ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রেল-সড়ক পথে স্বস্তির ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

নাজমুল হুদা
১৮ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার

ঈদে রেল ও সড়ক পথে চাপ বাড়ে ঘরমুখো মানুষের। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই নগরীর মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। বিভিন্ন রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় থাকে যাত্রীদের। প্রতিবছরই এই সুযোগের অসৎ ব্যবহার করে বাসে ভাড়া নৈরাজ্য করে পরিবহনগুলো। ঈদের আগে তাই দেড়-দুই গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। এ ছাড়া যাত্রী চাহিদার চেয়ে সীমিত আসনের কারণে রেল যাত্রায়ও দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই এই বছরও ঈদে রেল-সড়ক পথে স্বস্তির ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১৪ই মার্চ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবারো শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চল ও দুপুর ২টায় বিক্রি করা হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের টিকিট। তবে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সব। প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে সারা দেশের প্রায় দেড় লাখ টিকিটের বিপরীতে অনলাইনে টিকিট কিনতে যাত্রীদের ৩ থেকে ৪ কোটি হিট পড়ছে। অর্থাৎ প্রতিটি টিকিটের জন্য ২০০ থেকে ২৫০ জন ব্যবহারকারী অনলাইনে টিকিটের খোঁজ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলে চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য টিকিট কাটতে পারছেন যাত্রীরা। এতে করে ঈদযাত্রায় প্রতিবছরই টিকিটের বাইরের যাত্রীদেরও উপচে পড়া ভিড় থাকে ট্রেনের বগিগুলোতে। এ ছাড়া কড়াকড়ি থাকলেও ট্রেনের ছাদেও অসংখ্য ঘরমুখো মানুষ তাদের গন্তব্যে যান। এতে ঈদযাত্রায় ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি এড়ানো যায় না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, গত এক দশকে রেলে লক্ষাধিক কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। কিন্তু রেলের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়েনি। বরং কোনো কোনো ট্রেনে কোচ কমেছে, বগি কমেছে। কোথাও স্টেশন বন্ধ হয়েছে। ফলে যাত্রী চাহিদা থাকলেও আসন সংখ্যা বাড়েনি। মানুষের চাহিদা রেল পূরণ করতে পারছে না বলেই একটা টিকিটের জন্য ২০০ জন মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক মানবজমিনকে বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের দিকেই রেলের নজর। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের তত নজর নেই। পুরো পৃথিবীতে এখন গতির ঝড় তোলে কিন্তু তারা (বাংলাদেশ রেলওয়ে) অল্পগতিতে ট্রেন চালায়। ট্রেন দ্রুত চলতে না পারলে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। ট্রিপ দিতে পারে না। এদিকে, রেল কখনো নজর দেয় নাই। কারণ ভর্তুকির কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। 

এদিকে, ঈদের আগে সড়ক পথেও ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ তৈরি হয়। রেলের টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা বাসেই গন্তব্যে যান। এসবের সুযোগ নিয়ে ঈদে বাড়তি ভাড়া আদায় করে পরিবহনগুলো। ঈদের আগের কয়েকদিন দেড় থেকে দুইগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে যাত্রীদের বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও দেখা যায় ঈদের মৌসুমে। বিশেষ করে সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মহাখালী ও গাবতলীর বাস টার্মিনালগুলোতে কম জনপ্রিয় পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে তারা ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়িয়ে নতুন টিকিটও ইস্যু করে। ঈদের আগে ঘরমুখো যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঈদে বাস আসার সময় খালি আসে এমন অজুহাতে প্রতি বছরই বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়। যাত্রীদের বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। একই কথা বলেন পরিবহনগুলোর শ্রমিকরা। তারা দাবি করেন, ঈদের আগে যাত্রীরা শহর ছাড়লেও কেউ শহরে আসেন না। এজন্য ফেরার সময় যাত্রী ছাড়া তারা ঢাকায় ফেরেন। এতে ঢাকা ফেরত আসার সময় লস দিয়ে তাদের চলতে হয়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জানান, এবারের ঈদে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবেন। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হতে পারে, যার ৭৫ শতাংশ সড়ক পথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে। পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। সংগঠনের পর্যবেক্ষণ মতে, ৮৩ শতাংশ কোচ ও ৬০ শতাংশ লোকোমোটিভ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত এমন পরিস্থিতিতে রেল দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতি, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করে হয়রানিমুক্ত রেলসেবা প্রদানের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঘাট ও নৌ-বন্দর কেন্দ্রিক যাত্রী হয়রানি, খেয়া পারাপারে বন্দরের যাত্রী পারাপারে বেসরকারি ইজারাদারদের লুটপাটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার দাবিও উঠে আসে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, প্রতিবারই তো বাসে ভাড়া নৈরাজ্য হয়, এবার এটা আরও বাড়বে। তবে মালিক সমিতির আশা জাগানিয়া কথা বলেছেন। এটা প্রতিবারই বলেন। তারা কথা দিয়েছেন এবার অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে কঠোর হবেন।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, নিয়মিত রুটে চলে না এমন অনেক কম জনপ্রিয় বাস ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পরিবহন করে। এই বাসগুলো মানুষের উপর জুলুম করে। এগুলো অনিরাপদ গাড়ি। ফিটনেস, রুট পারমিট থাকে না। তারা সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য করে ভাড়ার ক্ষেত্রে। বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও এরা বেশি নৈরাজ্য তৈরি করে। এই সরকারের এখন থেকেই ভালো করে নজরদারি করা উচিত। তাহলে ঈদের বাজারে যেমন মানুষের অনেক স্বস্তি দেখি তেমন ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে তাহলে সবাই প্রশংসা করবে। এটা এই সরকারের করাটা সহজ হবে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status