ধর্ষণ শব্দের ব্যবহার নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের নিন্দা টিআইবি’র

গণমাধ্যমে ধর্ষণ শব্দের ব্যবহার না করতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেই সঙ্গে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগেরও নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি। সারা দেশে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মানববন্ধন করেছে টিআইবি।

মানববন্ধনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সারা দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ এবং নারীদের অধিকার হরণের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ। আছিয়ার মৃত্যু দিবস একটা জাতীয় কলঙ্কের দিবস। ধর্ষণ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে আমাদের এই দিনটাকে সবসময় মনে রাখা উচিত। আমরা এই দিনটাকে ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করতে চাই। স্বাধীনতা যদি থাকতো তাহলে এইভাবে ধর্ষণ, নির্যাতন বা অধিকার হরণ হতো না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। যেখানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেখানে পদে পদে নারীর প্রতি বৈষম্য কীভাবে সহ্য করা যায়?

তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের আচরণে, কথাবার্তায় ও চর্চায় আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। নারীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন ধর্ষণ শব্দটা গণমাধ্যমে ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেন তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ এর মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনার ধর্ষকের পক্ষ নিয়েছেন। তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত। যারা মনে করছেন বিজয়ী হবেন, নির্বাচিত হবেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তাদের কাছে আমাদের আহ্বান, আপনারা অত্যন্ত জোরালোভাবে পরিষ্কারভাবে সমতা, নারী অধিকার ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে পরিষ্কার ঘোষণা দেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি সুপারিশ পুলিশের অব্যাহত স্বৈরতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন। ধর্ষণের সংবাদ কম করে প্রচারের পরামর্শ দিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী কার্যত ধর্ষকের সুরক্ষার পথ প্রশস্ত করতে চাইছেন। দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এর মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই কন্যাশিশুসহ সব বয়সী নারী ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশব্যাপী আতঙ্কে আছে। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক প্রবণতা ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে নারী ও কন্যাশিশুর বহুমাত্রিক অধিকার হরণ।

এসময় এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশ (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদাহসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

এর আগে শনিবার গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। এর বদলে তিনি ‘নারী নির্যাতন বা নারী নিপীড়ন’ শব্দ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন।