো. সিদ্দিকুর রহমানও জীবদ্দশায় সেখানকার আওয়ামী লীগের বড় নেতা ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিক্ষা অফিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে মাত্র এক বছর থাকার পর আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৫ সালে কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ে গবেষণা কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন রওশন জাহান। তার স্বামী এডভোকেট এ.এস.এম মাসুম কবির হিমেল আওয়ামীপন্থি আইনজীবী। কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসার পর নিজেকে আওয়ামী পরিবারের লোক হিসেবে জাহির করে সখ্যতা ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আতিক উল্লাহ খোকন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, যুবলীগ নেতা জিএস সহিদ, সাবেক কাউন্সিলর সাদীসহ আরও নেতাদের সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালে ৬ বার ভারত ভ্রমণ, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২ বার নেপাল ভ্রমণ এবং ২০১৯ সালে ১ বার চীন ভ্রমণ করেন।
গবেষণা কর্মকর্তা রওশন জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রজেক্টের কাজের চেয়ে আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। স্কুলগুলোতে ভিজিটে গিয়ে আওয়ামী বিরোধী শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। কথায় কথায় নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নাম মুখে নিয়ে উচ্চবাচ্য করতেন। একজন গবেষণা কর্মকর্তা হয়ে অফিসের কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না এই রওশন জাহান। আর এসবের মূলেই ছিল আওয়ামী প্রভাব।
কুমিল্লায় চাকরিকালীন সময়ের ১০ বছরে রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও তার সঙ্গে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক, ঠিকাদার ও কিছু সাংবাদিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী প্রভাবে টানা ১০ বছর এই কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে থাকার সুবাদে রওশন জাহান এখনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসর রওশন জাহানের অপসারণ এবং তার বিদেশ ভ্রমণের নেপথ্যের কারণসহ আত্মগোপনে থাকা দলটির কুমিল্লার নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে গবেষণা কর্মকর্তা রওশন জাহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এখানকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমার ব্যক্তিগত অনেক বিষয় আছে, যা আমার ঘনিষ্ঠজন ছাড়া জানার কথা নয়, এমন কেউ হয়তো এসব অভিযোগ তুলেছে। আমি আওয়ামী পরিবারের ঠিক আছে, তবে আমি টানা ১০ বছর এই কার্যালয়ে চাকরি করছি আওয়ামী লীগের প্রভাব ছাড়াই। সরকারি চাকরি করলে সরকারি দলের অনেক কিছুই মানতে হয়, করতে হয়। আওয়ামী লীগের কোনো লোকজনের সঙ্গে বর্তমানে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। কোনো শিক্ষকের সঙ্গে আমি খারাপ আচরণ কখনো করিনি। এখন যদি আমাকে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এমনকি সন্দ্বীপও বদলি করে আমি যেতে রাজি আছি, আমার কোনো আপত্তি নাই।’ এ বিষয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফিকর রহমান বলেন, ‘আমি এই কার্যালয়ে দুই মাস হয়েছে যোগদান করেছি। রওশন জাহানের বিষয়ে এমন কিছু এখনো জানি না। অনেকেই তো নিজের সুবিধার জন্য একই জায়গায় দীর্ঘসময় চাকরি করে থাকে। তিনি হয়তো এই কারণে রয়েছেন।’